স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বেঁধে দেয়া সময় পেরিয়ে গেলেও চট্টগ্রাম ওয়াসা পরিচালনা বোর্ডে প্রকৃত গ্রাহক প্রতিনিধি মনোনয়ন দেয়া হয়নি। এ নিয়ে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে ছলচাতুরির অভিযোগ তুলেছে ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। পাশাপাশি গত ১০ বছরে বৈদেশিক ঋণে বাস্তবায়িত এবং চলমান সকল প্রকল্পের অনিয়ম, দুর্নীতি তদন্তে প্রধানমন্ত্রী এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হস্তক্ষেপ চায় ক্যাব।
ক্যাবের অভিযোগ, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য করে গ্রাহক প্রতিনিধির তালিকায় ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান ক্যাবের প্রতিনিধিকে বাদ দিয়ে চিহ্নিত ভুমিদস্যু এবং কতিপয় বিতর্কিত ব্যক্তির নাম পাঠানোর পাঁয়তারা করছেন। ভোক্তা প্রতিনিধি থেকে ক্যাবের প্রতিনিধির নাম বাদ গেলে আদালতে আইনি প্রতিকারের আশ্রয় নেয়া হবে।
গ্রাহক প্রতিনিধি মনোনয়ন নিয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার গড়িমসির বিষয়ে ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতিতে দিয়েছেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারন সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান প্রমুখ।
বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের উন্নয়নে সবসময় আন্তরিক এবং তাঁর কারণে চট্টগ্রাম ওয়াসার জন্য ইতিমধ্যেই বিপুল বরাদ্দ দিয়েছেন। চট্টগ্রাম ওয়াসার বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের আমলে উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির ঘটনা ঘটায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাঁর আজ্ঞাবহ যে কাউকে গ্রাহক প্রতিনিধি মনোনয়ন দিতে তৎপর। সে কারণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ ও ৫২তম বোর্ড সভার নির্দেশও উপেক্ষা করে কালক্ষেপণসহ নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নিচ্ছেন। ৫২তম বোর্ড সভায় মেয়াদোত্তীর্ণ ও সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত বোর্ড সদস্য মো. সোলেমান আলম শেঠকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ওয়াসা আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন বর্তমান সরকারের আমলে বিপুল পরিমাণ অর্থ চট্টগ্রাম ওয়াসাকে প্রদান করা হলেও কাজের মান, স্বচ্ছতা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠছে। প্রকল্পের নামে পুকুর চুরি যেমন ঘটেছে, স্বজনপ্রীতিও লুটপাটও ঘটেছে। সে কারণে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের আমলে বাস্তবায়িত সকল উন্নয়ন প্রকল্পের সুষ্ঠু তদন্ত সম্পাদনের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি আহবান জানানো হয়। নতুবা নাগরিক তদন্ত কমিশন গঠন করে যাবতীয় প্রকল্পের গণতদন্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম ওয়াসায় দীর্ঘদিন প্রকৃত ভোক্তা প্রতিনিধি না থাকায় ভোক্তাদের সমস্যাগুলি ওয়াসা কর্তৃপক্ষের কাছে উত্থাপনের সুযোগ ছিল না। অন্যদিকে ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ধারা নম্বর ৫ এর ১৬ উপ-ধারায় বলা আছে, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) দেশের সর্বত্র ভোক্তাদের প্রতিনিধিত্ব করবেন। আর তারই ধারাহিকতায় ক্যাব সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ভোক্তা র্স্বাথ সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারণী ও কমিটিগুলিতে প্রতিনিধিত্ব করে আসলেও চট্টগ্রাম ওয়াসায় তা মানা হয়নি। তাই চট্টগ্রাম ওয়াসায় ভোক্তাদের সত্যিকারের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করে।
এফএম/এসএস