ওয়ার্নার-ফিঞ্চদের অস্ট্রেলিয়া পাত্তা দেয়নি আফগানদের চোখ রাঙানি

শঙ্কা ছিল তাকে নিয়ে। চোট কাটিয়ে তিনি মাঠে নামতে পারবেন কীনা এনিয়ে ছিল প্রশ্ন। কিন্তু ডেভিড ওয়ার্নার খেললেন। এবং তুলে নিলেন দুর্দান্ত এক হাফসেঞ্চুরি। হাফসেঞ্চুরি এসেছে অ্যারন ফিঞ্চের (৬৬) ব্যাটেও। তারই পথ ধরে আফগানিস্তানের চোখ রাঙানিকে পাত্তা দেয়নি অস্ট্রেলিয়া। কোন অঘটন নয়, দেখে-শুনে খেলে বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে জয় তুলে নিয়েছে ফিঞ্চের দল।

ব্রিস্টলে শনিবার আফগানদের বিপক্ষে ৭ উইকেটের জয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা নিজেদের চেনাল প্রথম ম্যাচেই! ৯১ বল হাতে রেখেই দল পেল জয়।

ব্রিস্টলে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করতে নামে আফগানিস্তান। শুরুতেই জোড়া ধাক্কা খায় আফগানরা। ইনিংসের প্রথম ওভারেই মিচেল স্টার্কের বল মোহাম্মদ শাহজাদের ব্যাট পরাস্ত করে আঘাত হানে অফ স্টাম্পে। পরের ওভারে প্যাট কামিন্সের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটরক্ষককে ক্যাচ দেন হজরতউল্লাহ যাযাই। কোনো ওপেনারই রানের খাতা খুলতে পারেননি।
ওয়ার্নার-ফিঞ্চদের অস্ট্রেলিয়া পাত্তা দেয়নি আফগানদের চোখ রাঙানি 1
তৃতীয় উইকেটের জুটিতে ৫১ রান তুলেন রহমত শাহ আর হাসমতউল্লাহ শাহিদি। তাদের জুটি ভাঙেন লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। ১৮ রান করে স্টাম্পিং হন হাসমতউল্লাহ। এরপর রহমত শাহকেও নিজের শিকারে পরিণত করেন অ্যাডাম জাম্পা। ৪৩ রান করে বিদায় নেন তিনি। পরের ওভারেই রান আউট হন মোহাম্মদ নবী। ৭৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় চলে যায় আফগানিস্তান।

দলের হাল ধরেন অধিনায়ক গুলবাদিন নাইব আর নাজিবুল্লাহ জাদরান। দ্রুত রান তুলতে থাকেন নাজিবুল্লাহ জাদরান। অর্ধশতক তুলে নেন তিনি। তাদের দুইজনের উইকেট এক ওভারে শিকার করেন মার্কাস স্টয়নিস। দলীয় ১৬০ রানের মাথায় স্টয়নিসের বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন নাইব। ৩৩ বলে ৩১ রান করেন তিনি। পঞ্চম বলে বিদায় নেন নাজিবুল্লাহ। ৭ চার আর ২ ছক্কায় সাজানো ৪৯ বলে ৫১ রানের ইনিংস খেলেন নাজিবুল্লাহ। ২০৭ রান করে অলআউট হয় আফগানিস্তান।

পরের ওভারে দৌলত জাদরানকে তুলে নেনে প্যাট কামিন্স। এরপর ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেন রশিদ খান। মার্কাস স্টয়নিসের এক ওভারেই রান হয় ২১। মারেন দুই চার আর দুই ছক্কা। অ্যাডাম জাম্পার বলে ছক্কা হাঁকানোর পরের বলে এলবিডব্লিউ হন রশিদ খান। ১১ বলে ২৭ রান করেন তিনি। তাকে সঙ্গ দেওয়া মুজিব উর অরহমান পরের ওভারে বিদায় নেন প্যাট কামিন্সের বলে। করেন ৯ বলে ১৩ রান।

ওয়ার্নার-ফিঞ্চদের অস্ট্রেলিয়া পাত্তা দেয়নি আফগানদের চোখ রাঙানি 2
৮৯ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়ছেন ম্যাচ সেরা ওয়ার্নার

২০৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই আফগান বোলারদের ওপর চড়াও হন ওপেনার অ্যারন ফিঞ্চ। স্পিনার মুজিব উর রহমানের করা ইনিংসের প্রথম ওভারেই দুই চার মারেন অ্যারন ফিঞ্চ, দলের রান হয় ১০। মুজিবের পরের ওভারেই ছক্কার খাতা খুলেন ফিঞ্চ। ঐ ওভার থেকে রান আসে ১৪। অন্য প্রান্তে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করছিলেন পেসার হামিদ হাসান। ষষ্ঠ ওভারে সুযোগও তৈরি করেছিলেন হামিদ হাসান। তবে ডেভিড ওয়ার্নারের ব্যাট স্পর্শ করা বল চলে যায় ফিল্ডারকে ফাঁকি দিয়ে।

অন্য প্রান্তে অ্যারন ফিঞ্চের ঝড় চলছিল। চার আর ছক্কার ফোয়ারা ছোটাচ্ছিলেন তিনি। রশিদ খানের বলে চার মেরে তুলে নেন অর্ধশতক। পরের বলেই মিড উইকেটের ওপর দিয়ে মারেন ছক্কা।

অ্যারন ফিঞ্চের ঝড় থামান গুলবাদিন নাইব। স্লোয়ার বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন মুজিব উর রহমানের হাতে। ছয়টি চার আর চারটি ছয় হাঁকানো ফিঞ্চ ফিরেন ৪৯ বলে ৬৬ রান করে। ৯৬ রানের মাথায় প্রথম উইকেটের পতন ঘটে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
আফগানিস্তান: ২০৭/১০, ৩৮.২ ওভার
নাজিবুল্লাহ ৫১, রহমত ৪৩, নাইব ৩১, রশিদ ২৭
কামিন্স ৩/৪০, জাম্পা ৩/৬০, স্টয়নিস ২/৩৭, স্টার্ক ১/৩১
অস্ট্রেলিয়া: ২০৯/৩, ৩৪.৫ ওভার
ওয়ার্নার ৮৯*, ফিঞ্চ ৬৬, স্মিথ ১৮, খাজা ১৫
মুজিব ১/৪৫, নাইব ১/৩২, রশিদ ১/৫২
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা: ডেভিড ওয়ার্নার

এরপর ডেভিড ওয়ার্নারকে সঙ্গ দেন উসমান খাজা। অস্ট্রেলিয়ার রানের ধারা চলতে থাকে। ওয়ার্নার-খাজার জুটি ভাঙেন রশিদ খান। এ লেগির বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন খাজা। ১৫ রান করেন তিনি।

চতুর্থ উইকেটে ওয়ার্নারের সাথে জুটি বাঁধেন স্টিভ স্মিথ। ৪৩৩ দিন পর একসঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামেন দুজন। অবশ্য দলের জয়ের ক্ষণ পর্যন্ত টিকতে পারেনি এ জুটি। দলকে জয় থেকে তিন রান দূরে রেখে ফিরে যান স্মিথ। নেমেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলকে জেতান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!