ওসি প্রদীপ নামতেই লোকজনের হইচই, পক্ষে লড়তে গেলেন ঢাকা-চট্টগ্রামের উকিলরা

মেজর সিনহা হত্যামামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু

১৪ আসামিকেই প্রিজন ভ্যান থেকে একে একে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় কক্সবাজার জেলা আদালতের এজলাসে। সবশেষে নামানো হয় টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে। তাকে দেখেই আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত লোকজন হইচই শুরু করেন। অনেকে তার দিকে তেড়ে যেতে উদ্যত হন। তবে পুলিশের হস্তক্ষেপে দ্রুত আদালতের এজলাসে ঢুকিয়ে নেওয়া হয় ওসি প্রদীপকে।

পুলিশের গুলিতে নিহত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যামামলার আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরুর প্রথম দিনের দৃশ্য ছিল এরকম। সোমবার (২৩ আগস্ট) সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এই বিচারকাজ শুরু হল।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম জানান, প্রথমে মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী নিহত মেজর সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে বাদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। ওসি প্রদীপ কুমার দাশের পক্ষে লড়তে কক্সবাজার গেছেন বিশিষ্ট আইনজীবী রানা দাশগুপ্তের নেতৃত্বে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আসা আইনজীবীরা। এই মামলার ১৫ আসামির ১২ জনই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও বরখাস্ত ওসি প্রদীপ, কনস্টেবল সাগর দেব ও রুবেল শর্মা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি।

ওসি প্রদীপ কুমার দাশের পক্ষে লড়তে কক্সবাজার গেছেন বিশিষ্ট আইনজীবী রানা দাশগুপ্তের নেতৃত্বে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আসা আইনজীবীরা।
ওসি প্রদীপ কুমার দাশের পক্ষে লড়তে কক্সবাজার গেছেন বিশিষ্ট আইনজীবী রানা দাশগুপ্তের নেতৃত্বে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আসা আইনজীবীরা।

এদিন ওসি প্রদীপ ছাড়াও অন্য যেসব আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন, তারা হলেন— পুলিশের তৎকালীন সদস্য পরিদর্শক লিয়াকত আলী, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া ও কনস্টেবল সাগর দেবনাথ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজিব ও মো. আবদুল্লাহ এবং টেকনাফের বাহারছড়ার মারিষবুনিয়া গ্রামের তিন ব্যক্তি নুরুল আমিন, মো. নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

চলতি বছরের ২৬ জুলাই থেকে পরবর্তী তিন দিন সাক্ষ্যগ্রহণের সময় নির্ধারিত থাকলেও করোনা সংক্রমণে রোধে কঠোর বিধিনিষেধ চলায় তা সম্ভব হয়নি। পরে ২৩, ২৪ ও ২৫ আগস্ট সাক্ষ্য গ্রহণের নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। এর মধ্যে টেকনাফে দুটি ও রামুতে একটি মামলা হয়। পুলিশের মামলায় সিনহার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে আটক করে পুলিশ। এরপর হিমছড়ির নীলিমা রিসোর্ট থেকে মেজর সিনহার ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকেও আটক করে পুলিশ। পরে নুরকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। পরে তারা জামিনে মুক্তি পান।

এরপর ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র‍্যাব। ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র‍্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম।

তিন বছর আগে সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাওয়া রাশেদ ‘লেটস গো’ নামে একটি ভ্রমণবিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য প্রায় একমাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকায় ছিলেন। এ সময়ই তাকে হত্যা করা হয়।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!