ওরসের নামে এবার ‘ভোটের মেজবান’ পাঠানটুলীর বাহাদুরের (ভিডিওসহ)

নির্বাচন কমিশনকে বারবার বুড়ো আঙ্গুল

ওরসের নাম করে এবার ‘নির্বাচনী মেজবান’ দিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ২৮ নম্বর দক্ষিণ পাঠানটুলী ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর। এর আগে নির্বাচনী আচরণবিধি ভেঙ্গে মসজিদে মুসল্লিদের কাছে ভোট চেয়ে সমালোচিত হয়েছিলেন এই কাউন্সিলর প্রার্থী।

রোববার (১ মার্চ) রাতে পাঠানটুলী এলাকার দক্ষিণ ঢেবার পাড় এলাকায় একটি খালি জায়গায় এই ‘নির্বাচনী মেজবানের’ আয়োজন করেন নজরুল ইসলাম বাহাদুর। মেজবার উপলক্ষ্যে ৪ টি গরু জবাই করা হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

রোববার রাতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আগ্রাবাদে বাংলাদেশ বেতার ভবনের উত্তর পাশ দিয়ে বিদ্যুৎ ভবনের বিপরীত দিকে চলে যাওয়া গলির ভেতরে রিক্সা গ্যারেজের পাশে একটি খালি জায়গায় সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা প্যান্ডেল করে প্রবেশপথেই টাঙ্গানো হয়েছে একটি ব্যানার— যাতে লেখা ছিল খাজা মঈনুদ্দীন চিশতীর (র.) ওরস। সেখানে গিয়ে ছবি তুলতেই একদল লোক এসে মোবাইল কেড়ে নেয় প্রতিবেদকের কাছ থেকে। এ সময় তারা মোবাইলে কল করে ওপ্রান্তের কেউ একজনকে বলছিলেন— ‘মোবাইল টিমকে পাঠান। এখানে ঝামেলা হচ্ছে।’ কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে আসেন জনাচারেক লোক। তারা ছবি তোলার বিষয়ে জেরা করতে শুরু করেন। ওরসের ছবি তোলায় আপত্তি কিসে— জানতে চাইলে তারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে প্রতিবেদককে। পরে ‘সাংবাদিক’ পরিচয় দিলে কিছুটা নমনীয় হয় তাদের সুর। মোবাইল চেক করে সব ছবি ডিলিট করে দিয়ে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের প্রতিবেদককে সেখান থেকে বের করে দেয় তারা।

ওরসই যদি হয়ে থাকে, তাহলে কেন এত কড়াকড়ি— এ নিয়ে কথা হয় স্থানীয় কয়েকজনের সাথে। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তারা বলেন, ওরস বলা হলেও এটি মূলত একটি মেজবান। নির্বাচনকে সামনে রেখে এই মেজবানের আয়োজন করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর। তবে নির্বাচনী আচরণবিধির ঝামেলা এড়াতে পুরো আয়োজনটিই তিনি করেছেন নিখুঁত কৌশলে। নিজের সমর্থকদের দিয়ে এলাকায় প্রচার করিয়েছেন স্থানীয়রা চাঁদা তুলে এই ওরস করছে। আর তিনি শুধুমাত্র মসলার খরচ বাবদ ৩০ হাজার টাকা অনুদান দিচ্ছেন।

এরপরও যাতে কোন বিতর্ক না উঠে সেজন্য নিজের সমর্থকদের চারপাশে রেখে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করেছেন তিনি। এমনকি সেখানে ছবি তোলার ক্ষেত্রেও কড়া সতর্কতা ছিল তাদের। সাধারণত ওরসে এরকম ছবি তোলার বিষয়ে কোন বিধিনিষেধ থাকে না।

ছবি তুলতে ব্যর্থ হয়ে স্থানীয় এক ব্যক্তির সহায়তায় ভিন্ন কৌশলে ছবি ও ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা করা হয় চট্টগ্রাম প্রতিদিনের পক্ষ থেকে। ছবি তুলে এবং মেজবান ঘুরে এসে খানিকটা অবাক হন তিনিও। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘ওরসে দেখলাম সবাই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। তাও আবার বাহাদুর গ্রুপ। ফাতেহা কিংবা ওরসে যেরকম সব ধরনের লোককে খাওয়ানো হয়, এখানে দেখলাম তা হচ্ছে না। চেহারা দেখে দেখে ঢোকানো হচ্ছে।’

ওরসের নামে এবার ‘ভোটের মেজবান’ পাঠানটুলীর বাহাদুরের (ভিডিওসহ) 1

এই বিষয়ে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম বাহাদুর চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার এখানে কিসের মেজবান। আমার বাসায় হয়েছে? এলাকাতে গরীবে নেওয়াজের একটা ফাতেহা হয়েছে। ৪০ বছর ধরে আমরা এলাকায় এই ফাতেহা করছি। এটা আমাদের ফ্যামিলি ট্রেডিশন। খাজা গরীবে নেওয়াজের ফাতেহা করা যাবে না? আমার বাসাতে কিছু হচ্ছে না। অন্য জায়গায় হচ্ছে, মানুষকে খাওয়াচ্ছে। আমরা এটা করতে পারবো না? আমরা মুসলিমতো, আমরা সুন্নী জামায়াততো’।

সিটি কর্পোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা লঙ্ঘন করলে প্রার্থী বা তার সমর্থকের সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রয়েছে। সেই সঙ্গে প্রার্থিতা বাতিলসহ নিবন্ধিত দলকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার করারও বিধান রয়েছে।

এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী আচরণবিধি ভেঙ্গে মসজিদে মুসল্লিদের কাছে ভোট চেয়ে সমালোচিত হয়েছিলেন কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর। ওইদিন মোগলটুলী আবদুর রহমান মাতব্বর মসজিদে দাঁড়িয়ে নজরুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমি নমিনেশন পেয়েছি। সবাই আমাকে দোয়া করবেন। ভোট একটা আমানত। আপনারা সৎ ব্যক্তিকে ভোট দেবেন। কারণ এই ভোট পাঁচ বছর পর হয়, ২০২০ সাল থেকে ২০২৫ সাল। আপনারা যদি সৎ ব্যক্তিকে ভোট না দেন, এই পাঁচ বছর আপনারা কষ্ট পাবেন।’

সিটি কর্পোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা অনুযায়ী মসজিদ, মন্দির, গির্জা বা অন্য কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো নিষিদ্ধ। এছাড়া আইন অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের আগে কোন প্রার্থীর প্রচারণা চালানোর সুযোগ নেই। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ হবে ৯ মার্চ।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!