ওয়াসা-সিডিএর খোঁড়াখুড়িতে ধুলোর শহর চট্টগ্রাম, কোটি টাকার ‘সুইপিং’ গাড়ি ব্যবহারের আগেই নষ্ট

শীতের মৌসুম শুরু হতেই ধুলোর নগরীতে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম। বিভিন্ন এলাকায় ধুলোবালির কারণে চলাচল করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ধুলোবালি পরিষ্কারের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ছয়টি ‘সুইপিং গাড়ি’ কিনলেও তা কাজে আসছে না। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের বিশেষ গাড়ি ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের তেমন কোনো তৎপরতাও চোখে পড়ছে না। মূলত চট্টগ্রাম নগরজুড়ে বিভিন্ন উন্নয়নকাজে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বেড়েছে ধুলোর যন্ত্রণা। এর ফলে অ্যালার্জি, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ছে।

সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, এই সুইপিং গাড়ি চট্টগ্রাম ও ঢাকার মত অধিক ধুলোময় শহরের জন্য নয়। এই দুই শহরে এত ধুলো, যা এই মেশিন ধারন করতে পারে না। যতটুকু ধুলো রিজার্ভ করে, ততটুকু ধুলো সে আউট করে ফেলে। যেটা হিতে বিপরীত হয়ে যায়।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ছয়টি সুইপিং গাড়ি আছে। এর মধ্যে দুটি নষ্ট, একটি প্রায় পরিত্যক্ত। গাড়িগুলোর পানি ধারণ ক্ষমতা হচ্ছে ১৪ হাজার, ১২ হাজার ও ৪ হাজার লিটার করে। ২০১০-২০১১ অর্থবছরে ৫০ লাখ ৩০ হাজার টাকায় একটি গাড়ি কেনা হয়েছিল। এরপর ২০১৩ সালের ৮ জুন সিটি কর্পোরেশনকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় বাকি দুটি সুইপিং গাড়ি দেয়। এসব গাড়ির প্রতিটির মূল্যও ছিল ৮৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা। প্রথমদিকে কিছুদিন এসব গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছিল। পরে আর তেমন ব্যবহার হয়নি।

এরপর ২০২০ সালে ২৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০টি সুইপিং গাড়ি কেনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে তিনটি পায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।

গাড়িগুলো কেনার আগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সিটি কর্পোরেশনকে জানিয়েছিল, ইতালি থেকে আনা গাড়ির একটির মাধ্যমে প্রতিবারে অন্তত ১২ কিলোমিটার সড়ক পরিষ্কার করা যাবে। গাড়িতে থাকা পাইপের মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে ধুলোবালি-বর্জ্য তুলে নেওয়া যাবে। একইসঙ্গে গাড়িতে থাকা ট্যাংকের মাধ্যমে পানি ছিটিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করা যাবে।

এদিকে ১৬টি পানিবাহী বিশেষ গাড়ি ও ৭০০ পরিচ্ছন্নকর্মী রয়েছে সিটি কর্পোরেশনের। নগরীর ধুলোবালি কমাতে তাদেরও পানি ছিটাতে দেখা যাচ্ছে না।

গাড়িগুলো চালানোর জন্য সিটি কর্পোরেশনের তিনজন চালককে হাতেকলমে প্রশিক্ষণও দিয়েছিল মন্ত্রণালয়।

সরেজমিন দেখা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও, বহদ্দারহাট, চকবাজার, জামালখান, নন্দনকানন, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, হালিশহর, বাকলিয়া, পোর্ট কানেকটিং রোড, বন্দর, পতেঙ্গা ইপিজেড এলাকায় ধুলোবালির কারণে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে জনজীবন।

চট্টগ্রাম ওয়াসার পাইপলাইন সংস্কারের কারণে খোঁড়াখুঁড়ি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের চলমান সড়ক উন্নয়নকাজের কারণেই নগরীর বাতাসে ধুলোবালির পরিমাণ বেড়ে গেছে। এসব সড়কে চলাফেরা রীতিমত দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ধুলোবালির কারণে চর্ম, হাঁপানিসহ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নগরীর অধিকাংশ মানুষ।

বিশেষ করে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ থেকে পতেঙ্গা এবং এয়ারপোর্ট যাওয়ার পথে যাত্রীদের অসহনীয় ধুলোর কবলে পড়তে হচ্ছে প্রতিদিন। নগরীর বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে কাস্টমস পার হয়ে সল্টগোলা, ইপিজেড মোড় এলাকায় ধুলোর জন্য দিনের বেলায় ভালোভাবে কিছু দেখা যায় না। মোটরসাইকেল আরোহীদের বেশি সইতে হচ্ছে ধুলোর বিড়ম্বনা।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসেম বলেন, ‘গাড়িগুলো বাংলাদেশে ব্যবহার উপযোগী নয়। গাড়িগুলো মসৃণ পিচঢালা সড়কের হালকা ধুলোবালি পরিষ্কারে উপযোগী। কিন্তু চট্টগ্রামের সড়ক ও ফুটপাতে যেভাবে ধুলোবালির ভারী আবরণ পড়ে থাকে, গাড়িগুলো দিয়ে এসব পরিষ্কার কঠিন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সুইপিং গাড়িতে লাগে ৩৫ থেকে ৪০ লিটার ডিজেল। জ্বালানি সংকট ও দাম বেড়ে যাওয়ায় গাড়িগুলো চালানো যাচ্ছে না।’

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সূযত পাল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই ঋতুতে আ্যাজমা রোগীদের ভীড় জমে চেম্বারে ও হাসপাতালগুলোতে। ধুলোবালিই অ্যাজমা রোগীদের শ্বাসতন্ত্র জীবাণুতে সংক্রমিত করে। শ্বাসতন্ত্র জমাট হলে অন্য রোগগুলোও কাবু করে ফেলতে পারে খুব সহজেই।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!