প্রতিদিন রিপোর্ট (ঢাকা) :
আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিলে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের।
আজ রবিবার দলের কাউন্সিলের দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে তিনি প্রথমবারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েন। বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নতুন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রস্তাব করলে তাতে সমর্থন জানান জাহাঙ্গীর কবির নানক। এ পদে বিকল্প কোনো নাম প্রস্তাব না আসায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনার ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন।
প্রসঙ্গত ছাত্র রাজনীতি থেকে ওবায়দুল কাদের উঠে এসেছেন বাংলাদেশের একজন পূর্ণাঙ্গ রাজনীতিবিদ হিসেবে। তিনি বর্তমানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একজন সফল মন্ত্রী। তার অন্যান্য পরিচয়ের মধ্যে রয়েছে- তিনি একজন সাংবাদিক এবং লেখক।
১৯৫২-এর ১ জানুয়ারি, নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ থানার বড় রাজাপুর গ্রামে জন্ম নেন ওবায়দুল কাদের। বাবা মোশারফ হোসেন সরকারি চাকুরি ছেড়ে দিয়ে জনশিক্ষা স্বার্থে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। ওবায়দুল কাদের বসুরহাট সরকারি এএইচসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি ও নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে মেধা তালিকায় স্থান নিয়ে এইচএসসি পাশ করেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন।
ওবায়দুল কাদের কলেজ জীবন থেকে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলন ও ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং কোম্পানীগঞ্জ থানা মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) অধিনায়ক ছিলেন। রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার কারা বরণ করেন। ১৯৭৫ এর পর এক নাগাড়ে দীর্ঘ আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন।
কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পরপর ২ বার ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।
ওবায়দুল কাদের দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা ও লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ত। দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসাবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। রচনা করেছেন আটটি গ্রন্থ। গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বাংলাদেশের হৃদয় হতে, পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধু, এই বিজয়ের মুকুট কোথায়, তিন সমুদ্রের দেশে, মেঘে মেঘে অনেক বেলা, রচনা সমগ্র, কারাগারে লেখা অনুস্মৃতি: যে কথা বলা হয়নি ইত্যাদি।
ওবায়দুল কাদের বিগত ১২ জুন ’৯৬-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নোয়াখালী- ৫ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২৩ জুন ’৯৬ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং একই দিনে যুব ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রাণালয়ের দায়িত্ব নেন। তিনি ২০০১ সালের ১৫ জুলাই পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব সৎ ও নিষ্ঠার সাথে পালন করেন।
২০০২ সালের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন থেকে ২০০৯-এর সম্মেলন পর্যন্ত ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রথম যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ১/১১ পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে তিনি ২০০৭ সালের ৯ মার্চ জরুরি বিধিতে গ্রেফতার হয়ে ১৭ মাস ২৬ দিন কারাবরণ করেন। ২০০৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে মুক্ত হন। কারাগারে থাকাকালে কারাজীবনের বর্ণনা দিয়ে “অনুস্মৃতি : যে কথা বলা হয়নি” লেখেন।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয়বারের মত নোয়াখালী-৫ আসন থেকে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং তথ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে তিনি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রণালয়েরর দায়িত্ব পালন করছেন। এ পদে থেকেও জনগণের সাথে মিশে কাজ করে তিনি খ্যাতি অর্জন করেছেন।
এবিএন
এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::