‘এ’ দলের লড়াইয়ে আফগানিস্তানের কাছে শোচনীয়ভাবে হারলো বাংলাদেশ

‘এ’ দলের লড়াইয়ে বাংলাদেশকে বেশ ভড়কে দিয়েছে আফগানিস্তান। যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে আজ এই প্রদেশে হামলা তো পরেরদিন আরেক প্রদেশে হামলা। এসবের মাঝেও আফগানিস্তান বিশ্ব ক্রিকেটে বেশ চমকজাগানিয়া দলের নাম। এখনও পর্যন্ত নিজেদের মাঠে একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে না পারেনি তারা। নিজেদের টেস্ট অভিষেক ম্যাচ খেলেছে ভারতের মাটিতে। এসবের পরও আফগানিস্তান ক্রিকেট যে সঠিক পথে এগুচ্ছে তার প্রমাণ দেখা গেল খুলনায়। সোমবারে শেষ হওয়া চারদিনের ম্যাচে আফগানিস্তান ‘এ’ দলের কাছে শোচনীয়ভাবে হেরেছে বাংলাদেশ ‘এ’ দল। জানলে অবাক হবেন বাংলাদেশ ‘এ’ দলে রয়েছে জাতীয় দলের হয়ে টেস্ট ম্যাচ খেলা ছয়জন খেলোয়াড়। অন্যদিকে আফগানিস্তান ‘এ’ দল ছিল একেবারে আনকোরা। তাই হতাশার এক বিশ্বকাপ কাটিয়ে জাতীয় দল দেশে ফেরার একদিন না পেরোতেই আবারও সেই হতাশায় দিন কাটাতে হল টাইগার ভক্ত-সমর্থকদের।

খুলনায় অনুষ্ঠিত চারদিনের ম্যাচে আফগানিস্তান ‘এ’ দলের কাছে ৭ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ ‘এ’ দল। ফলে দুই ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল সফরকারীরা।

দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেয়া ১৭৩ রানের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান উসমান গনিকে হারায় আফগানরা। দলীয় দুই রানে তাকে উইকেটরক্ষক এনামুল হক বিজয়ের ক্যাচে পরিণত করেন পেসার সালাউদ্দিন শাকিল। তবে ওয়ান ডাউনে নামা বহির শাহকে নিয়ে জয়ের পথে এগোতে থাকেন আরেক ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান। এই জুটি ৪০রান পেরোতেই আবারো বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রু এনে দেন শাকিল। ব্যক্তিগত ২০ রানের মাথায় উসমানের মতোই বহিরকে এনামুলের ক্যাচে পরিণত করেন এই পেসার।

কিছুক্ষণ পর দলীয় ৭১ রানে বাঁহাতি অফস্পিনার সাঞ্জামুল ইসলামের বলে শহিদুল্লাহ আউট হলে তৃতীয় উইকেট হারায় আফগানরা। ফলে জয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকে বাংলাদেশ। কিন্তু টাইগারদের এই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দেন দুই আফগান ব্যাটসম্যান ইব্রাহিম জাদরান ও নাসির জামাল। ১০২ রানের দুর্দান্ত এক জুটি গড়ে শেষ পর্যন্ত জয় নিয়েই মাঠ ছাড়েন দুই ব্যাটসম্যান। ৬ চারে ৭৬ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন ইব্রাহিম এবং ৭ চারে ৫৯ রানে অপরাজিত থাকেন আফগান অধিনায়ক নাসিম। ফলে ৭ উইকেটের বড় জয় পায় আফগানিস্তান এ দল।

‘এ’ দলের লড়াইয়ে আফগানিস্তানের কাছে শোচনীয়ভাবে হারলো বাংলাদেশ 1
আফগানিস্তান এ দলকে জয় এনে দেন লেগ স্পিনার কায়েস আহমেদ

তবে তাদের এ জয়ের মূল নায়ক হলেন লেগস্পিনার কায়েস আহমেদ। দুই ইনিংস মিলিয়ে ১০ উইকেট নিয়ে একাই বাংলাদেশকে গুড়িয়ে দেন তিনি। যার ফলে ম্যাচ সেরার পুরস্কারটাও উঠে তার হাতে।

চারদিনের এই ম্যাচে প্রথম দিনে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামে ইমরুল কায়েসের নেতৃত্বে গড়া বাংলাদেশ এ দল। ব্যাটিং বিপর্যয়ের পরেও এনামুলের সেঞ্চুরি (১২১) ও আফিফ হোসেইনের ফিফটিতে (৫০) প্রথম ইনিংসে ২৫৩ রানে অলআউট হয় টাইগাররা।

বাংলাদেশের মতো প্রথম ইনিংসেও বোলারদের তোপের মুখে পরে আফগান ব্যাটসম্যানরা। যার কারণে সেঞ্চুরি দূর, অর্ধশতকই তুলতে পারেননি কেউ। তবে কায়েস আহমেদের ৪৬ রান ও আফসার জাজাইয়ের ৪৫ রানের দৃঢ়তায় ২৫৭ রান তুলতে পারে আফগানিস্তান। ফলে ৪ রানের লিড নিয়ে এগিয়ে থাকে তারা। বাংলাদেশের পক্ষে সমান তিনটি করে উইকেট নেন সাঞ্জামুল ইসলাম, কামরুল হাসান রাব্বি ও তানবীর হায়দার।

লিড এতো কম রানের হলেও শেষ পর্যন্ত বেশি দূর এগোতে পারেনি বাংলাদেশ এ দল। কায়েস আহমেদের ঘূর্ণির কবলে পরে মাত্র ১৭৫ রানেই অল আউট হয় টাইগাররা। আফগানদের হয়ে একাই ৭ উইকেট নেন এই স্পিনার। টাইগারদের হয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪১ রান করেন আফিফ হোসেইন। ফলে শেষ দিনে এসে ১৭২ রানের সহজ লক্ষ্য পায় আফগানিস্তান। ছোট এই লক্ষ্য মাত্র তিন উইকেট হারিয়েই তাড়া করে ফেলে তারা।

দুই দলের মধ্যে সিরিজের দ্বিতীয় চারদিনের ম্যাচ শুরু হবে ১২ জুলাই। ভেন্যু চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ ‘এ’ দল ১ম ইনিংস: ২৫৩/১০
আফগানিস্তান ‘এ’ দল ১ম ইনিংস: ২৫৭/১০
বাংলাদেশ ‘এ’ দল ২য় ইনিংস: ৫৮.৪ ওভারে ১৭৫/১০ (আফিফ ৪১; ইয়ামিন ১/১৮, নাভিন ২২/১, আশরাফ ১/৪৪, কায়েস ৭/৬৫)
আফগানিস্তান এ দল ২য় ইনিংস: ১৭৩/৩ (উসমান ২, ইব্রাহিম ৭৬*, বাহির ২০, শহিদউল্লাহ ১৫, নাসির ৫৯*; শাকিল ২/২৬, সানজামুল ১/৫১)
ফল: আফগানিস্তান ‘এ’ দল ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা: কায়েস আহমেদ (আফগানিস্তান)

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!