এস আলম-টিকেসহ ৪ কোম্পানির হাতে ভোজ্যতেলের কলকাঠি, বাড়ছেই দাম

হঠাৎ তেলের সরবরাহ কমিয়ে চাপে ফেলার ‘চালাকি’

চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পাম অয়েল ও সয়াবিন তেলের দাম। অনেকটা বিদ্যুৎগতিতে এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে। পাইকারিতে পাম অয়েলের মণ এখন ৬ হাজার টাকা ছুঁতে চলেছে। অন্যদিকে সয়াবিন তেলের মণ এখন সাড়ে ৬ হাজার টাকা পেরিয়ে গেছে। দেশের বৃহৎ পাইকারি বাণিজ্যকেন্দ্র চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে তেলের দাম বাড়লে খুচরা দোকানেও সঙ্গে সঙ্গেই বেড়ে যাচ্ছে আরও বেশি দাম। এভাবে ভোজ্যতেলের বাজারে চলছে অস্বাভাবিক এক নৈরাজ্য।

বাংলাদেশে ভোজ্যতেল আমদানি করে ছয়টি প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো— চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ ও টিকে গ্রুপ এবং সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ ও বাংলাদেশ এডিবল অয়েল।

ভোজ্যতেল নিয়ে কারসাজি ঠেকাতে সরকারের নজরদারির অংশ হিসেবে গত ৩০ মার্চ ভোজ্যতেলের আমদানিকারক চার প্রতিষ্ঠানকে তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এই চার প্রতিষ্ঠান হল— টিকে গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ ও বাংলাদেশ এডিবল অয়েল (রূপচাঁদা ব্র্যান্ড)। ভোক্তা অধিকার এই চার প্রতিষ্ঠানের দেওয়া ব্যাখ্যায় অসন্তোষ প্রকাশ করে। এমন অবস্থায় বুধবার (৬ এপ্রিল) প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের সশরীরে এসে ব্যাখ্যা দিতে বলেছে ভোক্তা অধিকার। গত রোজার তিন মাস আগে প্রত্যেকটা মিল কতটা প্রোডাকশনে ছিল, অন্যদিকে এবারের রোজার তিন মাস আগে কতটুকু ছিল— এসব তথ্য বুধবারের বৈঠকে দিতে বলা হয়েছে।

সরকারের নজরদারির অংশ হিসেবে এর আগে গত ১৩ মার্চ চট্টগ্রাম নগরীর মইজ্জারটেকে এস আলম এডিবল অয়েল মিলের কারখানায় অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর। সেই অভিযানে এস আলমের কারখানাটিতে ড্রামে পণ্যের নাম, মেয়াদ ও দরের উল্লেখ দেখা যায়নি। রিফাইনিং ও বোতলজাতকরণ অংশের কার্যক্রম ছিল বন্ধ। অন্যদিকে সয়াবিন তেলের পাঁচ লিটারের একটি বোতলের গায়ে বাড়তি দাম লেখা দেখতে পায় ভোক্তা অধিকারের টিম। ওই বোতলের মোড়কে লেখা ছিল ৮৩৫ টাকা, কিন্তু সরকারি হিসেবে সেটি হওয়ার কথা ৭৯৫ টাকা।

এরপর ২৭ মার্চ আবার এস আলমের ওই কারখানায় অভিযান চালানো হয়। সেই অভিযানে ভোক্তা অধিকার দেখতে পায়, সাপ্লাই অর্ডারে একক দরের উল্লেখ নেই। কারখানায় আসার আগে সাপ্লাই অর্ডারগুলো অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে তৃতীয় পক্ষকে হস্তান্তর করা হচ্ছে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ভোজ্যতেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো মার্চ মাসে এসে হঠাৎ করেই তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান টিকে গ্রুপের নারায়ণগঞ্জের কারখানা থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে ২৭ হাজার ৩৭১ টন পাম তেল সরবরাহ করা হলেও মার্চে সেই পরিমাণ কমে ২১ হাজার ১১৯ টনে নেমে আসে। বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের ব্রান্ড রূপচাঁদার কারখানা থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে ১৪ হাজার ৩৮ টন তেল সরবরাহ করা হলেও মার্চ মাসে সেটি নেমে আসে ৮ হাজার ২৬৩ টনে। অন্যদিকে বসুন্ধরা গ্রুপের কেরানীগঞ্জ কারখানা থেকে ফেব্রুয়ারিতে ১৭ হাজার টন তেল সরবরাহ করা হলেও মার্চে সেই পরিমাণ কমে ১৩ হাজার ৫২ টনে নেমে আসে।

হঠাৎ করে তেলের সরবরাহ এভাবে কমিয়ে দেওয়াতে বাজার নিয়ন্ত্রক এই কোম্পানিগুলোর ‘চালাকি’ দেখছেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই।

দেশে বছরে ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। অথচ ২০২১ সালে ২৭ লাখ ৭১ হাজার টন ভোজ্যতেল আমদানি হওয়ার পরও বাজারে এখন সয়াবিন তেল স্বাভাবিক মাত্রায় পাওয়া যাচ্ছে না। আমদানিকারকরাই নির্দিষ্ট ডিলারদের দিয়ে সয়াবিন তেল অবৈধভাবে মজুত করে এই সংকট তৈরি করছেন— এমন অভিযোগের রয়েছে শক্ত ভিত্তি।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!