এরশাদ’র ‘জাতীয় ঐক্যজোট’!

এরশাদ’র ‘জাতীয় ঐক্যজোট’! 1ঢাকা প্রতিনিধি : জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে ‘জাতীয় ঐক্যজোট’ নামে একটি রাজনৈতিক জোট আত্মপ্রকাশ করবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলতি বছরের এপ্রিলের মধ্যেই জোটটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে শনিবার দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের বৈঠকে জোটগতভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ জোটে ধর্মভিত্তিক একটি জোট, ক্ষুদ্র দলগুলোর একটি জোট তৈরিসহ জাপার মধ্যে নির্বাচনি ঐক্য স্থাপিত হবে। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী দলের একাধিক নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, মূলত তিনটি জোটের সমন্বিত রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে জাতীয় পার্টি। এর একটি হবে ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে নিয়ে। ইতোমধ্যে ১০টি দল এই জোটে আগ্রহী বলে দাবি করা হয়েছে। দ্বিতীয়টি ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র দল নিয়ে, যেটি স্বতন্ত্র থাকবে। জোটের একজনকে প্রধান করে এরশাদের জোটে যুক্ত করা হবে। তৃতীয়টি হবে সরাসরি জাপার নেতৃত্বে নিবন্ধিত দলগুলোকে নিয়ে। এই তিনটি জোটের সমন্বিত রূপটি হবে ‘জাতীয় ঐক্যজোট।’

বৈঠক সূত্রের দাবি, এরশাদের নেতৃত্বে সংগঠিত নতুন এই জোটের নাম অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যার ভিত্তিতে হবে না। এক্ষেত্রে একটি জোটভিত্তিক কৌশলে যাচ্ছেন এরশাদ। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর একটি জোট হবে, সে জোটের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব থাকবে এরশাদের জোটে। যদিও ইসলামী ঐক্যজোটের একজন শীর্ষনেতা বলেন, ‘জোট হয়ে আবার জোটে কেন যাব?’ তবে এর ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি জাপার কোনও নেতার কাছ থেকে।

জাপার একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলছেন, ‘ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের যে কথা হয়েছে, তারা কোনোভাবেই ৩১ মার্চের আগে জোটসংক্রান্ত কোনও খবর হতে চান না। এই জোটে আসা সম্ভাব্য দলগুলো হাফেজ্জী হুজুরের নামে রাস্তার নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদে একটি সমাবেশ করবে ৩১ মার্চ। ওই সমাবেশের পরই এরশাদের জোটে আসা ও নতুন জোট নিয়ে সক্রিয় হতে চাইছে বেশিরভাগ দল।’

শনিবার দুপুরে বনানীতে জাপার চেয়ারম্যান কার্যালয়ে প্রেসিডিয়ামের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকেই আগামী নির্বাচন উপলক্ষে জোট করার ব্যাপারে সর্বসম্মতি ক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান জাপার মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারও। তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘ইতোমধ্যে নিবন্ধিত ১০-১২টি দলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আগামী নির্বাচনে জোট করেই ভোট হবে।’

জোট-প্রক্রিয়ার প্রধান সমন্বয়ক ও এরশাদের রাজনৈতিক সচিব সুনীল শুভ রায় বলেন, ‘নামের বিষয়টি মোটামুটি ঠিক হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আরও কিছু দিন পর বলা যাবে।’

জাপার কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি জোট করার সিদ্ধান্ত প্রেসিডিয়ামের সভায় পাকা হয়েছে। এর বেসিক ছিল, একটি কম্বাইন্ড প্ল্যাটফরম তৈরি করা, যেখানে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত যেকোনও দল, দায়িত্বশীল ও রাজনীতিতে গুরুত্ব আছে, এমন দলগুলোর সমন্বয়েই জোট গঠন করা।তবে নামসর্বস্ব কোনও দলকে রাখা হচ্ছে না।’

জানা গেছে, গত ৭ মার্চ ছোট ১৫ দলের সঙ্গে বৈঠক করেন এরশাদ। ওই দলগুলো বর্তমানে আলমগীর মজুমদারের নেতৃত্বে আছে। দলগুলো হলো, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, আমজনতা পার্টি, গণতান্ত্রিক ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ইসলামী ডেমোক্রেটিক পার্টি, কৃষক শ্রমিক পার্টি, ইউনাইটেড মুসলিম লীগ, গণ অধিকার পার্টি, তফসিল ফেডারেশন, জাতীয় হিন্দু লীগ, সচেতন হিন্দু পার্টি, বাংলাদেশ পিপলস্ ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিপিডিপি) ও ইসলামী গণ আন্দোলন।

এছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী ফ্রন্টসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে এরশাদের বৈঠক হয়েছে। ধর্মভিত্তিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, চায়ের দাওয়াতে গিয়েছিলেন এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। যদিও সূত্র বলছে, এরই মধ্যে আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে। ৩১ মার্চ ধর্মভিত্তিক দলগুলোর একটি কর্মসূচির কারণে আলোচনা ধীরে এগুচ্ছে। আর ১০ এপ্রিল ইসলামী ফ্রন্টের কাউন্সিলের তারিখ হওয়ায় এপ্রিলের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে যেতে পারে এরশাদের নতুন জোটের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান।

সুনীল শুভ রায় জানান, ‘মূলত এরশাদের প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রণয়ন ও নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার—এই দু’টিই হচ্ছে সম্ভাব্য মূলনীতি। এই নীতিতে বিশ্বস্ত থাকলেই জাতীয় ঐক্যজোটে নাম লেখাতে পারবে অন্য দলগুলো। এক্ষেত্রে জোটের ঐক্যের ভিত্তি হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ইসলামি মূল্যবোধ ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। এই বিষয়গুলো ধারণের ভিত্তিতেই গঠিত হচ্ছে জোট।’

বৈঠক সূত্র জানায়, প্রেসিডিয়ামের সভায় কেবল নামসর্বস্ব দল না নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জাপা থেকে সরে যাওয়া নেতারাও দলে ফিরতে পারবেন বলে সভায় আলোচনা হয়েছে। মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘আমরা দলের কোয়ালিটি দেখছি। যেসব দলের গণভিত্তি আছে, সে দলগুলোই জোটে আসবে। এপ্রিলের যেকোনও দিন জোটের ঘোষণা আসবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!