এমপি মোস্তাফিজকে বহিষ্কারের দাবি তুললেন চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর বিতর্কিত সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছেন চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে এক শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ওপর হামলা চালানোর ঘটনায় সাংসদ মোস্তাফিজকে দায়ী করে তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার ও তার সংসদ সদস্যপদ বাতিলের দাবি উঠেছে সমাবেশ থেকে।

সোমবার (২৪ আগস্ট) মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের মানববন্ধনে এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের নির্দেশে হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) সকাল ১০টায় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা। এ সময় ওই সাংসদের কুশপুত্তলিকা দাহ করে নিন্দা ও ক্ষোভ জানানো হয়।

প্রতিবাদ সমাবেশে গেরিলা কমান্ডার ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ৩ নম্বর সাক্ষী সিরু বাঙালি বিতর্কিত এমপি মোস্তাফিজের এসব কাজে কার মদদ রয়েছে সেই প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘কারো না কারো মদদে সে (মোস্তাফিজ) এসব চালাচ্ছে। তাকে কেউ না কেউ সাহায্য করছে। না হলে এতটুকুন করার ক্ষমতা তো তার কখনোই হতো না।’

এমপি মোস্তাফিজকে বহিষ্কারের দাবি তুললেন চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা 1

মোস্তাফিজদের যা ইচ্ছা তা করার জন্য দেশ স্বাধীন হয়নি— এমন মন্তব্য করে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় সিরু বাঙ্গালী বলেন, ‘পোন্দের মধ্যে গোস মারি বিলে বিলে পাঞ্জাবি দৌড়াইলাম যে এই মুস্তাফিইজ্জারলাই নয়, আঁরার লাই।’

প্রতিবাদ সমাবেশে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মাহমুদুল হক বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে রক্ত দিয়ে মৌলভী সৈয়দ ভাই। আজ তার পরিবারের ওপর হামলা করছে বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। গত সোমবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন করছিলাম। হঠাৎ তার পেটোয়া বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা করেছে। এই ঘৃণ্য কাজের নির্দেশদাতা সাংসদের সদস্য পদ কেড়ে নেওয়ার প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহবান জানাচ্ছি।’

সমাবেশে চট্টগ্রাম মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মু্ক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর আহমদ বলেন, ‘প্রেসক্লাবের মতো একটা জায়গায় মুক্তিযোদ্ধাদের মানববন্ধনে হামলার ঘটনা অকল্পনীয়। একজন এমপির কিভাবে সাহস হয় মুক্তিযোদ্ধাদের মানববন্ধনে হামলা করার? সকল মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি, এই কুলাঙ্গার এমপির সদস্যপদ বাতিল করে তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হোক।’

বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্য জহুর আহমদ চৌধুরীর সন্তান জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমার বাবা মরহুম জহুর আহমদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর সাথে সারাদেশ ঘুরে ঘুরে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত না করতেন আপনারা আজ এমপি হতে পারতেন না। একইভাবে বাঁশখালীতে মৌলভী সৈয়দ আহমদ এবং সুলতানুল কবির চৌধুরীরা আওয়ামী আওয়ামী লীগকে শক্ত ভিত্তি না দিলে আপনি মোস্তাফিজ আজকে এমপি হতে পারতেন না। আজকে সুলতানুল কবির চৌধুরী নাই বলে আপনি চাকর থেকে জননেতা বনে গেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশে হামলার জবাব আপনাকে দিতে হবে।’

মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তিকে দলের সভাপতির দায়িত্ব কিংবা দলীয় মনোনয়নে সাংসদ করা হলে এভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটতে থাকবে।’

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড চট্টগ্রাম মহানগরের আহবায়ক সাহেদ মুরাদ সাকুর সভাপতিত্বে ও জেলা শাখার সদস্য সচিব কামরুল হুদা পাভেলের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের আরেক সাক্ষী বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবসার, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি চট্টগ্রামের সভাপতি শওকত বাঙালী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার (অর্থ) আবদুর রাজ্জাক, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক ফরিদ মাহমুদ, কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান মনসুর, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আজিজুর রহমান আজিজ, মৌলভী সৈয়দের ভাতিজা জয়নাল আবেদিন, বাঁশখালী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের আহবায়ক ফয়সাল জামিল চৌধরী সাকি প্রমুখ।

প্রতিবাদ সমাবেশে সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের ঘোষণা দেওয়া হয়। আগামী ২৭ জুলাই এই স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের চট্টগ্রাম জেলা শাখার সদস্য সচিব কামরুল হুদা পাভেল। সমাবেশ শেষে সংসদের কুশপুত্তলিকা দাহ করে নিন্দা ও ক্ষোভ জানানো হয়।

আখতারুজ্জামান বাবু ছাত্র পরিষদের প্রতিবাদ সমাবেশ
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে চট্টগ্রাম মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কমান্ডসহ আওয়ামী পরিবার আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচীতে বাঁশখালীর বিতর্কিত সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানের সমর্থকদের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু চত্বরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন কর্ণফুলী উপজেলা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ছাত্র পরিষদ।

এ সময় বক্তারা মোস্তাফিজকে সংসদ থেকে বহিষ্কার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান ৷

এতে উপস্থিত ছিলেন বড়উঠান ইউনিয়ন যুবলীগ আহবায়ক বাহাদুর, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ সহসভাপতি শফিউল আলম, জেলা ছাত্রলীগ নেতা রমিজ উদ্দীন কানন, উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা উমর উদ্দীন, মো. জামাল , আরমান হায়দার, আবির, দক্ষিণ জেলা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ছাত্র পরিষদ সাধারণ সম্পাদক জয় সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব, উপজেলা ছাত্র পরিষদ সভাপতি মোস্তফা শাকিল, সাধারন সম্পাদক মঈনুদ্দিন, রকিব, ইমরান, মুরাদ , জুলিয়ান ডি রুজা প্রমুখ।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!