এমন ঈদ আর দেখেনি চট্টগ্রাম

মসজিদে করোনা মুক্তির প্রার্থনা

ঈদ মানে আনন্দ। ঈদের সকালে পরিবারের বড়দের হাত ধরে ছোট্ট সোনামনিরা নতুন জামা-কাপড় পরে ঈদের নামাজ পড়তে যায়। পুরো রাস্তায় নামাজীদের শরীরে মাখা নানা ব্র্যান্ডের খুশবোতে মৌ মৌ করতো। বড়রা নামাজ পড়া শুরু করলে ছোটরা একে অন্যের সাথে খুনসুটিতে মেতে উঠতো। ঈদের নামাজ শেষে ধনী-গরীব, সাদা-কালো, রাজনৈতিক ভিন্ন মতাদর্শীদের কোলাকুলিতে মসজিদের আঙিনা কিংবা ঈদগাহে এক অপরূপ দৃশ্যের অবতারণা ঘটতো।

কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাস পুরো পৃথিবীর ইতিহাসে ঈদের সেই দেড় হাজার বছরের ঐতিহ্যে আঘাত হেনেছে। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো চট্টগ্রামের কোথাও উন্মুক্ত স্থানে তথা ঈদগাহে ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়নি। শুধুমাত্র মসজিদকেন্দ্রিক ঈদ জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাধারণ মুসল্লিদের বড় একটা অংশ মসজিদে ঈদের নামাজে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থেকেছে। যেসব মসজিদে মুসল্লিদের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে ঈদের দুটো জামায়াত অনুষ্ঠিত হতো সেসব মসজিদের এবার দুটো জামায়াত মিলে আগের একটি জামায়াতের সমপরিমাণ উপস্থিতিও ছিল না।

নামাজ শেষে প্রতিটি মসজিদেই করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে।

জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে ঈদের নামাজ পড়তে আসা জাকির হোসেন মাসুদ জানান, প্রতি ঈদে আমার ছেলে আর আব্বু এক সাথে আসতো। এবার আব্বুকে নিয়ে আমি নামাজ পড়েছি। সবাই মুখে মাস্ক আর আলাদা আলাদা জায়নামাজ নিয়ে মসজিদে গিয়েছি। কারো সাথে মিশতে না পেরে দাদা-নাতীর মন খারাপ। আগের ঈদের মতো ছেলের বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়া হচ্ছে না। বাসায় রেখে যতটুকু আনন্দে রাখা যায় সেই চেষ্টা করছি।

ঈদগাহের সেই ঘন্টাখানেক সময়ে নামাজ, কোলাকুলির পর মূল আনন্দ শুরু হয় আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বন্ধবের ঘরে ঘরে বেড়ানো মাধ্যমে। কিন্তু এবার ঘুরোঘুরিতে আছে কড়াকড়ি। পাশাপাশি করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে আত্মরক্ষা করতে সবাই ঘরবন্দি। রাস্তাঘাটে নেই দলে দলে শিশু-কিশোর, যুবকদের হৈ হুল্লোড়। পাড়ায় পাড়ায় সাউন্ড সিস্টেম বাজিয়ে জটলা পাকিয়ে আনন্দে মেতে উঠার সেই দৃশ্যটিও উধাও।

পাড়া-পড়শি, আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে ঘুরোঘুরি শেষে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় জমানো ছিল বিকেলের ঈদ আনন্দ। তবে এবার বন্ধই থাকছে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, পারকি সৈকত, ফয়’স লেক, চিড়িয়াখানাসহ নগরীর অন্যান্য সকল বিনোদন কেন্দ্র। কেউ ভীড় জমালে প্রশাসন ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারিও দিয়ে রেখেছে।

পারিবারিক ঈদ মেলা করতো চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী একাধিক পরিবার। তেমনি এক পরিবারের সিনিয়র এক সদস্য জানান, করোনায় ছেলে-বুড়ো কাউকে ছাড়ছে না। আগে নিজেরা বাঁচি, বেঁচে থাকলে বহু ঈদ উদযাপন করা যাবে।

চট্টগ্রামের ঈদের ছবি মানে ছিল নগর আওয়ামী লীগের আমৃত্যু সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের ঈদের জামায়াতে একটি চেয়ারে বসবেন, তার পাশে আরেকটি আরেকটি চেয়ারে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল নোমান বসবেন। মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর থেকে সেই দৃশ্য নেই। ঈদের জামায়াত শেষে নেতাকর্মীরা তাঁর চশমা হিলের বাসভবনে ভিড় করতেন।

সালাম-সালামি আর মেজবানিকে অবধারিত করেছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। তাঁর মৃত্যুর পর পরিবারের অন্য সদস্যরা সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের একাধিক সদস্য করোনা আক্রান্ত। তাঁরা আইসোলেশনে আছেন। সঙ্গত কারণেই চশমা হিলে এবার সেই ভিড় নেই। বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমান করোনার শুরু থেকেই ঢাকায় আছেন। তার বাসায়ও এবার নেতাকর্মীদের ভীড়ের সুযোগ নেই, তারও নেই এবার মেজবানি বা ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন।

এবারের ঈদ একেবারেই ঘরবন্দি করে রেখেছে সবাইকে। সবার প্রত্যাশা করোনা একদিন বিদায় হবে। পৃথিবী হবে করোনামুক্ত। আর সেই দিন হয়তো আকাশে নতুন চাঁদ নাও থাকতে পারে। কিন্তু সেই আনন্দ হবে সবচেয়ে বেশি আনন্দের।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!