এবার সরাসরি হত্যার হুমকি সেই ‘আজরাইল’ শিপুর

চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার এলাকার সমালোচিত নুর মোস্তাফা টিনুর ভাই ছাত্রদল নেতা নুর মোহাম্মদ শিপু ফোনালাপে খুনের নির্দেশ দেওয়ার পর এবার সরাসরিই হত্যার হুমকি দিলেন। ফোনালাপে তিনি চকবাজার এলাকায় কয়েকদিনের মধ্যেই ‘আজরাইল’ আসার কথা বললেও এবার সেই ‘আজরাইল’ রূপে শিপু নিজেই হত্যার হুমকি দিলেন।

পাঁচলাইশ থানার চকবাজার ওয়ার্ডের টুপিওয়ালা পাড়ার বাসিন্দা ছাত্রলীগ নেতা মুজিবুর রহমান রাসেলকে এ হুমকি দেন তিনি। হত্যার হুমকি পেয়ে চকবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির ছেলে রাসেল চান্দগাঁও থানায় এ সংক্রান্ত একটি জিডি করেন।

এর আগে শিপুর বড় ভাই টিনু র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর নিজ অনুসারী রবিন নামে একজনকে ফোন করে শিপু পাঁচজনকে হত্যার নির্দেশনা দেন। এরকম একটি ফোনালাপের অডিও চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছিল। সেই ফোনালাপে শিপু বলেন, ‘সুখের ঘরে দুঃখের আগুন যে লাগাইছে সেই আগুনে ছারখার হবে টুপিওয়ালাপাড়ার বইশ কালা মইশ। মুখোশধারী সমাজের কিছু নামাজ পড়া মানুষ। এবং সুসংবাদ শিগগিরই আসছে। কাফনের কাপড় নিয়ে আজরাইল শিগগিরই আল্লাহ থেকে অনুমতি নিয়ে। হয়তো দুই একটা উইকেট পড়তেও পারে। শিগগিরই ১৫-২০ দিন এক মাসের মধ্যে আজারাইল ঢুকবে টুপিওয়ালা পাড়ার ভেতরে। কবজ করবে জান। জান কবজ করে নিয়ে যাবে। হয়তো রাতে খাওয়া দাওয়া করে পোলাও মাংস খেয়ে সকালে উঠে দেখবে যে ইনালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন। ছুম্মা আমীন।’

যাদের খুন করতে হবে উল্লেখ করে ফোনালাপে শিপু আরও বলেন, ‘চোরা সিরাইজ্জেও পোয়া মিট্ট, মজিবুর রহমান রাসেল, আরিফুল ইসলাম মাসুদ, জসিম ফরহাদ মোট জসিম।’

খুন করা সওয়াবের কাজ উল্লেখ করে এ সময় ফোনের অপর প্রান্তে থাকা রবিনকে শিপু বলেন, ‘সওয়াব কামাও। পাপ যখন করেছি, পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। পাপ আমিও করেছি, তুমিও করেছ। কেউ বলতে পারবে না আমরা ভালো ছিলাম। মানুষের পোন্দে ছুরি মারছি, পুন্দে লাতি মারছি, ঘুষি মারছি। পাপ বাপকেও ছাড়ে না। সেজন্য জেলে গেছি। আমি নিজের দোষ নিজেকে দিচ্ছি, কাউকে দোষ দিচ্ছি না। তুইও কিছু পাপ করেছিস। সেজন্য তুই এসব করে সওয়াব কামাও।’

এই ফোনালাপ প্রকাশিত হওয়ার পরই বিষয়টি জানতে পারেন ছাত্রলীগ নেতা মুজিবর রহমান রাসেল। গত ১ নভেম্বর বিকেল পাঁচটার দিকে রাসেল চান্দগাঁও থানার বাড়াই পাড়া এলাকায় তার বড় ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যান। সেখান থেকে বের হয়ে বাড়াইপাড়া কবরস্থানের সামনে পৌঁছলে টিনুর ভাই শিপু ও মুখোশ পরা অজ্ঞাত আরও তিন চারজন রাসেলের গতিরোধ করেন। এসময় শিশুসহ তার সঙ্গীরা রাসেলকে ছাত্রলীগের রাজনীতি ছেড়ে দিতে বলেন। শেষবারের মত তাকে সাবধান হয়ে যেতেও বলা হয়। নইলে আগামী এক মাসের মধ্যে তার ক্ষতি করবে বলেও শাসিয়ে যান শিপু। এসব ঘটনা উল্লেখ করে গত ১ নভেম্বর রাতেই চান্দগাঁও থানায় একটি জিডি করেন। এতে তার জীবন হুমকির মুখে বলে জানান রাসেল।

জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করে চান্দগাঁও থানার এসআই উৎপল চক্রবর্তী বলেন, ‘এ ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমতি পেলেই তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে ছাত্রলীগ নেতা মুজিবর রহমান রাসেল বলেন, ‘টিনু-শিপুরা এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। আমরা আওয়ামী পরিবারের সন্তান হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের পক্ষে এলাকায় সন্ত্রাস-মাদক বিরোধী সভা মিছিল করেছি। এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার। সে কারণেই হয়তো শিপু আমাদের ক্ষতি করতে চায়। তবে সে যে আমাকে মেরে ফেলতে চায় তা আমি চট্টগ্রাম প্রতিদিনে প্রকাশিত নিউজ থেকে জানতে পারি। এরপর সে নিজেই তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট এলাকায় আমার গতিরোধ করে রাজনীতি ছাড়তে বলাসহ হত্যার হুমকি দেয়। সে কারণে এই সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’

স্থানীয়রা জানান, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় সহযোগীসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন কথিত যুবলীগ নেতা টিনুর ছোট ভাই ছাত্রদল নেতা শিপু। ওই সময় তাকে পাঁচলাইশ থানা থেকে ছাড়িয়ে আনতে দলবলসহ থানা ঘেরাও করেছিলেন টিনু। দুই ভাই দুই দল করলেও চাঁদাবাজি সন্ত্রাসী ও আধিপত্য বিস্তারের প্রশ্নে দুজনেই এক ও অভিন্ন গ্রুপ পরিচালনা করে থাকেন।

এমনকি বর্তমানে টিনু র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকায় টিনুর অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণ করছেন শিপু নিজেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর করা তালিকায় ২০ সহযোগীর অন্যতম হিসেবে টিনুর ভাই শিপুর নামও উঠে এসেছে।

এসএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!