এবার মানহানি মামলা পিএইচপির ইকবাল ও আমাদের সময় সম্পাদক মো. গোলামের বিরুদ্ধে

মিথ্যা খবর প্রকাশ করে সাংবাদিক ঘায়েলের চেষ্টা

সাংবাদিকের ক্যারিয়ার ধ্বংস করার হুমকি দিয়ে মিথ্যা ও মনগড়া সংবাদ প্রকাশ করে এবার মানহানির মামলার আসামি হলেন পিএইচপি গ্রুপের এমডি ও দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার শেয়ারহোল্ডার ইকবাল হোসেন চৌধুরী। এই মামলায় দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রতিবেদককেও আসামি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম ১ম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনের প্রকাশক ও উপদেষ্টা সম্পাদক আয়ান শর্মা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে আইনজীবী কফিল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ ছেপে একজন স্বনামধন্য সাংবাদিকের সম্মানহানি করায় তিনজনকে আসামি করে ৫০০/৫০১ ধারায় মামলার আবেদন করলে আদালত তা গ্রহণ করেন। আদালত এই মামলা তদন্তের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি)।

মামলায় আসামিরা হলেন দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোহাম্মদ গোলাম সরোয়ার, প্রতিবেদক মেহেদী হাসান এবং পিএইচপি গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার শেয়ার হোল্ডার মো. ইকবাল হোসেন চৌধুরী।

মামলার বাদির আরেক আইনজীবী মোকাররম হোসাইন বলেন, ‘আজকের মানহানি মামলাটি দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় আসামিরা মনগড়া ও কাল্পনিক তথ্য ছেপে বাদি চট্টগ্রাম প্রতিদিনের উপদেষ্টা সম্পাদক ও প্রকাশক আয়ান শর্মাকে পেশাগত, সামাজিক ও পারিবারিকভাবে সম্মানহানি।’

তিনি বলেন, এর আগে ২২ ফেব্রুয়ারি একটি সাইবার মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় এই তিন আসামিসহ চারজন রয়েছে। সাইবার মামলাটি মূলত আসামিরা বাদির বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদটি দৈনিক আমাদের সময়ের অনলাইন সংস্করণ ও ফেসবুকে ছড়িয়ে বাদির মারাত্মক সম্মানহানি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টার অভিযোগে।

পিএইচপি গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টরইকবাল হোসেন চৌধুরী বাংলাদেশে রুয়ান্ডার অনারারি কনসাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার বাবা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান ২০২০ সালে একুশে পদক পান সমাজসেবায় ‘অবদানের’ স্বীকৃতি হিসেবে।

মামলার নথিপত্র সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে পাহাড়ের টিলা কেটে বাঁধ দিয়ে পাহাড়ি প্রাকৃতিক ছড়া বন্ধ করে দেওয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তর মামলা করে চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান পিএইচপি ফ্যামিলির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পিএইচপি ফ্লোট গ্লাসের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এই মামলার খবর প্রকাশ করার পর পিএইচপির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইকবাল হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনের উপদেষ্টা সম্পাদক ও প্রকাশক আয়ান শর্মাকে টানা দুই দিন ফোন করে অশালীন ভাষায় হুমকি দেন। এ সময় তিনি সাম্প্রদায়িক আক্রমণ ছাড়াও বহুবার রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের নাম ব্যবহার করে সরাসরি তুলে নেওয়ার হুমকি দেন।

এ ঘটনায় চট্টগ্রাম প্রথম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সিআর-৫৩৭/২২ (কোতোয়ালী) মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। মামলা করার পর তা প্রত্যাখ্যান করতে ফোন কলে আয়ান শর্মাকে হুমকি দেন ইকবাল।

ফোন কলে আয়ান শর্মাকে নিজের মালিকানাধীন পত্রিকায় মানহানিকর খবর প্রকাশের ইঙ্গিত দিয়ে তাকে ‘কচুকাটা’ করার হুমকি দেন পিএইচপি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন।

এ সময় ইকবাল বলেন, তোমার সাথে আমার পাঙ্গা লেগে গেল কিন্তু, মনে রেখো। কচুকাটা করবো, কচুকাটা। মিডিয়া দিয়ে কচুকাটা করবো তোমারে। আমি হাত তুলি না কারো উপরে। মিডিয়া দিয়ে কচুকাটা করবো তোমারে। আমি যখন চারটা মামলা দিবো, আগের মামলা তো আছেই, এর পেছনে দৌড়াইতে পারবা? তোমারে আমি ন্যাংটা তিনটা নিউজ পেপারে আর টিভি চ্যানেলের মধ্যে করতেছি কালকে। তারপর তুমি মামলা লাগাও আমার পেছনে, এ পর্যায়ে কোর্টে গিয়ে দৌড়াইয়ো, টাকা খরচ কইরো, ঠিক আছে?

চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে ইকবাল বলেন, তাইলে কালকে থেকে কিন্তু কোর্টে অনেক কিন্তু দৌড়াইতে হবে কিন্তু। চারটা মামলা হবে কিন্তু। শোন, তুমি যেই…ধর তুমি মনে হয় আমার কানেকশন জানো না, মহসীন স্যারের কানেকশন আর আমার কানেকশনের মধ্যে অনেক বেশকমের হিসাব আছে। আমি চাই যে রেকর্ডিং কর এই কথাগুলা, কারণ তুমি আমারে প্যারাইন্না ফুরাইন্না করে পারবা না, কেন পারবা না জানো? তুমি এই দেশেই থাকতে পারবা না। তুমি যদি এত বড় হয়ে থাক সাংবাদিক, আমি মাফ চাইব।

ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দিয়ে ইকবাল বলেন, কোর্টে হাজিরা তোমার দিতে হবে, রেডি হয়ে যেয়ো, ঠিক আছে? এরপরে তো তুমি কোথা থেকে ডাক পাবা এটা তুমি বুঝেই নিবা। তুমি ঢাকায় ডাক পাবা, চিটাগাংয়ে না। ইউ ক্যান নট ম্যানেজ এনিবডি ইন চিটাগং, তুমি ঢাকা থেকে ডাক পাবা। তোমারটা তুমি দেইখো। আমি কোন কানেকশনে চলি তুমি জানো? আমি তোরে কোর্টে কয়বার রান করাবো, আমার বাজেট আমি ঠিক করছি। তুমি যেখানে গিয়ে কেইস করার কর, আমি যশোর যাব দরকার হলে, হেলিকপ্টার নিয়ে যাবো। আর তুই যাবি বাসে। মাফ চাইতে পারবি নাকি মাফ চাইবি না? আমি কি দৌড়াবো তোরে? তুমি এভাবে নিউজ কেমনে আমার ছবি দিয়ে করলা? তুমি ক্ষমা চাবা নাকি কালকে তোমারে ধরে নিয়ে যাবো আমি?

ফোনে এমন হুমকির পর আয়ান শর্মার পরিবারকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি দিয়ে মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ প্রয়োগ করছিলেন। সনাতন ধর্মালম্বী হওয়ায় মামলা প্রত্যাহার না করলে সপরিবারে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হবে বলেও হুমকি দেন ইকবাল।

সামাজিকভাবে ও পেশাগতভাবে মান-সম্মান ক্ষুন্ন করার জন্য আয়ান শর্মাকে বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা, বানোয়াট ও অপমান জনক সংবাদ প্রচার করেছেন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার শেষের পাতায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে একটি সংবাদ ছাপায়। ওই সংবাদে আয়ান শর্মাকে ‘চাঁদাবাজ, ধর্ষক ও অপহরণকারী’ বলে উল্লেখ করা হয়। মূলত ইকবালের নির্দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মানহানিকর মিথ্যা, কুৎসাপূর্ণ ও আক্রমণাত্মক সংবাদ প্রচার করা হয়।

আমাদের সময় পত্রিকার প্রতিবেদক মেহেদী হাসান সংবাদ সংক্রান্তে আয়ান শর্মাকে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টায় ফোন করলে তিনি মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ জানান। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। যা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আরো একটি মিথ্যা ও মানহানিকর সংবাদ প্রকাশিত হয় ওই পত্রিকায়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!