এবার আদালতের ‘ডরে’ চট্টগ্রামের ভাষার সিনেমা ‘ন ডরাই’

চট্টগ্রামের ভাষায় নির্মিত দেশের প্রথম ‘সার্ফিং’ বিষয়ক চলচ্চিত্র ‘ন ডরাই’ নিয়ে বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছেই না। এবার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং অনৈতিকতার অভিযোগ তুলে ‘ন ডরাই’ সিনেমার সেন্সর বাতিল ও প্রদর্শনী বন্ধ করার জন্য আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী হুজ্জাতুল ইসলাম। এই ছবির মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং হযরত আয়শা (রা.) কে অপমান করায় নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানানো হয়েছে। ৪৮ ঘন্টার মধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে হাইকোর্টে রিট করা হবে বলে জানিয়েছেন ওই আইনজীবী।

বুধবার (৪ ডিসেম্বর ) ডাক ও রেজিস্ট্রিযোগে পাঠানো এই নোটিশে নোটিশ পাঠানো হয় তথ্য সচিব, আইন সচিব, সিনেমাটির প্রযোজক মাহবুব রহমান রুহেল, পরিচালক তানিম রহমান অংশু, সংলাপ রচয়িতা শ্যামল সেন গুপ্তকে।

তানিম রহমান অংশু পরিচালিত ছবিটির প্রযোজক স্টার সিনেপ্লেক্সের চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান রুহেল। তিনি সাবেক মন্ত্রী ও চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ছেলে।

নোটিশে বলা হয়েছে, এই সিনেমার প্রধান চরিত্রের সঙ্গে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর স্ত্রী হযরত আয়শা (রা)-এর মিল রাখা হয়েছে। হযরত আয়শা (রা.) ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের কাছে পবিত্র ও সম্মানিত ব্যাক্তি। তাকে নিয়ে কুরআনে বলা হয়েছে, তিনি বিশ্বাসীদের মা।

সিনেমার মূল নায়িকার সঙ্গে হযরত আয়শার নাম ব্যবহার করে অশ্লীল দৃশ্যধারণ করা হয়েছে যা মুসলমানদের ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাতের শামিল। শুধু তাই নয়, কমিক বই ও এনিমেটেড ভিডিও থেকে এই সিনেমাটি তৈরি করা খুবই আপত্তিকর। সস্তা বাজার পাওয়ার জন্য পরিচালক মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের চেষ্টা করেছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৮ ধারা অনুযায়ী যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। চলচিত্র সেন্সরবোর্ড সিনেমাটি প্রদর্শনের অনুমতি দিয়ে আইন লঙ্গন করেছেন।

তবে নায়িকার নাম হযরত মুহাম্মদ (স.) এর স্ত্রী আয়শা (রা) নামে রাখা এবং অশ্লীল দৃশ্যের অভিযোগ সম্পর্কে অংশু বলেন, ‘ না এ ধরনের কোন কিছুই আমরা করিনি। আর আয়শা নামে এই প্রথম কোনও কাজ হচ্ছে তাও তো না। এর আগেও আয়শা নামে বহু কেন্দ্রীয় চরিত্রের কাজ হয়েছে। অনেক ধরনের গল্প দেখানো হয়েছে। এখানে আসলে আয়শা চরিত্রটায় এমন কিছু দেখানো হয়নি যেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। সার্ফিংয়ের দৃশ্যে মেয়েরা যেভাবে সার্ফিং করে সেভাবেই দেখিয়েছি, সালোয়ার কামিজ পরিহিত অবস্থায়। দৃষ্টিকটু কিছুই দেখাইনি। তাই এ ধরনের কথা ওঠায় পরিচালক হিসেবে আমি অনেক অবাক। আর নির্মাণের সময় থেকেই আমরা এসব ব্যাপারে খেয়াল রেখেছিলাম, যেন এগুলো নিয়ে দর্শকদের মধ্যে কোনও ধরণের অস্বস্তি যেন না হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামের ভাষার কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। অ্যাজ আ ডিরেক্টর-প্রডিউসার গল্প বা সিনেমার প্রতি অনেস্ট হতে চাইলে অরিজিনালিটি রাখতে হয়। চট্টগ্রামের ভাষার অরিজিনালিটি রক্ষা করতে গিয়ে আমরা কিছু ভাষা বা শব্দ (যেটাকে গালি বলেন কেউ কেউ) রাখতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু সেটাও সেন্সর বোর্ডের প্রতি সম্মান রেখে মিউট করে দিয়েছি। তারপরই ছবিটি মুক্তি দিয়েছি। তবু কেন আইনি নোটিশ আসবে, আমি বুঝি না।’

উল্লেখ্য গেল, ২৯ নভেম্বর দেশের ৮টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে বছরের বহুল প্রতীক্ষিত ছবি ‘ন ডরাই’। চলতি সপ্তাহে ছবিটি চলছে স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা সিটি, ধানমন্ডি ও মহাখালী শাখায়। এছাড়া রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কের ‘ব্লকবাস্টার’, শ্যামলী সিনেমা, চট্টগ্রামের সিলভারস্ক্রিন, ময়মনসিংহের ‘ছায়বাণী’ ও বগুড়ার ‌‘মম ইন’-এ।

ছবির প্রযোজক ও স্টার সিনেপ্লেক্সের চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান রুহেলের প্রথম প্রযোজিত সিনেমা ‘ন ডরাই’। ছবির পরিচালক তানিম রহমান অংশু। দেশের প্রথম নারী সার্ফার নাসিমার উঠে আসার বাস্তব গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে ছবিটি। সামাজিক, পারিবারিক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে সার্ফিংয়ের আইকন হয়ে ওঠার অদম্য জীবনের গল্প আছে এই ছবিতে। ছবির অন্যতম দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুনেরা বিনতে কামাল ও শরিফুল রাজ।

এর আগে গত ২১ নভেম্বর ছবিটি দেখার পর সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা সন্তোষ প্রকাশ করলেও সংলাপ নিয়ে জানিয়েছিলেন আপত্তি। ‘ন ডরাই’ নামের সিনেমাটি তৈরি হয়েছে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায়। ‘আপত্তিকর’ আঞ্চলিক ভাষার এই সংলাপে সংশোধনী না আনলে ছবিটিকে সেন্সর সনদ দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছিল সেন্সর বোর্ড। পরে ওইসব সংলাপে সংশোধনী আনার পর রোববার (২৫ নভেম্বর) ছবিটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান স্টার সিনেপ্লেক্সকে সনদ দিয়েছে সেন্সর বোর্ড।

চট্টগ্রামের ভাষায় আপত্তি কোথায়— সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান নিজামুল কবীর বলেছেন, ‘‘ন ডরাই’ অসাধারণ একটি সিনেমা। কিন্তু ছবির সংলাপে আমাদের কিছু আপত্তি রয়েছে। এই ছবিটি নির্মিত হয়েছে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায়। চট্টগ্রামের ভাষায় এমন কিছু সংলাপ ব্যবহার করা হয়েছে যা দেশের অন্যান্য জেলার লোকদের কাছে অশ্লীল, আপত্তিকর মনে হতে পারে। বিষয়টি এমন যে— এক দেশের বুলি, আরেক দেশের গালি।’’

‘ন ডরাই’— সার্ফিং নিয়ে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। তানিম রহমান অংশু পরিচালিত ছবিটির চিত্রনাট্য লিখেছেন কলকাতার শ্যামল সেনগুপ্ত। অভিনয় করেছেন শরিফুল রাজ, সুনেরাহ বিনতে কামাল, সাঈদ বাবু, জোসেফাইন লিন্ডেগার্ড প্রমুখ।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!