এবার আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবের ৬ কোটি টাকার সম্পদ শনাক্ত

নোবেলের মিলেছে ৭৫ লাখ টাকার সম্পদ

এবার কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানের পরিবারের ৬ কোটি টাকার সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানী টিম। অন্যদিকে ২১ কোটি টাকা জব্দের পর কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর জাবেদ মোহাম্মদ কায়সার নোবেলের আরও ৭৫ লাখ টাকা মূল্যের সম্পদ শনাক্ত করেছে দুদক টিম।

মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, ‘অবৈধ’ উপায়ে অর্জিত সন্দেহে এসব সম্পদ অভিযুক্তদের হস্তান্তর না করার জন্য কক্সবাজারের সাব-রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সবশেষ সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে দুদকের একটি টিম মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের শাখা থেকে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের ১১টি একাউন্ট থেকে ১৭ লাখ ৪৮ হাজার ৩৯০ টাকা জব্দ করে। এর পাশাপাশি কক্সবাজারের সকল ব্যাংকের শাখায় পৌর মেয়র ও তার পরিবারের নামে যেসব একাউন্ট রয়েছে তার হিসাব চেয়ে লিখিত চিঠি দিয়েছে দুদক। অন্যদিকে ওইদিন ডাচবাংলা ব্যাংক কক্সবাজার শাখায় অ্যাডভোকেট নোমান শরীফের একাউন্টে থাকা ৪ লাখ ৪৭ হাজার ১৮৭ টাকাও জব্দ করে।

এর আগে ১ সেপ্টেম্বর দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি টিম কক্সবাজারের বেসিক ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক এবং ট্রাস্ট ব্যাংকের শাখা থেকে কাউন্সিলর জাবেদের একাউন্টে থাকা ২০ কোটি টাকা জব্দ করে। এরপর রোববার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডাকবিভাগের কক্সবাজার শাখায় অভিযান চালিয়ে আরও ৮০ লাখ টাকা জব্দ করা হয়।

বড়মাপের দুর্নীতিতে জড়িত— এমন জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাংবাদিকসহ ৬০ জনের খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এদের মধ্যে শুধু এক পৌর কাউন্সিলরের একাউন্ট থেকেই মিলেছে ২১ কোটি টাকা। কক্সবাজারে বিভিন্ন প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দুদক বড় এই চক্রের খোঁজ পেয়েছে। কক্সবাজারে চলমান ৭০টিরও বেশি প্রকল্পে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ থেকে এই চক্রটি বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

বর্তমান অনেকগুলো বড় উন্নয়ন প্রকল্প চলছে কক্সবাজারে। ৭০টির বেশি প্রকল্পে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পগুলোর জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে ২০ হাজার একরের বেশি পরিমাণ জমি। অধিগ্রহণ করা এসব জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ প্রদানে ‘কমিশন বাণিজ্য’ই ছিল ৬০ জনের এই দালালচক্রের মূল কাজ। এদের মধ্যে রয়েছেন জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাংবাদিকসহ ৬০ জনের একটি সংঘবদ্ধ চক্র।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলায় চলমান প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রথম কাজ ভূমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে দালালদের সিন্ডিকেটটি তৈরি হয়েছে। এসব দালাল জমির মালিকদের নাম দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বিষয়টি নজরে আসার পর দুদক আনুষ্ঠানিকভাবে অনুসন্ধানে নামে। অনুসন্ধানের শুরুতেই দুদক ও র‌্যাব যৌথ অভিযান চালিয়ে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদ ওয়াসিম নামের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার এক সার্ভেয়ারকে নগদ ৯৩ লাখ টাকাসহ আটক করে। তার তথ্যের ভিত্তিতে পরে ২২ জুলাই মো. সেলিম উল্লাহ, ৩ আগস্ট মোহাম্মদ কামরুদ্দিন ও সালাহ উদ্দিন নামের তিন দালালকে আটক করে দুদক। আটকের সময় এসব দালালের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকার নগদ চেক ও ভূমি অধিগ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ মূল নথি উদ্ধার করা হয়।

পরে তাদের দেওয়া তথ্যমতে, কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর জাবেদ মো. কায়সার নোবেলের কাছ থেকে দুই দফায় ২০ কোটি ৮০ লাখ টাকা জব্দ করা হয়।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, নিজস্ব অনুসন্ধান ও আটক দালালদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে ৬০ দালালের সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত দালালদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ পর্যন্ত পাওয়া দালালদের মধ্যে রয়েছেন কক্সবাজার সদর উপজেলা ও পৌরসভা এলাকার গ্রেফতারকৃত সালাউদ্দিন ও কামরুউদ্দিন। এছাড়া এই তালিকায় রয়েছেন কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান ও তার ছেলে মেহেদী, মাসেদুল হক রাশেদ, কায়সারুল হক, কাউন্সিলর ওমর ছিদ্দিক লালু, কাউন্সিলর মিজান, সিরাজুল মোস্তফা, ক্যাচিং মং, সাবেক কাউন্সিলর জাবেদ কায়সার নোবেল, আলমগীর টাওয়ারের মালিক আলমগীর, ভূমি সহকারী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন, জেলা প্রশাসনের কর্মচারী ফরিদুল আলম, কুতুবী, দৈনিক কালের কন্ঠের কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি তোফায়েল আহমেদ, আরটিভি চ্যানেলের প্রতিনিধি শাহীন, সোহেল, অ্যাডভোকেট সাঈদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আনসারুল করিম, অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন, অ্যাডভোকেট ফখরুল ইসলাম গুন্দু, অ্যাডভোকেট নুরুল হক ও অ্যাডভোকেট দুলাল।

এই তালিকায় আরও রয়েছেন মহেশখালী উপজেলার হোয়ানকের ছাবের মো. ইব্রাহিম, আমান উল্লাহ, কালারমারছড়ার চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান শরীফ, তার বড় ভাই অ্যাডভোকেট নোমান শরীফ, কালামারছড়ার জালাল উদ্দিন, নুরুল উসলাম বাহাদুর, জসিম উদ্দিন, জাকারিয়া, নুরুল আমিন, আবদুল গাফ্ফার, মৌলভী জাকারিয়া, শাপলাপুরের সেলিম উল্লাহ, নুরুল হুদা কাজল, মাতারবাড়ির নাছির উদ্দিন মো. বাবর চৌধুরী, মো. হোসেন, হেলাল উদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান, আহমদ উল্লাহ, রেজাউল করিম আশেক, আবদুল্লাহ আল মামুন, আবদুস সাত্তার, মো. মামুন, রেজাউল, ওয়ালিদ চৌধুরী, ধলঘাটার আবু ছৈয়দ, মো. তাজউদ্দিন, রমজান আলী, মো. হোছন, কামরুল ইসলাম, স্যোসাল ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম। উখিয়া উপজেলার ইনানী এলাকার মহিবুল্লাহ, মো. হোসেন, জসিম উদ্দিন ও আরিফুর রহমান।

এদিকে উল্লেখিতদের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও রয়েছে এই প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!