‘এপিএসের কাণ্ড’—সাংসদের সঙ্গে দেখা করেননি ঠিকাদার, বন্ধ করে দিলেন স্কুল নির্মাণ

চট্টগ্রাম ৪ (সীতাকুণ্ড) আসনের সাংসদ দিদারুল আলমের সাথে ঠিকাদার দেখা না করায় সেখানকার একটি স্কুল ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন সাংসদের ক্ষুব্ধ এপিএস। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্কুলটির নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ চলছিল।

দিদারুল আলমের ক্ষুব্ধ এপিএস আলমগীর রোববার (২৩ মে) সকাল সাড়ে ১১টায় আকবরশাহ থানাধীন পাঞ্জাবী লেন পাহাড়তলী গালর্স স্কুল এন্ড কলেজে ৬তলা ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে পাহাড়তলীর ঐতিহ্যবাহী স্কুলটির ৬ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ ৪ মাস পূর্বে শুরু করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আলিফ শাদাফ ট্রেডিং। ৪ মাসে ভবনটির নির্মাণ কাজ প্রায় ৫০ শতাংশ সম্পন্ন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় এসে এমপির পিএস কর্তৃক ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়ায় এলাকায় নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে।

অভিযোগের সত্যতা জানতে ঘটনাস্থলে গিয়ে পাওয়া যায় লেবার সর্দার জহিরুল ইসলামকে। তিনি বলেন, ‘শ্রমিকরা প্রতিদিনের মতে কাজ করছিল। হঠাৎ এপিএস আলমগীর এসেই অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে শ্রমিকদের কাজ বন্ধ রাখতে বলেন।’

আলিফ শাদাফ ট্রেডিং এর সত্ত্বাধিকারী এহসান চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমপি সাহেবের সাথে আমাকে দেখা করার কথা এপিএস আলমগীর জানান। কিন্তু তখন আমি দেশের বাইরে চলে যাওয়ায় দেখা করা সম্ভব হয়নি। তবে দেশে ফিরেই গত বৃহস্পতিবার (২০ মে) এমপি মহোদয়ের সাথে দেখা করার জন্য যাই। কিন্তু তিনি জরুরি কাজে ব্যস্ত রয়েছেন বলে দেখা হবে না জানানো হলে আমি চলে আসি।’

এহসান চৌধুরী আরও বলেন, ‘স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমাকে বিষয়টি সুরাহা না করে কাজ করতে নিষেধ করায় শুক্র ও শনিবার কাজ বন্ধ রাখি। এরপর রোববার কাজ শুরু করতে গেলে এপিএস স্বশরীরে এসে কাজ বন্ধ করে দেন।’

অভিযোগের বিষয়ে এপিএস আলমগীরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমপি সাহেব তদবীর করে ৬তলা ভবন নির্মাণের অনুমতি করিয়ে আনেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে যে কোন কাজ এভাবে করিয়ে আনলে তা এমপির মাধ্যমে উদ্বোধন করার। কিন্তু ঠিকাদার উদ্বোধন না করিয়ে ভবনের কাজ ৩লা পর্যন্ত নির্মাণ করে ফেলেন। তাকে বারবার এমপি স্যারের সাথে দেখা করতে বলার পরেও তিনি করেননি।’

স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফজলুল করিম জানান, ‘এভাবে স্কুলের কাজ বন্ধ করার বিষয়টি স্কুল কমিটির সভাপতি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমকে অবহিত করি। খবর পেয়ে তিনি এসে ঠিকাদারকে কাজ চালিয়ে যেতে অনুরোধ করে পুনরায় কাজ শুরু করেন।’

স্কুল কমিটির সভাপতি ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম বলেন, ‘কাজ বন্ধ করার বিষয়টি শিক্ষক ও এলাকাবাসী আমাকে অবহিত করলে আমি দ্রুত গিয়ে কাজ শুরু করতে বলি এবং এমপির মহোদয়ের সাথে আমি কথা বলবো বলে জানাই। কারন এলাকার মানুষ মনে করেছে চাঁদা আদায়ের কারণেই কাজ বন্ধ করা হয়েছে, এতে একটি ভুল ম্যাসেজ জনগণের কাছে যাচ্ছে।’

উদ্বোধনের বিষয়ে এপিএস আলমগীরের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি এমন নয়, উদ্বোধন করার জন্য এমপি মহোদয় সময় দিয়েছিলেন, সে হিসেবে উদ্বোধনের তারিখ অনুয়ায়ী অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয়। কিন্তু তিনি সে তারিখে উপস্থিত হতে পারেননি।’

কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!