এন্ড্রু কিশোরের জীবনের গল্প আর বাকি নেই

সর্বোচ্চ এক বছর বাঁচবেন— বলেছিলেন ডাক্তাররা

সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা আগেই বলে দিয়েছিলেন এক মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছর বাঁচবেন তিনি। একথা জেনে তার আর বিদেশে চিকিৎসা নিতে মন চায়নি। নিজের দেশের মাটিতেই শেষ নিঃশ্বাসটি ছাড়বেন— এমন আকুতি নিয়েই সিঙ্গাপুর থেকে চলে এসেছিলেন রীতিমতো জেদ করে। সেই আশা পূর্ণ হল অবশেষে। দেশের মাটিতেই শেষ নিঃশ্বাসটি ছেড়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন বাংলাদেশের কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর।

‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’— অসুস্থ শরীর নিয়ে চোখের জল ফেলে গানটি গেয়ে শুনিয়েছিলেন মাত্র কিছুদিন আগে। গানের কথার মতোই এখন আর তার জীবনের আর কোনো গল্প বলা বাকি নেই। সবই ফুরিয়ে গেল সোমবার (৬ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টা ১৩ মিনিটে।

মৃত্যুকালে কিংবদন্তী এই সঙ্গীতশিল্পীর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর তিনি রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন। যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিলেন, মায়ের পাশেই যেন তাকে সমাহিত করা হয়। সেখানেই সমাহিত করার প্রস্তুতি চলছে এখন।

শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ার পর এন্ড্রু কিশোর টানা ৯ মাস সিঙ্গাপুরে ক্যানসারে চিকিৎসাধীন থেকে গত ১১ জুন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে দেশে ফেরেন। তখন থেকেই রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন ক্যানসারে আক্রান্ত এই শিল্পী। শিল্পীর দুলাভাই ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডা. প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে ছিলেন তিনি।

এর আগে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, এক মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছর বাঁচবেন এই সঙ্গীতশিল্পী। একথা জেনে দেশে ফিরে এন্ড্রু কিশোর নিজ সিদ্ধান্তে চলে যান জন্মশহর রাজশাহীতে।

অসুস্থ অবস্থায় ২০১৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়েছিলেন এই নন্দিত গায়ক। সেখানে গিয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর তার শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক লিম সুন থাইয়ের অধীনে ছিলেন তিনি। চলে টানা কয়েকমাসের কেমোথেরাপি।

‘প্লেব্যাক সম্রাট’ এন্ড্রু কিশোরের চিরসবুজ কণ্ঠ উপহার দিয়েছে অসংখ্য জনপ্রিয় রোমান্টিক গান। বাংলা চলচ্চিত্রের গানে অবদানের জন্য তিনি আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন। এন্ড্রু কিশোরের চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রে। সেখানে তিনি ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তাঁর কেউ’ গানে কণ্ঠ দেন। তার রেকর্ডকৃত দ্বিতীয় গান বাদল রহমান পরিচালিত ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ চলচ্চিত্রের ‘ধুম ধাড়াক্কা’। তবে এ জে মিন্টু পরিচালিত ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রতিজ্ঞা’ চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গাওয়া গান প্রথম জনপ্রিয়তা লাভ করে।

সবচেয়ে জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প, হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি, আমার বুকের মধ্যিখানে, আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান, ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা, সবাই তো ভালোবাসা চায় প্রভৃতি।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!