এনআইডি জালিয়াতিকাণ্ডে ৪ ডাটা এন্ট্রি অপারেটর গ্রেপ্তার
এনআইডি জালিয়াতির ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের আরও চার ডাটা এন্ট্রি অপারেটরকে গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রামের কাউন্টার টেরোরিজম (সিটি) ইউনিট। রোববার সকাল থেকে দামপাড়াস্থ নিজেদের কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয় ইসি কর্মকর্তা পল্লবী চাকমার দায়ের করা মামলায়।
তবে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি স্বীকার না করলেও চট্টগ্রামের কাউন্টার টেরোরিজম (সিটি) ইউনিটের প্রধান ডিসি মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘স্পেসিফিক কয়জন গ্রেপ্তার সেটা বলতে পারব না। তবে আইও (তদন্ত কর্মকর্তা) বেশ কয়েকজনকে তদন্তের স্বার্থে নিজ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।’
এদিকে ইসি কর্মী জয়নাল আবেদীনের আদালতে দেওয়া জবানবন্দীতে ইসির কর্মকর্তাসহ ১৫ জনের নাম প্রকাশ পেয়েছ। তার মধ্যে মোস্তফাসহ আরও তিনজন ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে। নতুন করে ইসির হয়ে ডাটা এন্ট্রিকারী চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তাদের বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দেওয়া জবানবন্দিতে জয়নাল এনআইডি জালিয়াতির সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামের নির্বাচন অফিসের বেশ কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এই চক্রের অনেকের নাম প্রকাশ করেছেন। অন্তত ১৫ জনের নামের এই তালিকায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের নির্বাচন কার্যালয়ের কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তা, স্থায়ী ও আউটসোর্সিংয়ের ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া কয়েকজন কর্মচারী ও সাবেক কয়েকজন কর্মীর নামও আছে। ইতোমধ্যে ১৫ জনের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তাদের সবাই থানা পর্যায়ের কর্মকর্তার নিচের র্যাংকের কর্মকর্তা বলে জানা গেছে। বাকি ১১ জনের মধ্যে বেশ কয়েকজন কাউন্টার টেরোরিজমের নজরদারিতে রয়েছে।
এর আগে গ্রেপ্তারের পর পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জয়নাল জানিয়েছিলেন, নির্বাচন কমিশন চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীন ২ দিনের জন্য কোতোয়ালী থানার দেওয়ানবাজার সাব-এরিয়া এলাকার আমেনা মঞ্জিলের ষষ্ঠ তলার একটি ফ্ল্যাটেই রীতিমতো অফিসকে নিয়ে আসতেন। সেই ফ্ল্যাটে নির্বাচন কমিশনের অফিস থেকে ডিএসএলআর ক্যামেরা, ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানার, সিগনেচার প্যাডও আনতেন। সপ্তাহের সরকারি বন্ধের ২ দিন শুক্রবার ও শনিবারসহ বন্ধের দিনগুলোতে নিজ ফ্ল্যাটে বসে জাতীয় পরিচয়পত্রের যাবতীয় প্রাথমিক কার্যক্রম (ডাটা ক্রিয়েট) সম্পন্ন করতেন।
জয়নাল এই দায়িত্ব পালন শেষে সব তথ্য ঢাকার নির্বাচন কমিশন অফিসের এনআইডি শাখায় কর্মরত সাগরের কাছে মেইলে পাঠিয়ে দিতেন। তারপর অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের ব্যবহৃত ল্যাপটপ সংগ্রহ করে নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে তথ্য আপলোডসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতেন সাগর। এরপর জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রিন্ট কপি এসএ পরিবহনের (কুরিয়ার) মাধ্যমে চট্টগ্রামে জয়নালের কাছে পাঠাতেন সাগর।
আর গ্রাহক সংগ্রহ ও পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করতেন সত্য সুন্দর দে, বিজয় দাশ ও সীমা দাশ। তারা চট্টগ্রাম, ঢাকা, কক্সবাজারের বিভিন্ন লোকজনের মাধ্যমে দেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে প্রত্যেকটি এনআইডি কার্ডের জন্য ৫০-৬০ হাজার টাকা আদায় করতেন।
এডি/সিপি