‘এটাই মনে হয় শেষ সিলিন্ডার’— রোগীকে সত্যটা জানিয়ে চাকরিহারা ওয়ার্ডবয়

অক্সিজেন সংকটে চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল হাসপাতাল

সকালে ওয়ার্ডবয় এসে শ্বাসকষ্টে থাকা রোগীকে জানালেন— ‘এটাই বোধ হয় শেষ সিলিন্ডার।’ একথা জানার পর সেই ওয়ার্ডবয়কে সাময়িক বরখাস্ত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানালো অক্সিজেনের কোনো ‘সংকট’ নেই। অথচ সেই হাসপাতালে ঠিকই অক্সিজেন না পেয়ে সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন ওই রোগীর কন্যা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে মায়ের জন্য অক্সিজেন খুঁজছিলেন।

শনিবার (১১ জুলাই) চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (সিআইইউসি) আইসোলেশন ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, শনিবার চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় অবস্থিত চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশনে ওয়ার্ডে অক্সিজেন সংকট দেখা দেয়। সেই ওয়ার্ডে ভর্তি আছে ৩০-৪০ জন রোগী। ওয়ার্ডের শ্বাসকষ্টে থাকা এক রোগীর অক্সিজেন সিলিন্ডার শেষ হলে সেটি পরিবর্তন করে নতুন আরেকটি দেওয়ার সময় ওয়ার্ডবয় রোগীকে হাসপাতালে সিলিন্ডার সংকটের কথা জানান। ‘এটাই মনে হয় শেষ সিলিন্ডার’— রোগীকে এ কথা জানানোর পরই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ক্ষুব্ধ হয়ে সাময়িক বরখাস্ত করে সেই ওয়ার্ডবয় হারুনর রশীদকে।

ওয়ার্ডবয়কে বরখাস্ত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন সিলিন্ডারের রিজার্ভ রয়েছে। অথচ অক্সিজেন না পেয়ে ওই সন্ধ্যাতেই ফেসবুকে শাহিন সুমা নামের আইডি থেকে পোস্ট দিয়ে খোঁজা হচ্ছিল অক্সিজেনের সিলিন্ডার। ওই আইডি থেকে লেখা হয়— ‘চট্টগ্রামে অক্সিজেন রিফিল করেন কারা প্লিজ হেল্প। আম্মু ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেলে এডমিট। এখানে অক্সিজেন শর্ট।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র সহকারী পরিচালক ডা. আব্দুল রাজ্জাক খানের সাথে কথা বললে তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আসলে সকালে অক্সিজেন সিলিন্ডার শেষ জানিয়ে রোগীকে একটা ভুল ইনফরমেশন দেওয়া হয়েছিল। আমাদের তো অক্সিজেন সিলিন্ডার শেষ হওয়ার আগেই সিলিন্ডার এনে রিজার্ভ রাখা হয়। কারণ আইসোলেশন ওয়ার্ডে ৩০-৪০ জন রোগীকে সব সময়ই অক্সিজেন সাপ্লাই দিতে হয়। এছাড়া একজন ওয়ার্ডবয় তো জানবে না রিজার্ভ সিলিন্ডার কোথায় থাকে।’

ওয়ার্ড বয়কে বরখাস্ত করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ সময়ে এমন একটা সেনসিটিভ বিষয় নিয়ে রোগীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য ওয়ার্ডবয় হারুনর রশীদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সে অনেক স্যরি বলেছে। কিন্তু এমন সেনসিটিভ বিষয় নিয়ে বিভ্রান্ত করা তো ‘স্যরি’ দিয়ে সমাধান হয় না। সিলিন্ডার শেষ বা কোথাও রিজার্ভ আছে কিনা— এটা তার সিনিয়রকে জানাতে পারত। তার তো রোগীকে বলা উচিত হয়নি। যে রোগীকে বলেছে তিনি শ্বাসকষ্টের রোগী ছিলেন। সিলিন্ডার নেই সে চিন্তায় উনি আরো অসুস্থ হয়ে যেতে পারতেন। এজন্য আমরা সাময়িক বরখাস্ত করেছি তাকে। আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ সিলিন্ডার সরবরাহ আছে।’

আরএ/এসএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!