এখনো থমথমে শালবাগান রোহিঙ্গা শিবির, হচ্ছে তিনটি পুলিশ ক্যাম্প

কক্সবাজারের টেকনাফ হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুরা শালবাগান শরণার্থী শিবির এলাকায় ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের’ গুলিতে যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক হত্যার ঘটনায় এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজমান থাকায় ওই ক্যাম্পে নিরাপত্তাজনিত কারণে দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলো কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। এমনকি গত ২২ আগস্ট প্রত্যাবাসন আটকে যাওয়ার পরেও রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ অব্যাহত রাখার কথা বলা হলেও তা শুক্রবার (৩০ আগস্ট) পর্যন্ত শুরু করা যায়নি।

এদিকে ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের পাচঁটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নতুন করে তিনটি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
তার ধারাবাহিকতায় ২৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসাইনের নেতৃত্বে একটি টিম ওইসব রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, ‘টেকনাফের হ্নীলা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সম্ভাব্য বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে এবং নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে পাঁচটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তিনটি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। টেকনাফের জাদিমুরা, শালবাগান, নয়াপাড়া, আলীখালী ও লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় নতুন পুলিশ ক্যাম্পগুলো স্থাপন করার জন্য জায়গা নির্ধারনের কাজ চলছে।

এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের প্রতিনিধি ও টেকনাফের জাদিমুরা শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ মোহাম্মদ খালেদ হোসেন, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) কক্সবাজার সিনিয়র লিয়াজো অফিসার মোহাম্মদ বায়েজিদ, টেকনাফ মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এবিএমএস দোহাসহ অন্যরা।

পরে পুলিশ সুপার টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুরা বাসিন্দা ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মো. ওমর ফারুক হত্যার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গেও আলাপ করেন। এ সময় পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ওমর ফারুক হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি পুলিশ খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। ইতোমধ্যে এ মামলার তিন আসামি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য কঠোর অবস্থানে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত এক কর্মকর্তা জানান, গত ২৩ আগস্ট থেকে এখনো পর্যন্ত এখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিভিন্ন সংস্থায় কর্মরত লোকজন ক্যাম্পে ঢুকতেই ভয় পাচ্ছে।

টেকনাফ হ্নীলার স্থানীয় সাংবাদিক হুমায়ুন রশিদ জানান, হ্নীলা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাতে যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক নিহত হওয়ার পর থেকে শালবাগান শরণার্থী শিবিরসহ আশপাশের এলাকার পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি, যে কারণে পরিস্থিতি এখনো থমথমে। এসব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান কঠোর করা না হলে পরিস্থিতি অবনতির দিকেও যেতে পারে।

স্থানীয়দের অভিযোগ টেকনাফের জাদিমুরা, শালবাগান, লেদা, নয়াপাড়া ও আলীখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো দিন দিন সন্ত্রাসের অভয়ারাণ্যে পরিণত হচ্ছে। এসব ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা আস্তানা গড়ে নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ক্যাম্পগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযান পরিচালনা জরুরি। এছাড়াও রোহিঙ্গাদের ব্যবহৃত অবৈধ সীম বন্ধের দাবি জানান স্থানীয়রা।

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানান, ‘স্থানীয়দের জন্য এসব রোহিঙ্গারা এখন বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই নানা অপরাধ ঠেকানোর পাশাপাশি স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘাত এড়াতে ক্যাম্পগুলোর চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ খুবেই জরুরি।

শরণার্থী ত্রাণ, প্রত্যাবাসন কমিশনারের প্রতিনিধি ও টেকনাফের জাদিমুরা শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ মোহাম্মদ খালেদ হোসেন জানান, টেকনাফের ক্যাম্পগুলোর পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এছাড়াও রোহিঙ্গা শিবিরে নিরাপত্তা জোরদারের প্রস্তুতি চলছে।

উল্লেখ্য, গত ২২ আগস্ট রাতে টেকনাফের জাদিমুরা এলাকার বাড়ির সামনে থেকে স্থানীয় ওযার্ড যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুককে তুলে নিয়ে গুলিকরে হত্যা করে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন বিক্ষুব্ধ স্থানীয় জনগোষ্ঠী বিক্ষোভ করে এবং জাদিমুরা রোহিঙ্গা শিবিরে কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার অফিসে ভাংচুর চালায়। এরপর থেকে এখনো সেখানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!