এক মাসের ব্যবধানে বাড়লো চাল চিনির দাম

এক মাসের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে, চিনির দামও অস্থির। চাল, চিনি দুইটিই সর্বসাধারণের নিত্য প্রয়োজনীয়। কিন্তু বার বার দাম বাড়ায় স্বস্তিতে নেই ক্রেতা সাধারণ। চট্টগ্রামের বৃহত্তর পাইকারি বাজারে গিয়ে এর তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। চিনির দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে জানা গেছে, ডিও অনুমোদন দিয়ে মাল খালাস না করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা। আর চালের দামের ক্ষেত্রে মিল মালিকের কারসাজি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সংকটের কথা বলে বাজারে চিনি ছাড়ছেন না মিলমালিকের এজেন্টরা, কিন্তু নগদে উচ্চদামে ব্যবসায়ীদের চিনি সরবরাহ করাতে বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

এদিকে, গত সপ্তাহে চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় সিটি গ্রুপের চিনি প্রতি মণ ২ হাজার ২৪৫ টাকা, যা প্রতি কেজি ৬০.১৫ টাকা, মেঘনা গ্রুপের চিনি প্রতি মণ ২ হাজার ২৩০ টাকা, যা প্রতি কেজি ৫৯.৭৫ টাকা ও এস. আলম গ্রুপের চিনি প্রতি মণ ২ হাজার ২১০ টাকা, যা প্রতিকেজি ৫৯.২১ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু গত বুধবারে তা ৭০-৮০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয় ব্যবসায়ীরা। সেখানে সিটি গ্রুপের চিনি বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৩৭০ টাকা, মেঘনা ২ হাজার ৩৬৫ টাকা এবং এস আলম ২ হাজার ৩৮০ টাকায় বিক্রি করা হয়।

এদিকে, গত দুই সপ্তাহে সব ধরনের চালের দাম বস্তায় ১০০-১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। আড়তদাররা জানান, চাল রপ্তানির সরকারি সিদ্ধান্তের পর থেকে উত্তরবঙ্গে মোকামগুলোতে চালের দাম বেড়ে যায়। এছাড়া চট্টগ্রামের বাজারে চালের সরবরাহও কমে যায়। এর আগে সরকার বাজারদরের তুলনায় বেশি দামে ধান-চাল কেনার সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে প্রথম দফায় চালের দাম বাড়ে। সেই সময় বস্তায় সর্বোচ্চ ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। তবে চিনিগুড়া চালের দাম ২ দফাতে বেড়েছে ১ হাজার টাকা।

চাক্তাইয়ের চালপট্টি ও পাহাড়তলী পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহে পাইকারিতে নাজিরশাইল চাল অর্ধ-সিদ্ধ বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা বেড়ে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ টাকায়। এছাড়া জিরাশাইল সিদ্ধ ১৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪৫০ টাকা, মিনিকেট সিদ্ধ চাল ১০০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৮০০ টাকা এবং স্বর্ণা সিদ্ধ বস্তা প্রতি ৫০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫৫০ টাকায়। অন্যদিকে মিনিকেট আতপ বস্তায় ১৫০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৯৫০ টাকা, কাটারিভোগ আতপের দাম গত দুই সপ্তাহে অপরিবর্তিত রয়েছে। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬৫০ টাকা, পাইজাম সিদ্ধ ১০০ টাকা বেড়ে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকা। এছাড়া দিনাজপুরী পাইজাম ১০০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৮০০ টাকা, পুরাতন চিনিগুড়া চাল ৫০০ টাকা বেড়ে ৫ হাজার ৫০০ টাকা এবং মোটা সিদ্ধ চাল ১০০ টাকা বেড়ে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকায়।

চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বলেন, ধানের দাম বাড়ার কারণেই মূলত চালের দাম বেড়েছে। পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএম নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘চাল রপ্তানিতে ১৫ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণার পর পর চালের দাম বেড়ে যায়। ফলে কুষ্টিয়া, নওগাঁ, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মোকামগুলোতে চালের সরবরাহ কমে যায়।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগির আহমদ বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্তের উপরে দাম উঠা-নামা করছে বিভিন্ন পণ্যের দাম। ব্যবসায়ীরা এসবের মধ্যে তেমন জড়িত না । সরকার চাইলে সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে।’

বছরের শুরুতে রপ্তানির অনুমোদন দেওয়ার পর চালের দাম এক দফা বেড়েছিল। গত ৩১ জানুয়ারি চালের রপ্তানি মূল্যের ওপরে ১৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার পর দাম আবারও বাড়তে শুরু করে। চলতি সপ্তাহে চালের দাম আবারও আরেক দফা বেড়েছে। কুষ্টিয়া, নওগাঁ ও দিনাজপুরে ধান-চালের দাম পাইকারি বাজারে প্রতি সপ্তাহে বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে চাল রপ্তানির ব্যাপারে আপত্তি তোলা হয়েছে। তা আমলে নিয়ে আপাতত কোনো প্রতিষ্ঠানকে চাল রপ্তানির অনুমোদন দিচ্ছে না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

চাল রপ্তানি অনুমোদন না দেওয়ার কারণ হিসেবে সরকারের নীতি নির্ধারক মহল থেকে মনে করা হচ্ছে, রপ্তানি শুরু হলে চালের দাম অনেক বেশি বেড়ে যেতে পারে। এতে দাম হাতের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ারও ঝুঁকি আছে। বিশেষ করে দেশে উৎপাদিত মোটা চালের বড় অংশ ইতিমধ্যে খাদ্য অধিদপ্তর থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। আর রপ্তানির অনুমতি নিতে আসা প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত সরু ও সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমোদন চেয়েছে। এমনিতেই বাজারে গত জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে সরু চালের দাম বাড়ছিল। রপ্তানির অনুমোদন দেওয়ার পর সরু চালের দাম কেজিতে হঠাৎ করে ৩-৪ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়।

এএস/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!