এক ‘ইনজেকশন’ দিতেই চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালে যুবলীগ নেতা মৃত্যুর কোলে

মৃত্যুর পর সমঝোতার প্রস্তাব দেয় কর্তৃপক্ষ, পরে অস্বীকার

চট্টগ্রাম নগরীর ম্যাক্স হাসপাতালে আবারও ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে রোগী মারা যাওয়ার জোরালো অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) শারীরিক জটিলতা নিয়ে ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন রিংকু চৌধুরী। একদিন পর একটি ইনজেকশন নেওয়ার পর হঠাৎই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। রিংকু হাটহাজারীর চিকনদন্ডী ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা।

রিংকু চৌধুরী চট্টগ্রামের হাটহাজারীর আমান বাজার যুগীরহাটের জান আলী চৌধুরী বাড়ির ইসমাঈল চৌধুরীর একমাত্র সন্তান। রিংকু চিকনদন্ডী ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা।

মৃত রিংকুর মামা আব্বাস রশিদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, ‘আমার ভাগ্নে রিংকুকে ভারত থেকে চিকিৎসা করিয়ে আনার পর সে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়। গতকাল হঠাৎ রিংকু বলে, তার পা অবশ লাগছে। শরীর ভালো লাগছে না। সাথে সাথে আমরা তাকে ম্যাক্স হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করাই। হাসপাতালের সাত তলায় ৮০৪ নং কেবিনে রোগীকে রাখার পর ডিউটি ডাক্তাররা এসে দেখে যান। রোগীর পক্ষ থেকে আমরা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে আনতে বললে ডিউটি ডাক্তারারা আসবেন-আসছেন বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন।’

তিনি বলেন, ‘বুধবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে রিংকু সকালের নাস্তা খেয়ে সবার সাথে হাসিমুখে কথাও বলেছে। তবে তার ঘুম হচ্ছিল না। ডাক্তার ঘুমের ওষুধ ভাইয়ে দেয় রিংকুকে। এরপর এক নার্স এসে রিংকুকে একটা ইনজেকশন পুশ করেন। সাথে সাথে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন রিংকু।’

রিংকুর মামা আরও জানান, ‘আমরা বিষয়টি হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার রঞ্জন দাশ গুপ্তকে জানালে তারা আমাদের সাথে সমঝোতার চেষ্টা করতে থাকেন। আমাদের জানানো হয়, দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে। পুলিশকে খবর দেওয়া হবে।’

রিংকুর মামা আব্বাস রশিদ জানান, ‘ঘটনার পরপরই ডিউটি ডাক্তাররা পালিয়ে যান। জিএমের পক্ষ থেকে আমাদের গাড়ি করে রোগীকে বাড়িতে পৌছে দিয়ে যায়। তবে হাসপাতাল থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের কথা বলা হলেও আর যোগাযোগ করেনি।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে ম্যাক্স হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) রঞ্জন প্রসাদ দাশ গুপ্ত চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রোগী রিংকু চৌধুরী ভারতের ভেলোর থেকে ওপেন হার্ট সার্জারি করে এসেছিলেন। গতকাল তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর আমরা ভেলোরের ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চিকিৎসা দিচ্ছিলাম। কিন্তু রোগীর প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। সকালে প্রেসার বেড়ে গেলে তাকে আমরা ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) ভর্তি করাই। সেখানে রোগী মারা যায়।’

ভুল চিকিৎসায় মারা যাওয়া রিংকুর জানাজা।
ভুল চিকিৎসায় মারা যাওয়া রিংকুর জানাজা।

তিনি দাবি করেন, ‘আমরা রোগীকে এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন দিয়েছি প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী। রাতেই চট্টগ্রামের সেরা ওপেন হার্ট সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. ফজলে মারুফকে কল করা হয়। কিন্তু উনি অসুস্থ থাকায় আসতে পারেননি।’

ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে রোগী হয়রানি ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে প্রায়ই। এরকম ভুল চিকিৎসায় চট্টগ্রামের সাংবাদিক রুবেল খানের তিন বছর বয়সী শিশুকন্যার মৃত্যুর পর দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। এমনকি করোনাকালে ম্যাক্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের হাসপাতালে কর্মরত এক চিকিৎসককেও চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।

আইএমই/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!