একবছরে চট্টগ্রাম দিয়ে ঢুকেছে সোয়া ৫ লাখ কেজি হাইড্রোজেন পার অক্সাইড

৩ বছরে ১৩ কোটি কেজি গেছে বিদেশে

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত একবছরে ৫ লাখ ১৯ হাজার কেজি বিপজ্জনক রাসায়নিক হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ঢুকেছে দেশের ভেতরে। এই পরিমাণ রাসায়নিক বিদেশ থেকে আমদানি করেছে দেশের ১৩টি প্রতিষ্ঠান। হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড খাদ্য উৎপাদন, বেভারেজ কারখানা, তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহার করা হয়।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের পর সেখানে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ছিল বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস। একই সঙ্গে নতুন করে আলোচনায় আসে রাসায়নিক যৌগ— হাইড্রোজেন পার অক্সাইড।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নথি অনুসারে বাংলাদেশে গত একবছরে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড করেছে ১৩টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে প্রাণ ডেইরি লিমিটেড সর্বাধিক ১ লাখ ৯২ হাজার কেজি বা ১৯২ মেট্রিক টন হাইড্রোজেন পার অক্সাইড আমদানি করেছে গত একবছরে। ১ লাখ ৩৪ হাজার ৪০০ কেজি বা ১৩৪.৪০০ মেট্রিক টন আমদানি করে এরপরই আছে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি। পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠান জাবের এন্ড জোবায়ের ফেব্রিক্স আমদানি করেছে ১ লাখ ১২ হাজার কেজি বা ১১২ মেট্রিক টন হাইড্রোজেন পার অক্সাইড।

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড আমদানিকারক অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে— এমেক্স নিটিং অ্যান্ড ডাইং ইন্ড্রাস্ট্রিজ (২১ হাজার ৬০০ কেজি), লাবিব ডাইং মিলস লিমিটেড (২০ হাজার ৩৭৫ কেজি), মিয়ামি অ্যাসোসিয়েটস বিডি (১৫ হাজার ৯১৫ কেজি), আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড (১৪ হাজার ৩৮৪ কেজি), নাইস কটন লিমিটেড (৫ হাজার ৬২৫ কেজি), ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মাসিউটিক্যালস (৮৬০ কেজি), ঢাকা গার্মেন্টস অ্যান্ড ওয়াশিং লিমিটেড (৫০০ কেজি), এসকায়েফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড (৪৮০ কেজি), জাকিয়া এন্টারপ্রাইজ (৩৯৯ কেজি), এসিআই হেলথ কেয়ার লিমিটেড (৬.৬৬ কেজি)।

আমদানি-রপ্তানি কাজে প্রাণ গ্রুপের নিয়োজিত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামসুল আলম বলেন, ‘রাসায়নিক পণ্য আমদানির পর প্রাণ গ্রুপের বিভিন্ন কারখানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আসলে কারখানায় যা প্রয়োজন, তা ব্যবহারের জন্য রাখা হয়। এজন্য প্রয়োজনীয় নিয়ম মানা হয়।’

এদিকে আমদানির পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও হয় হাইড্রোজেন পার অক্সাইড। এই রাসায়নিকটি রপ্তানিতে সরকার ভর্তুকিও দেয় ১০ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ওই কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠান আল রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্সে উৎপাদিত যেসব হাইড্রোজেন পার অক্সাইড রাখা ছিল, সেগুলো পাকিস্তানে রপ্তানি করার জন্য রাখা ছিল।

হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড পোশাক খাতসহ বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহার করা হয়। যেসব দেশে পোশাক শিল্পকারখানা বেশি, সেখানেই মূলত রপ্তানি করে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড রপ্তানি করেছে ভারত, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামে। মোট ১৪টি দেশে রাসায়নিকটি রপ্তানি হয়।

বাংলাদেশে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হলো সামুদা কেমিক্যাল কমপ্লেক্স, তাসনিম কেমিক্যাল কমপ্লেক্স, এসএম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, এইচপি কেমিক্যালস লিমিটেড, ইনফেনিয়া কেমিক্যাল ও চট্টগ্রামের আল-রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্স। এর মধ্যে আল-রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্স ও বিএম কনটেইনার ডিপোর মালিক একই।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের বিস্ফোরণের ঘটনায় আলোচনায় এসেছে রাসায়নিক বস্তুটি। শনিবার (৪ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে আগুনের সুত্রপাত হয়। ঘটনার তিনদিন পরও জ্বলছে সেই ডিপো। আগুন নেভাতে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা একযোগে কাজ করছেন। বিএম কনটেইনার ডিপোর মালিকানা রয়েছে স্মার্ট গ্রুপের। গ্রুপটিরই অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘আল-রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্সে’ উৎপাদিত হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে তারা। এ রাসায়নিক যৌগটি যদি উত্তপ্ত করা হয়, তাহলে তাপীয় বিয়োজনে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড বিস্ফোরক হিসেবে আচরণ করে।

কাস্টমস কমিশনার ফখরুল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশের প্রত্যেক কারখানায় কোন না কোন কাজে এ রাসায়নিকটি ব্যবহার হচ্ছে। এটি যেমন আমদানি হয়, তেমনি রপ্তানিও হয়। আমাদের দেশের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রপ্তানি করে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড। গত তিন বছরে এ খাত থেকে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস ৪০৪ কোটি টাকা আয় করেছে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!