একবছরে উদ্ধার রেলওয়ের হাজার কোটি টাকার ভূমি

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মোট ভূমির পরিমাণ (৭ হাজার ৭০১ একর)। চট্টগ্রামে দলীয় পরিচয়ে বিভিন্ন প্রভাবশালী চক্র রেলওয়ের প্রায় ২১৫.১৮ একর ভূমি দখল করে। দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়ে হাজার কোটি টাকার ভূমি তাদের কুক্ষিগত ছিল। উদ্ধার অভিযান ব্যহত করতে হামলা ও এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব ভূমি দখলকারী চক্র। এভাবেই নানা কারণে মাঝপথে স্থগিত হয়ে যায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের উচ্ছেদ কার্যক্রম। ২০১৯ সালে (জুন-ডিসেম্বর) অভিযানে উদ্ধার হয়েছে হাজার কোটি টাকার রেলওয়ের ভূমি সম্পদ।

এ বিষয়ে রেলওয়ে সূত্র জানায়, ৬ জুন খুলশী রেলগেটের পূর্বে বিজিএমই ভবনের উত্তরে সড়কের উভয় পাশে ৩৫টি সেমিপাকা ঘর, ২২টি টিনশেড ঘর, ৩টি মোটর গ্যারেজসহ মোট ৬০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ১.০১ একর ভূমি উদ্ধার করা হয়েছে।

২০১৯ সালের রেলওয়ের ভূমি উদ্ধার
১০ জুন আমবাগান ফ্লোরাপাস রোড, ঝাউতলা রোড, মসজিদ রোড ৩ টি সেমিপাকা, ১৭টি টিনশেড ঘর, ৩টি দোকানসহ মোট ২৩টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে শূন্য দশমিক ২০ একর ভূমি উদ্ধার করা হয়। ১৯ জুন উচ্ছেদ করা হয় সোনাইমুড়ি স্টেশনের বাজার গেটের উভয় পাশে ৮৫টি স্থাপনা। ২৩ জুন ফৌজদারহাট রেলস্টেশনের পশ্চিমে ৩টি সেমিপাকা ৫টি টিনশেড ৮টি ঝুপড়িসহ মোট ১৬টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে শূন্য দশমিক ৯৯৫ একর ভূমি উদ্ধার করে।

৩ জুলাই খুলশী পরিবেশ অধিদপ্তর সংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে রেলওয়ের জমিতে অবৈধভাবে বসবাসকারী টিনশেড ঝুপড়ি মিলে ৭২টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। ৭ জুলাই উচ্ছেদ করা হয় পলিটেকনিক কলেজ সংলগ্ন রেলওয়ের মালিকানাধীন পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী ৬ অবৈধ স্থাপনা। একইভাবে ১৭ জুলাই লেকসিটি আবাসিক, ফয়’স লেক আবাসিক, ফিরোজশাহ ঝিল পাহাড়ের পাদদেশে ১০৫টি টিনশেড ও ঝুপড়ি এবং ৯ নভেম্বর হালিশহর এলাকায় ৩টি সেমিপাকা ৮টি টিনশেড ঘর উচ্ছেদ করে শূন্য দশমিক ৫০ একর ভূমি উদ্ধার করে রেলওয়ে।

২৩ নভেম্বর জাকির হোসেন রেলগেট সংলগ্ন রেললাইনের উভয়পাশে ৪টি সেমিপাকা, ১৮টি টিনশেডসহ মোট ২২টি স্থাপনা উচ্ছেদ করে শূন্য দশমিক ৩৩ একর ভূমি উদ্ধার করে রেলওয়ে। ৪ নভেম্বর সেগুনবাগান এলাকার রেলওয়ে কলোনি ও আশপাশের এলাকায় উদ্ধার করা হয় ৫১০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে মোট ৩.৫২ একর ভূমি।

৬ ও ৭ নভেম্বর আমবাগান রেলওয়ে কলোনি ও আশপাশ এলাকায় ২২৫০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে মোট ৯.৭৮ একর ভূমি উদ্ধার করা হয়। ১১ নভেম্বর সিআরবি জিএম বাংলো ও আশপাশ এলাকায় ৩৬৫টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে মোট ১.৯০ একর ভূমি উদ্ধার করে। ১৪ নভেম্বর রেলওয়ে কলোনি (ইঞ্জিনিয়ারিং,সিগন্যাল) আশপাশের এলাকায় ১০৬৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে মোট ৭.৫৪ ভূমি উদ্ধার করে।

৩০ ডিসেম্বর আকবরশাহ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৬০০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে মোট ৪.৯০ একর ভূমি উদ্ধার করা হয় রেলওয়ে। ৩১ ডিসেম্বর আকবরশাহ এলাকায় ১০০০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ৫.৭২ একর ভূমি উদ্ধার করা হয়।

রেলওয়ে বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবউল করিম বলেন, ‘অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে রেলওয়ের হাজার কোটি টাকার ভূমি উদ্ধার করে। ভবিষ্যতেও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হবে। ফেব্রুয়ারির ২ ও ৩ তারিখ ভেলয়ার দিঘীর পাড়ের অবশিষ্ট অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হবে। তবে উদ্ধারের পর তা যেন আবারো পুনঃদখল হয়ে না যায় সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া দরকার। এক্ষেত্রে উদ্ধার করা ভূমির দোকান, বাগান করার পর বেড়া দিলে পুনরায় দখল রোধ ও রেলওয়ের অর্থও আয় হবে।

উল্লেখ্য, পাহাড়তলী স্টেশনের ১৩ দশমিক ৭৪ একর ভেলুয়ার দীঘির পাড়ের তিনপাড় উচ্ছেদ হলেও দিঘীর দক্ষিণপাড় ও রেলওয়ে বিপণীকেন্দ্রের আশপাশের এলাকায় অবৈধ স্থাপনা থেকে গেছে।

সিএম/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!