একটি সিএনজিতে ৫ জন লোকসহ গরু তোলার জায়গা কোথায়— উঠেছে প্রশ্ন

মা-মেয়েকে নির্যাতনের ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি, আদালতে স্বপ্রণোদিত মামলা

কক্সবাজারের চকরিয়ায় গরু চুরির অপবাদ দিয়ে মা-মেয়েকে রশিতে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অপরদিকে চকরিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে একটি মামলা গ্রহণ করে চকরিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপারকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিবের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নেতৃত্বে জেলা প্রশাসন আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। দুই কমিটির সদস্যরা হারবাংয়ের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য শুনেছেন। পুলিশও ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ঘটনার বর্ণনা নিয়েছেন।

এদিকে সিএনজিচালিত ট্যাক্সিতে করে মা ও মেয়েসহ পাঁচজন মিলে গরু চুরি করার চেষ্টা করেছে— এমন অভিযোগে চকরিয়া থানায় মামলা হলেও প্রশ্ন উঠেছে— সিএনজিচালিত একটি ট্যাক্সিতে চালকসহ পাঁচজন মানুষের সাথে একটি আস্ত গরু কিভাবে তোলা সম্ভব এবং এটা আদৌ বাস্তবসম্মত কিনা— তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। চকরিয়া থানা পুলিশ ঘটনার দায় এড়াতে মা-মেয়েসহ অন্যদের কাছ থেকে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করছে— এমন অভিযোগও উঠেছে। চকরিয়া থানার বিতর্কিত ওসি হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে এর আগে ক্রসফায়ারে প্রবাসীসহ তিনজনকে ‘হত্যা’র অভিযোগে মামলা হয়েছে।

তবে বিষয়টিকে সরকার গুরুত্বসহকারে দেখছে জানিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় কোনো জনপ্রতিনিধির সম্পৃক্ততা পেলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। ঘটনা জানার সাথে সাথেই স্থানীয় সরকার বিভাগ কক্সবাজারের উপপরিচালককে (উপ-সচিব) প্রধান করে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তারা কাজ করছেন। তদন্ত প্রতিবেদন পেলেই ব্যবস্থা।’

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ সনেট জানান, মা-মেয়েকে নির্যাতনের ঘটনায় জেলা প্রশাসক কার্যালয় কক্সবাজার থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুটি কমিটিই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে চকরিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কাজী মো. মতিউল ইসলাম বলেন, ‘বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চকরিয়া কক্সবাজার স্বপ্রণোদিত হয়ে হারবাংয়ের ভাইরাল হওয়ায় ঘটনায় জনস্বার্থে একটি মামলা নিয়েছেন। সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দেশ পাওয়ার পর থানার ওসিকে সাথে নিয়ে ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলেছি। যথাসময়ে আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবো।’

এই ঘটনায় কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছে জানিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম হারবাং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে আছে। এই ঘটনায় আমরা বিব্রত। আমরা দলীয়ভাবে শোকজ লেটার ইস্যু করতেছি। দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ থেকে সরে রাজনীতি করলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। রাজনীতিতে আদর্শ চর্চা থাকলে এমন ঘটনা ঘটতো না। একজন নারী হিসেবে এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী হিসেবে আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্থানীয়রা মা-মেয়েসহ ওই পাঁচজনকে মারধর করার পর চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে তাদেরকে রশি দিয়ে বেঁধে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এনে নিজের চেয়ারের পাশে রক্ষিত বেতের লাঠি দিয়ে তাদের সমানে পেটান। পিটিয়ে ক্লান্ত হয়ে পুলিশের হারবাং তদন্তকেন্দ্রে ফোন করে পুলিশ এনে তাদের হাতে তুলে দেন। নিজের একজন লোক দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গরু চুরির মামলা দায়ের করান। তবে একটা সিএনজিতে পাঁচজন মানুষের সাথে কিভাবে গরুও পরিবহন করায় তার হিসেবে কেউ মিলাতে পারছেন না।

জানা গেছে, চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামের নির্যাতনে তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে মিরানুল পুলিশের হাতে তাদেরকে সোপর্দ করে নিজের কাছের লোক মাহবুবুল হককে দিয়ে মা-মেয়েসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করান। মামলায় গরু চুুরির অভিযোগ আনা হয়। শনিবার মা-মেয়েসহ পাঁচজনকে আদালতে সোপর্দ করলে আদালত তাদেরকে জেলহাজতে পাঠায়।

এদিকে এই ঘটনা চট্টগ্রাম প্রতিদিনে প্রচার হওয়ার পর সরকারের বিভিন্ন মহলে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম শিগগিরই ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন জানিয়ে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি স্থানীয় প্রশাসনকে দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।

এফএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!