একটি সহনশীল প্রজন্ম জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করবে

উগ্রবাদ বিরোধী ছাত্র সংলাপ সেমিনারে বক্তারা

‘সহনশীল প্রজন্ম তৈরির মাধ্যমে উগ্রবাদ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ’ বলে মন্তব্য করেছেন সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গীবাদ নিয়ে কাজ করা পুলিশ কর্মকর্তাগণ। শিক্ষার্থীদের উগ্রবাদ থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ পুলিশ নানামূখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে কর্মকর্তারা বলেন, ‘শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, মসজিদের ঈমামসহ সকল পেশার মানুষকে সাথে নিয়ে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট কাজ করছে। জঙ্গিবাদ এখন বৈশ্বিক সমস্যা। চলমান পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে উঠে আসা ‘মুক্তির পথে’ হাঁটছে পুলিশ।’

বুধবার (১৯ জুন) সকাল দশটায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে ‘উগ্রবাদ বিরোধী ছাত্র সংলাপ’ বিষয়ক সেমিনারে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম।

সিএমপির দক্ষিণ জোনের উপ-কমিশনার এস এম মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সিনিয়র সহকারী কমিশনার আতিকুর রহমান চৌধুরী।

সেমিনার সঞ্চালনা ও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আবদুল মান্নান, সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ মোহাং আবদুর রউফ।

চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, কাজেম আলী স্কুল এন্ড কলেজ ও মুসলিম এডুকেশন সোসাইটি (এমইএস) স্কুলের দুইশত শিক্ষার্থী ও শিক্ষক এই সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।

সেমিনারে গেস্ট অব অনার হিসেবে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর কার্ল ক্লার্ক। এ সময় তার সাথে চার সহকর্মী উপস্থিত ছিলেন যাদের দুইজন বাংলাদেশে আমেরিকান দূতাবাসে কাজ করছেন অপর দুইজন সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কাজ করতে ওয়াশিংটন থেকে বাংলাদেশ সফর করছেন।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কার্ল ক্লার্ক বলেন, বাংলাদেশ একটি সুন্দর সম্ভাবনার দেশ। জঙ্গীবাদ যেন এখানে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে সে লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র সবসময় বাংলাদেশের সাথে কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র জঙ্গিবাদমুক্ত পৃথিবী গড়তে সারা বিশ্বে কাজ করছে। আমি ৩৮ দেশে দায়িত্ব পালন করেছি। বাংলাদেশে দ্বিতীয় মেয়াদে দুই বছরের জন্য কাজ করছি। আর আগে চার বছর দায়িত্ব পালন করেছিলাম।

পুলিশ কর্মকর্তা আতিকুর রহমান চৌধুরী তার প্রবন্ধে স্বাধীনতার পরপর বামপন্থীদের উগ্রবাদ, আফগান ফেরত মুজাহিদদের উগ্রবাদ, রাজনীতিতে ধর্মের অনুপ্রবেশ এবং সর্বশেষ জেএমবি ও জেএমবি থেকে আইএস ভাবধারার উগ্রবাদের চারটি স্তর উল্লেখ করেন। প্রবন্ধে শিক্ষার্থীদের উগ্রবাদে প্রভাবিত হওয়ার কারণ হিসেবে প্রথমেই পরিবারের অসচেতনতাকে দায়ী করা হয়। তারপর বিক্রুটিং গ্রুপগুলোর কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

শুধু কী ইসলাম বা মুসলমানদের নিয়ে জঙ্গীবাদী সমস্যা কি না? প্রশ্নোত্তর পর্বে চট্টগ্রাম সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান বলেন, কোন ধর্মেই উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ নেই। ধর্মের নামে অপব্যাখ্যা দিয়ে উগ্রতা সৃষ্টি করা হয়।

বন্ধুদের মাঝে কাউকে জঙ্গীবাদে সম্পৃক্ত বুঝতে পারলে আমাদের করণীয় কী? এমন প্রশ্নের জবাবে এস এম মেহেদী হাসান বলেন, প্রথমেই শিক্ষকদের জানাবে। তারপর আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানাবে। পুলিশ নানামূখী তৎপরতায় তাদের সংশোধন করে পরিবারকে, সমাজকে বড় বিপর্যয় থেকে রক্ষা করবে।

সেমিনারে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. মঈনুল ইসলাম, কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা, কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিনসহ পুলিশ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।


এফএম/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!