একজোড়া তিতির ভাগ্য বদলে দিল সোহেলের

খামারটি শুরু হয়েছিল মাত্র একজোড়া তিতির পাখি দিয়ে। সেটি এখন ৮০০ তিতির পাখির একটি বিশাল খামার। আর রাঙ্গুনিয়ার বেকার যুবক ২২ বছর বয়সী সোহেল এখন হয়ে উঠেছেন সফল খামারি।

২০১৫ সালের প্রথম দিকে নিজের বাড়ির পাশে ছোট্ট একটি ঘরে তিতির পাখি পালন শুরু করেন। বছরখানেক পর থেকেই আসতে শুরু করে সফলতা। বর্তমানে রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ডেকিকাটা ছড়া এলাকায় তার বাবার ৪ শতক পাহাড়ি ভূমিতে ‘হাজি ইদ্রিস মাস্টার এগ্রো ফার্ম’ নামে গড়ে তুলেছেন তিতির পাখির খামার। সততা আর নিরলস পরিশ্রম দিয়ে সোহেল ঘুরিয়েছেন ভাগ্যের চাকা। একইসঙ্গে বদলে দিয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন বেকারের ভাগ্য।

সোহরাব হোসেন সোহেল চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার লালানগর ইউনিয়নের আকবর সিকদার পাড়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক ইদ্রিস আলীর ছেলে।

একজোড়া তিতির ভাগ্য বদলে দিল সোহেলের 1

সোহেল তার খামারে তিতির ছাড়াও পালন করছেন টার্কি ও হাইব্রিড কোয়েল ও কাদাকনাথ (চীনা মুরগি)। খামারে একদিন বয়সের বাচ্চা থেকে প্রাপ্তবয়স্ক তিতির পাখিও রয়েছে। যেগুলোর প্রতিটির ওজন প্রায় ৫-৬ কেজি ওপরে। খামারে উৎপাদিত ডিম দিয়ে নিজস্ব হ্যাচারিতেই বাচ্চা উৎপাদন করে তা বিভিন্ন খামারিদের কাছে বিক্রি করছেন তিনি।

সোহরাব হোসেন সোহেল বললেন, ‘চাকরির পেছনে ছুটতে গিয়ে অনেক সময় নষ্ট করেছি। ছোট-বড় অনেক ব্যবসা করেছি। কিন্তু সফলতা পাইনি। পরে নরসিংদী জেলা থেকে ১০টি তিতিরের বাচ্চা কিনে এনে বাড়ির পাশে ছোট্ট একটি ঘর তৈরি করে পালন শুরু করি। বাচ্চা আনলেও সব বাচ্চা বাঁচাতে পারিনি। সর্বশেষ একজোড়া তিতির ধরে রাখতে সক্ষম হই। ৬ মাস যেতে না যেতেই তিতির পাখিগুলো ডিম দিতে শুরু করে। এরপর ডিম ফুটিয়ে সেই এক জোড়া তিতির থেকে এখন আমি কয়েকশত পাখির মালিক। এখন আমার খামারে বাচ্চাসহ ৮০০ তিতির পাখি আছে।’

সোহেল বলেন, ‘তিতির ছাড়াও টার্কি, কোয়েল ও কাদাকনাথ মুরগি পালন করছি। পাখিগুলো প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ টাকার ডিম দেয়। বর্তমানে একদিনের বাচ্চা ২৫০ টাকা, ৮ দিনের বাচ্চা ৩০০ টাকা, ১৫ দিন থেকে এক মাস বয়সী বাচ্চা ৫০০ টাকা, ২ মাস বয়সী বাচ্চা ১ হাজার টাকা, ডিম প্রতি পিস ১০০ টাকা করে বিক্রি করছি।’

কাপ্তাই, রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, হাটহাজারী, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই, পটিয়া, ফটিকছড়ি উপজেলাসহ রাঙ্গামাটি, চট্টগ্রাম শহর, কক্সবাজার, নোয়াখালী, কুমিল্লা জেলা থেকেও তিতির ও তিতির বাচ্চা কিনতে ক্রেতারা আসেন বলে তিনি জানান।

তিনি আরও বলেন, ‘তিতির আসলে পাখি নয়, এটি চীনা মুরগি (তিথির)। তাই বনমোরগের মতো তিতির মুরগিও উড়তে পারে। তিতিরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব বেশি বলে তেমন রোগবালাই হয় না। ডিম থেকে বাচ্চা হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে তিতির ডিম দিতে শুরু করে। ৬ মাসে একটি পুরুষ তিতিরের ওজন হয় ৫ থেকে ৬ কেজি এবং স্ত্রী তিতিরের ওজন ৩ থেকে ৪ কেজি হয়। আমাদের দেশের অনুকূল আবহাওয়া ও পরিবেশে তিতির পাখি পালন অন্যান্য দেশের তুলনায় সহজ। তিতিরের খাবার নিয়েও কোনো সমস্যা হয় না। গম, ধান, দানাদার থেকে কলমির শাক, বাঁধাকপি বেশি পছন্দ করে ওরা। মাংস উৎপাদনের জন্য দানাদার খাবার দিতে হয়। তখন একটি তিতিরের ওজন হয় প্রায় ১৬ কেজি। তিতির বছরে ১১০ থেকে ১২০টি ডিম দেয়। তিতিরের দাম তুলনামূলক একটু বেশি। চর্বি কম হওয়ায় অন্যান্য পাখির তুলনায় মাংস খুবই সুস্বাদু।’

সোহেল এই তিতির পাখির খামারকে বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তোলার জন্য চীন থেকে একটি ইনকিউবেটর হ্যাচার ও একটি সেটার মেশিন আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। ইনকিউবেটরের মাধ্যমে ২৮ দিনেই ডিম ফোটানো যায়। তবে সরকারি আর্থিক সহায়তা কিংবা বেসরকারি কোনও ব্যাংকের ঋণ পেলে আরও বড় পরিসরে খামার গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে তার।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তফা কামাল বলেন, তিতির আমাদের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নতুন একটি প্রজাতি। তিতির চীনা মুরগি হলেও পাখি শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় এটিই প্রথম ও একমাত্র তিতির খামার। রোগ-বালাই ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এটি পালন করে সহজেই লাভবান হওয়া যায়। এ কারণে খামারিরা এখন এ ব্যবসার প্রতি ঝুঁকছেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে তিতির পালনে উৎসাহী করাসহ খামারিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান ডা. মোস্তফা কামাল।

এসএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!