ঋণখেলাপ/ ‘রাজার হালে’ই কারাগারে থাকছেন মোস্তফা গ্রুপের চেয়ারম্যান!

গ্রেপ্তার হেফাজতুর রহমান পেলেন প্রথম শ্রেণীর ডিভিশন

ঋণখেলাপের মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার চট্টগ্রামের শিল্পপতি মোস্তফা গ্রুপের চেয়ারম্যান হেফাজতুর রহমানকে কারাগারে প্রথম শ্রেণীর ডিভিশন দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার পর তাকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হলে এ ডিভিশন সুবিধা নিশ্চিত করে সরাসরি ওয়ার্ডে পাঠানো হয়।

এর আগে বুধবার (১৯ জুন) সন্ধ্যায় তাকে নগরীর আগ্রাবাদে মোস্তফা গ্রুপের অফিসের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করে ডবলমুরিং থানা পুলিশ। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংকের দায়ের করা চারটি মামলায় অর্থঋণ আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ছিল। ওই পরোয়ানামূলে তাকে গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার (২০ জুন) তাকে আদালতে নেওয়া হলে জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন মহানগর হাকিম মহিউদ্দিন মুরাদের আদালত।

আদালতের আদেশের পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয় হেফাজতুর রহমানেক। এর আগেই চট্টগ্রাম জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেনের কাছ থেকে প্রথম শ্রেণীর বন্দির ডিভিশন প্রাপ্তির আদেশের কপি আদায় করে নেন তিনি।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার নাশির উদ্দিন বলেন, ‘শিল্পপতি হেফাজতুর রহমানকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে কারাগারে আনা হয়। এ সময় তাকে প্রথম শ্রেণীর ডিভিশন দেওয়ার জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের একটি আদেশের কপি আমাদের হাতে আসে। আমরা কারাবিধি অনুযায়ী তাকে প্রথম শ্রেণীর ডিভিশন সুবিধা দিয়ে সরাসরি ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দিয়েছি।’

ডিভিশনপ্রাপ্তরা কী ধরনের সুবিধা পান?
জেল কোড অনুসারে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের কারাগারে ডিভিশন প্রদান করা হয়। এছাড়া আদালতের নির্দেশেও কাউকে কাউকে ডিভিশন দেওয়া হয়। জেল কোড অনুযায়ী তিন শ্রেণীর ডিভিশন দেওয়া হয়ে থাকে। ডিভিশন-১, ডিভিশন-২ এবং ডিভিশন-৩।

বিধি অনুসারে প্রথম শ্রেণীর ডিভিশন-প্রাপ্তদের প্রত্যেক বন্দির জন্য আলাদা রুম থাকে। খাট, টেবিল, চেয়ার, তোষক, বালিশ, তেল, চিরুনি, আয়না সবকিছুই থাকে। আর তার কাজকর্ম করে দেওয়ার জন্য আরেকজন বন্দিও দেয়া হয়। ছেলে বন্দির ক্ষেত্রে সাহায্যকারী হিসেবে ছেলে আর মেয়ে বন্দির জন্য একজন মেয়ে থাকবেন।

এছাড়া তিনি বইপত্র পাবেন এবং তিনটি দৈনিক পত্রিকা পাবেন। সাধারণ বন্দিদের চেয়ে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দির খাওয়ার মানও ভাল থাকে।ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দীদের জন্য টাকার পরিমাণটি বেশি থাকে। এ কারণে তারা চিকন চালের ভাত পান। সকালে রুটি, ডিম, কলা, ভাজি, বাটার, জ্যাম-জেলি চাইলে সেগুলোও দেওয়া হয়। দুপুরে ভাত-মাছ-মাংস তাদের সাথে কথা বলে ঠিক করা হয়। কিন্তু সাধারণ বন্দিদের ক্ষেত্রে এসব সুযোগ থাকে না।

জেল কোড: ডিভিশন পাওয়ার যোগ্য কারা?
জেল কোডের ৬১৭ নং বিধিতে বলা হয়েছে যে, সাজাপ্রাপ্ত বন্দী ডিভিশন ১, ২ ও ৩ এই তিনটি ডিভিশনে বিভক্ত হবে। এর মধ্যে নাগরিকত্ব নির্বিশেষে নিম্নোক্ত বন্দিরা ডিভিশন ১ প্রাপ্তির যোগ্য হবেন-
(ক) যারা ভাল চরিত্রের অধিকারী ও অনাভ্যাসগত অপরাধী।
(খ) সামাজিক মর্যাদা, শিক্ষা এবং অভ্যাসের কারণে যাদের জীবনযাপনের ধরন উচ্চমানের।
(গ) যারা নিম্নোক্ত অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত নয়- নৃশংসতা, নৈতিক স্খলন এবং ব্যক্তিগত প্রতিহিংসামূলক অপরাধ।মারাত্মক বা পূর্বপরিকল্পিত হিংস্রতা। সম্পত্তি সংক্রান্ত মারাত্মক অপরাধ। অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্যে বা অপরাধ সংঘটনের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিস্ফোরক আগ্নেয়াস্ত্র এবং অন্যান্য মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র সঙ্গে রাখা। উপরোক্ত অপরাধ সংগঠনের জন্য প্ররোচিত বা উত্তেজিত করা।

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!