উড়িরচরে কৃষকের ঘরে যুবলীগ নেতার হামলা, নারীসহ গুরুতর আহত ৮

চিকিৎসা নিতে গিয়েও চলেছে ফের হামলা

চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উড়িরচরে জায়গা-জমির বিরোধের জের ধরে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতার নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে নারীসহ ৮ জনকে গুরুতর আহত করা হয়েছে। শুধু তাই নয় বাড়িতে ঢুকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করার পর তাদের চিকিৎসা দেওয়া নিয়েও বাধাদানের অভিযোগ উঠেছে আলী আহমদ নামে ওই যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে। এই ঘটনার তিনদিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোন আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল নয়টার দিকে উড়িরচরের নিজাম নামে এক কৃষকের বাড়িতে এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিজাম ও নিজামের স্ত্রীসহ আটজন আহত হয়েছেন।

হামলায় আহত আটজন হলেন— নিজাম, নিজামের স্ত্রী আয়েশা, তাদের প্রতিবেশী জামাল, সুজন, কামরুল, আবছার, সাকিল, তাজন মাঝি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে নিজামের সাথে জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল জয়নালের। জয়নাল উড়িরচর যুবলীগের সভাপতি আলী আহমদের চাচা। সেই বিরোধের জের ধরেই নিজামের বাড়িতে হামলা চালায় আলী আহমদ ও ছোট শাহীনসহ তাদের অনুসারীরা। আলী আহমদ উড়িরচর ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি। রাজনৈতিক পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় মানুষজনের কাছ থেকে চাঁদাবাজির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নিজাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘জায়গা-জমি নিয়ে জয়নালের সাথে আমার ঝামেলা ছিল। তাই আমরা নতুন জায়গা কেনার পরিকল্পনা করছিলাম। আমরা তিনজন প্রতিবেশী মিলে এক সাথে একটা জায়গা কেনার কথা ছিল। ঘটনার আগের দিন রাতে আমার দুই প্রতিবেশী দিলদার ও জাহাঙ্গীর জায়গা কেনার জন্য আমাকে টাকা দেয়। আমার ধারণা আলী আহমদরা সেটা জানতে পেরেছিল। পরের দিন সকালেই তারা বাড়িতে হামলা চালায়। আমার স্ত্রীকে মারধর করে। আশেপাশের যারা আমার স্ত্রীকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছে তাদেরও কুপিয়ে আহত করে। খবর পেয়ে আমি বাড়িতে গেলে আমাকেও তারা কুপিয়ে আহত করে। এসময় তারা জায়গা কেনার জন্য ঘরে রাখা ৬ লাখ টাকাও নিয়ে যায়।’

নিজাম বলেন, ‘তারা চলে যাওয়ার পর আশেপাশের লোকজন আমাদের জনতা বাজার হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেও আলী আহমদ হামলা চালিয়ে চিকিৎসা দিতে বাধা দেয়। আমরা পরে সন্দ্বীপ চলে আসি। দুজনের অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় তাদের চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম পাঠানো হয়েছে। বাকিরা স্বর্ণদ্বীপ ফাউন্ডেশন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।’

হামলার সত্যতা স্বীকার করে নিলেও এই ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে আলী আহমদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘জয়নাল আমার চাচা, নিজাম সম্পর্কে বোনের জামাই। তাদের মধ্যে জায়গা-জমি নিয়ে মারামারি হয়েছে। নিজামরা আগে আমার চাচাকে মেরেছে। আমি তো এসবের কিছুতেই ছিলাম না। নিজাম ভাই এভাবে কেন বলছেন— তা তো বুঝতে পারছি না।’

ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে সন্দ্বীপের উড়িরচর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আতিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

অভিযোগ রয়েছে, যুবলীগ নেতা পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ইচ্ছেমতো এভাবে প্রায়ই যাকে-তাকে হামলা করেন আলী আহমদ ও তার অনুসারীরা। এসব বিষয়ে ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা সবসময়ই নীরব থাকেন।

সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বশির আহমেদ খান বলেন, ‘উড়িরচর থেকে আহত কয়েকজনকে নিয়ে কিছু লোকজন থানায় এসেছিল। আমরা বলেছি আগে চিকিৎসা নিতে। পরে বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) আয়েশা বেগম বাদী হয়ে আলী আহমদসহ ১৪ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছে। আমি উড়িরচর পুলিশ ফাঁড়ির আইসিকে বলে দিয়েছি আসামিদের গ্রেপ্তার করতে।’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!