উড়ন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মাটিতে নামাল বাংলাদেশ

ক্যারিবিয়ান সাগরে প্রায় সামুদ্রিক ঝড়ের আনাগোনা থাকে। ক্যারিবিয় সাগরপাড়ের দ্বীপপুঞ্জ বলেই হয়তো ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট মানে ঝড়। ক্রিকেট বিশ্ব এই ঝড়ের সাথে বেশ পরিচিত। হাল জামানার টি-টোয়েন্টি লিগগুলোতে ক্যারিবিয় ব্যাটিং দানবদের প্রায়ই দেখা যায়। বিশ্বকাপের জন্য ঘোষিত দলের আট খেলোয়াড়কে দলের বাইরে রেখে আয়ারল্যান্ডে পাঠনো দলটিই ক্যারিবীয় ঝড় নিয়ে যায় সেখানে।

অনুশীলন ম্যাচে হেরে বসা বাংলাদেশ ত্রিদেশীয় সিরিজে নিজেদের প্রথম খেলায় মঙ্গলবার মুখোমুখি হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। টাইগারদের মনে না ঢুকুলেও সমর্থকদের মনে অজানা সংশয় ভর করেছিল।কিন্তু সব আশঙ্কাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উল্টো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মাটিতে নামালো টাইগাররা।

লক্ষ্য ছিল ২৬২। গত ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে যেখানে শেষ করেছিলেন সেখান থেকেই যেন শুরু করলেন তামিম ইকবাল-সৌম্য সরকার। পার্থক্যটা হচ্ছে, সিলেটে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে তামিম-সৌম্য ১৩১ রানের জুটি গড়েছিলেন দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে। আজ সেটি হচ্ছে উদ্বোধনী জুটিতে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

টস: উইন্ডিজ

উইন্ডিজ ২৬১/৯ (৫০ ওভার)

হোপ ১০৯, চেজ ৫১, আমব্রিস ৩৮
মাশরাফি ৪৯/৩, সাইফউদ্দিন ৪৭/২, মুস্তাফিজ ৮৪/২, সাকিব ৩৩/১, মিরাজ ৩৮/১

বাংলাদেশ ২৬৪/২ (৪৫ ওভার)

তামিম ৮০, সৌম্য ৭৩, সাকিব ৬১, মুশফিক ৩২
চেজ ৫১/১, গ্যাব্রিয়েল ৫৮/১

ফল: বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী

পার্থক্য আরেকটি আছে। সেবার জুটি হয়েছিল ১৩১ রানের। আজ হলো ১৪৪ রান, যা বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের উদ্বোধনী জুটি (আগের রেকর্ড ছিল ২০০৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হান্নান সরকার ও মানজারুল ইসলাম রানার ১০৫ রান)।

জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ক্যারিবীয়দের চেয়ে ভালো শুরু এনে দিলেন তামিম-সৌম্য । আয়ারল্যান্ডে রওনা দেওয়ার আগে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ২০৮* ও ১০৬—দুর্দান্ত দুটি ইনিংস খেলে গেছেন সৌম্য। সেই ছন্দটা টেনে নিলেন ডাবলিনে। সৌম্যসুলভ পুল, কাট, পেরিস্কোপ একেকটা ফুল হয়ে ফুটল ডাবলিনের ক্লনটার্ফে। বাঁহাতি ওপেনার ফিফটিও করেছেন রাজকীয় ভঙিতে, জেসন হোল্ডারকে পুল মেরে।ক্যারিয়ারের অষ্টম অর্ধ-শতক হাঁকানো সৌম্য ৯টি চার ও ১টি ছক্কার সহায়তায় ৬৮ বলে ৭৩ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে বিদায় নিলে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি।

bangladesh-west-indies-match

সৌম্য একটু ‘অসৌম্য’ হলে তামিম এগোন ধীর লয়ে, ছটফটানিমুক্ত পরিণত মস্তিষ্কে।

তবে এতে দলের বিপদ ঘটতে দেননি তামিম ও সাকিব। দুজনই বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন। শতকের খুব কাছে গিয়ে অবশ্য তামিমকে ফিরতে হয়েছে আক্ষেপ নিয়ে। ক্যারিয়ারের ৪৫তম অর্ধ-শতকের ইনিংসটি থামে ৮০ রানে, ১১৬ বলের যে ‘সাবধানী’ ইনিংসে ছিল ৭টি চার। দ্বিতীয় উইকেটে সাকিবের সাথে তিনি গড়েছিলেন ৫২ রানের জুটি।

তামিমের বিদায়ের পর অবশ্য দলকে আর কোনো উইকেটের পতন দেখতে হয়নি। কনকনে ঠাণ্ডায় ক্যারিবীয়দের ‘ঘাম না ঝরলেও’ ব্রেক থ্রুর চেষ্টায় তাদের মরিয়া মনোভাব ছিল ঘাম ঝরানোর মতই। নতুন ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমের সাথে সাকিবের দুর্দান্ত জুটি দলকে এনে দেয় সহজ জয়, ৩০ বল ও ৮ উইকেট বাকি থাকতেই।

তৃতীয় উইকেটে ৬৮ রানের অপরাজিত জুটি গড়া সাকিব ও মুশফিক যথাক্রমে ৬১ (৬১ বলের মোকাবেলায়, ৩টি চার ও ২টি ছক্কায়) ও ৩২ রান (২৫ বলের মোকাবেলায়, ২টি করে চার-ছক্কায়) করে অপরাজিত থাকেন।

ক্যারিবীয়দের পক্ষে একটি করে উইকেট শিকার করেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ও রস্টন চেজ।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!