উপ কমিশনার মিজানুর রহমানের মৃত্যুতে শোকের ছায়া পুলিশ প্রশাসনে

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) গোয়েন্দা দক্ষিণ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মিজানুর রহমানের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সিএমপিসহ পুরো পুলিশ পরিবারে। ডিসি মিজানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনায় সিএমপির ডিসি মিজানুর রহমানের মৃত্যুতে আইজিপি স্যার গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি শোকাহত পরিবারের প্রতি তিনি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।’

ডিসি মিজানুর রহমানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে সিএমপি কমিশনার মো. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘মিজানুর রহমানের মৃত্যুতে শুধু সিএমপির ক্ষতি হয়নি, বাংলাদেশ পুলিশ অত্যন্ত দক্ষ-চৌকষ একজন কর্মকর্তা হারালো। আমরা তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। বাংলাদেশ পুলিশ সবসময় মিজানের পরিবারের পাশে থাকবে।’

মিজানুর রহমান ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে বিসিএস ২২তম ব্যাচের ক্যাডার হিসেবে পুলিশে যোগ দেন। সিএমপিতে যোগ দেওয়ার আগে তিনি ছিলেম ঝিনাইদহ জেলার পুলিশ সুপার। সিএমপিতে যোগ দেওয়ার একই আদেশে পদায়ন হন তাঁরই ব্যাচমেট সিএমপির দক্ষিণ জোনের উপকমিশনার এসএম মেহেদী হাসানও সিএমপিতে যোগ দেন।

ব্যাচমেটের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এসএম মেহেদী হাসান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশের ২২তম ব্যাচের সবচেয়ে শান্তশিষ্ট বন্ধু ছিল মিজান। আমি যখন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার, মিজান তখন পার্শবর্তী ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ সুপার ছিল। আমরা একই আদেশে সিএমপিতে যোগ দিয়েছিলাম। আমাদের বোঝাপড়াও বেশ ভালো ছিল। তার এই অকাল যাত্রায় পুরো ব্যাচ শোকে স্তব্দ।’

ডিসি মিজানুর রহমানের অধীনে দীর্ঘদিন গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করা অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) আসিফ মহিউদ্দীন বলেন, ‘আমাদের দিনটা শুরুই হতো স্যারের টেবিলে বসে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে। কাজ শুরুর আগে স্যারের সাথে দেখা করে আমরা তাঁর সাজেশন নিতাম। কখনো রাগতে দেখিনি স্যারকে। হাসিখুশি থাকতেন। হাসিমুখেই সব কঠিন সমস্যাগুলো সমাধান করতেন। তাঁর করোনা আক্রান্তের খবর পেয়ে ফোন করলে অভয় দিয়ে বলেছিলেন, কিছু হবেনা, দোয়া করো। আমাকে অভয় দিলেও তিনি তখনও কাশি দিচ্ছিলেন। ঢাকায় যাওয়ার পর আইসিইউতে থাকায় আর যোগাযোগ হয়নি। আইসিইউতে চিকিৎসা শুরু আগেও কথা হয়েছিল। শুধু দোয়াই চেয়েছেন।’

প্রসঙ্গত, ১২ এপ্রিল সিএমপি সদস্যদের মধ্যে প্রথম করোনা শনাক্তের ঠিক তিনমাসের মাথায় এসে এই শীর্ষ কর্মকর্তা করোনায় মারা গেলেন। এর আগে সিএমপি পরিবারের বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্বরত ৪ সদস্য মৃত্যুবরণ করেন করোনায়।

ডিসি মিজানুর রহমানের শরীরে গত ২৩ জুন করোনা শনাক্ত হয় হন। ২৮ জুন তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ওই দিন থেকে তিনি আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ১৩ জুলাই ভোর ৩টা ৪১ মিনিটে তাঁর মৃত্যুর হয়।

করোনায় সম্মুখযোদ্ধা মিজানুর রহমান নগরবাসীকে করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য শুরু থেকেই দায়িত্বশীল ভূমিকায় ছিলেন। জনসাধারণের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, লকডাউন কার্যকর, সচেতনতা সৃষ্টি, অসহায়দের মাঝে খাদ্যসামগ্রী ও ত্রাণ বিতরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সরাসরি মাঠ পর্যায়ে থেকে তদারকি করেছেন।

শরিয়তপুরের সন্তান মিজানুর রহমান পড়ালেখা করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহে। সোমবার রাজারবাগে নামাজে জানাযা শেষে রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়েছে তাঁকে।

মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দামপাড়া পুলিশ লাইন্স স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত দুই পুত্র সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান।

এফএম/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!