উপজেলা চেয়ারম্যানের কাজ কি শুধু কবর জেয়ারত আর মেজবান খাওয়া?

উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন, ক্ষোভ

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) ক্ষমতা নিয়ে নানা সময়ে উঠেছে নানা কথা। বারবার উদ্যোগ নেওয়ার পরও চেয়ারম্যানদের ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হয়নি। তবে কাগজেকলমে কিছু তাদের কিছু কাজ দেওয়া হলেও মূলত সংসদ সদস্য ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিলেই উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সব কাজ সম্পাদন করেন। সেখানে উপজেলা চেয়ারম্যানের কোনো অংশগ্রহণই থাকে না। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করে আসছেন উপজেলা চেয়ারম্যানরা।

নতুন করে সেই বিষয়টি আবার আলোচনায় এনেছেন চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এহেছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন টানা তিনবার। শনিবার (১১ মে) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ইফতার মাহফিলে এহেছানুল হায়দার বাবুল বলেছেন, ‘এমপির সমান ভোটে নির্বাচিত। অনুষ্ঠানে গেলে নামও ধরে না। আছি শুধু জানাজা আর মেজবানে। এতো অবহেলা করলে কী দরকার ছিল উপজেলা চেয়ারম্যানের?’

এখন প্রশ্ন উঠছে আসলেই কি তাই? উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব কী? উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান (দায়িত্ব, কর্তব্য ও আর্থিক সুবিধা) বিধিমালা, ২০১০’ শিরোনামে নতুন বিধিমালা অনুযায়ী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব: চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদের দৈনন্দিন প্রশাসনিক কাজ করবেন। তিনি পরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করবেন, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেবেন ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তত্ত্বাবধান করবেন। পরিষদে ন্যস্ত করা বা প্রেষণে নিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বার্ষিক কাজকর্মের অগ্রগতি সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দেবেন। তবে বার্ষিক গোপন প্রতিবেদন (এসিআর) চেয়ারম্যান দেবেন না। সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তা অধস্তনের গোপন প্রতিবেদন দেবেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শৃঙ্খলাবহির্ভূত কাজ করলে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চেয়ারম্যান লিখতে পারবেন। তবে পরিষদের নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ এবং প্রয়োজনে তাঁদের বিরুদ্ধে তিনি শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

পরিষদের বিভিন্ন কার্যাবলী-সংক্রান্ত প্রস্তাব এবং প্রকল্প পরিষদের পক্ষে প্রস্তুত করতে পদক্ষেপ নেবেন চেয়ারম্যান। উপজেলা-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ করবেন। পরিষদের আওতাধীন বিভিন্ন ব্যবসা, বৃত্তি ও পেশার ওপর পরিষদ কর্তৃক প্রদেয় লাইসেন্স ও পারমিট ইস্যু করবেন। সরকার কর্তৃক সময় সময় অর্পিত সব বা যেকোনো কাজ সম্পাদন করবেন। এ ছাড়া বাস্তবায়িত ও বাস্তবায়নাধীন কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা ও ভাইস চেয়ারম্যানদের ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব তদারক ও নজরদারি করবেন।

আরো জানা যায়, সুষ্ঠুভাবে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপজেলা পরিষদ ১৭টি বিষয়ে স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠন করে। এগুলো হল, আইনশৃঙ্খলা কমিটিি, যোগাযোগ ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন কমিটি, কৃষি ও সেচ কমিটি, মাধ্যমিক ও মাদরাসা শিক্ষা কমিটি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা কমিটি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কমিটি, যুব ও ক্রীড়া উন্নয়ন কমিটি, মহিলা ও শিশু উন্নয়ন কমিটি, সমাজ কল্যাণ কমিটি, ভূমি বিষয়ক কমিটি, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ কমিটি, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় কমিটি, সংস্কৃতি কমিটি, পরিবেশ ও বন কমিটি, বাজার মূল্য পর্যবেক্ষণ, মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণ কমিটি, অর্থ, বাজেট, পরিকল্পনা ও স্থানীয় সম্পদ আহরণ কমিটি, জনস্বাস্থ্য, স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ কমিটি।

তবে উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যদের মাঝে মতপার্থক্যের ভেতর দিয়ে চলছে উপজেলা পরিষদ। ফলে উপজেলা পরিষদ কাঙ্খিত পর্যায়ে কার্যকর হতে পারেনি বলে মনে করেন উপজেলা চেয়ারম্যানরা।

বর্তমানে উপজেলা চেয়ারম্যানরা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি থেকে বছরে ৮২ লাখ টাকা, একটি জেলায় টিআর এবং কাবিখা বরাদ্দ থেকে ২০ শতাংশ এবং ভূমি হস্তান্তর করের এক শতাংশ পেয়ে থাকেন।

এসব বরাদ্দ থেকে তারা সীমিত উন্নয়নমূলক কাজে অংশ নেন বলে উপজেলার চেয়ারম্যানরা। এছাড়া অধিকাংশ কাজের ক্ষেত্রে উপজেলা চেয়ারম্যানদের কোন সম্পৃক্ততা নেই।

উপজেলা পর্যায়ে সরকারের ১৭টি বিভাগের ৭০টি কমিটির মাধ্যমে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়। এসব কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আর উপদেষ্টা সংসদ সদস্যরা। কমিটির কাজগুলো উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে আসেও না এবং চেয়ারম্যানের প্রয়োজনও পড়ে না। সব কাজ এমপি ও ইউএনও করে থাকে।

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!