উদ্বেগে শুরু, উৎসবে শেষ উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন

সব উদ্বেগ, শঙ্কা ভুল প্রমাণিত করে উৎসবমুখর পরিবেশেই সম্পন্ন হলো চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। চট্টগ্রামের তিন ইউনিটের মধ্যে শুধুমাত্র এই একটি ইউনিটে সম্মেলন হওয়ায় সবার আগ্রহ ছিল এ সম্মেলনকে ঘিরে। সভাপতি পদে এবিএম ফজলে করিম ও এমএ সালামের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে ঘিরে নেতা কর্মীদের মধ্যে ছিল ব্যাপক উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। তবে সব কিছুকে ভুল প্রমাণ করে অত্যন্ত সুশৃংখল ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্মেলন সমাপ্ত হয়েছে।

বহুল আলোচিত এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সকাল ৮টা থেকেই বিভিন্ন উপজেলার নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সম্মেলনস্থলে আসতে শুরু করে। ১০টার আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় লালদীঘি ময়দান। বেলা বাড়ার সাথে সাথে আশপাশের এলাকাগুলোও লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিরসরাই উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিনের সমর্থনে আসা একটি মিছিল মাঠে প্রবেশ করলে আগে থেকে মাঠে থাকা শেখ আতাউর রহমান আতার সমর্থকদের সাথে সংঘর্ষ বাঁধে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে দলের সিনিয়র নেতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন।

চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম বলেন, কোনও ভাইয়ের নামে স্লোগান নয়। আর কোনও স্লোগান দিবেন না। আপনাদের পছন্দ থাকতে পারে, সেটা আমরা কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে দেখবো। শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগে কেউ অপরিহার্য না। তাই কোনও বিশৃঙ্খলা করবেন না।

ব্যস, এটুকুই। সব শান্ত। এরপর বাকি অনুষ্ঠানটি ছিল অত্যন্ত সুশৃংখল ও নিয়ন্ত্রিত। মাঝে ওবায়দুল কাদের বক্তব্য দিতে উঠলে কিছুক্ষণ ফজলে করিম, সালাম ও আতার সমর্থনে শ্লোগান দেন সমর্থকরা। তবে ওবায়দুল কাদেরের মৃদু ধমকে থেমে যায় তাও। এর বাইরে মঞ্চেও ছিল অত্যন্ত সুশৃংখল ব্যবস্থাপনা।

সকাল ১১টায় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। উদ্বোধনী বক্তব্য রাখতে গিয়ে বেশ আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন তিনি।

কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমি আজকে আবেগের মধ্যে আছি। এটা হয়তো আমার জীবনের শেষ সম্মেলন হতে পারে। কারণ আমার সাথে এই মঞ্চে যারা থাকতো সেই আখতারুজ্জমান চৌধুরী বাবু, আতাউর রহমান খান কায়সার, এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী আজকে আমার পাশে নেই। আজ আমার পাশে অনেকেই নেই। আজকে হয়তো আমি শেষ সম্মেলন উদ্বোধন করে যাচ্ছি। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের কাছে বলতে চাই, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ আমরা একটা সুসংগঠিত এবং আমরা শেখ হাসিনার একেকজন অতন্দ্র প্রহরীর মত কাজ করে যাচ্ছি’। মোশারফের সেই আবেগ ছুঁয়ে যায় মাঠের কর্মী সমর্থকদেরও।

এরপর একে একে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, একেএম এনামুল হক শামীম, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল মতিন খসরু।

সম্মেলনের শৃংখলা দারুণ মুগ্ধ করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের। মাহবুবুল আলম হানিফ তো বলেই ফেললেন, চট্টগ্রামের মত সুশৃংখল সম্মেলন কোথাও হয়নি। ২টার দিকে সভাপতি ফজলে করিমের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম অধিবেশন।

বিকেল ৩টায় কাজির দেউরির ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয় ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে। দ্বিতীয় অধিবেশনের নিরাপত্তায় সিএমপির ছিল বিশেষ কড়াকড়ি। নিরাপত্তার কড়াকড়িতে আইসিসির আশেপাশে ঘেঁষতে না পারলেও কাজির দেউরি মোড় থেকে সার্কিট হাউস জুড়ে দলীয় নেতা কর্মীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

নেতৃত্ব নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নেতারা প্রথমে সমঝোতার চেষ্টা করলেও সে চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। বিকেল সাড়ে ৩টায় শুরু হয়ে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবিএম ফজলে করিম ও এমএ সালাম। সাধারণ সম্পাদক পদে শেখ আতাউর রহমান আতা ও গিয়াস উদ্দিন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে সভাপতি পদে এমএ সালাম এবং সাধারণ সম্পাদক পদে শেখ আতাউর রহমান আতাকে জয়ী ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতার সমাপ্তি করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এআরটি/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!