উত্তাল সাগরে ৫ ঘন্টা ভাসছিলেন লাইফ জ্যাকেট পরে

রাঙ্গাচোক্কা জাহাজের নাজিম উদ্দিন

রাঙ্গাচোক্কা ডোবার সময়কে কে কাকে বাঁচাবে, এ সময় সবাই ছিল দিশেহারা। সবাই বাঁচতে চেয়েছিল। আমি ৫ ঘণ্টা পানিতে ভেসেছিলাম।সাথে লাইফ জ্যাকেট থাকায় আমার বাঁচা সম্ভব হয়েছে। কয়েক ঘণ্টা পরে মনে হয়েছিল একটু পরেই মরে যাবো। কিন্তু আল্লাহ হায়াত রেখেছেন বলে বেঁচে আছি।

২৭ ডিসেম্বর ভোর রাতে গভীর সমুদ্রে ডুবে যাওয়া রাঙ্গাচোক্কা জাহাজ থেকে প্রাণে বেঁচে আসা নাজিম উদ্দিন এভাবেই ঘটনার বর্ণনা দেন।

তিনি বলেন, ‘৫ ঘণ্টা পানিতে ভেসে থেকে জীবন নিয়ে ফিরে আসবো কল্পনায় ছিল না। কিন্তু যারা ঘুমের মধ্যে ছিল তাদের ভাগ্যে নির্মম পরিণতির ঘটনা ঘটেছে হয়তো। ঘন কুয়াশা ও বৈরী আবহাওয়ায় রোল দেওয়ার সময় জাহাজটি কাত হয়ে পানি ঢুকে যায়। এতে ডুবে যায় ২৬ ফুট লম্বা জাহাজটি। কিন্তু জাহাজ ডোবার সময় সবাই দিশেহারা হয়ে এদিক সেদিক সাঁতার কাটতে থাকে।’

নাজিম উদ্দিন আরও বলেন, ‘আমি জাহাজের যুগান্তকারী কেবিনে ছিলাম। আমিও অন্যদের মতো ঘুমের মধ্যে ছিলাম। শরীরে পানির স্পর্শ লাগায় জেগে উঠি। ততক্ষণে জাহাজটি অর্ধেক ডুবে গেছে। আমি সাঁতার কাটতে কাটতে জাহাজ থেকে একটু দূরে সরে যায়। সুর্য উঠার সময় থেকে প্রায় দুপুর নাগাদ পানিতেই ছিলাম। এতে বুঝতে পারি সময় ৫ ঘণ্টার কম হবে না। আমি সাঁতার কেটে ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলাম। পরে শুধু ভাসতে থাকি। একটি বয়ার উপর আশ্রয় নিয়ে ছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘জাহাজটি ভিতরের কেবিনে যারা ছিল তারা হয়ত বের হতে পারেননি। ইঞ্জিনের কাজে ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার। তিনি ছিলেন জাহাজের নিচের অংশে। তাই হয়ত আর বের হতে পারেননি।

জাহাজ ডোবার সময় আশপাশে কাউকে দেখেনি উল্লেখ করে নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘মনে করে ছিলাম আমি একাই বেঁচে আছি। কারণ আশপাশে কাউকে আমি দেখিনি। কারণ পানিতে কে কোথায় আছে তা দেখা সম্ভব হয়নি। সবাইতো ছিল বাঁচার চেষ্টায়। যে যার মতো বাঁচার শেষ চেষ্টায় করে যাচ্ছিল। আমি হাসপাতালে আসার পর দেখি জীবিত ১২ জনকে। অথচ ওই জাহাজে সবাই একসাথে থাকতাম।’
ওই জাহাজের ডুবুরি হিসেবে কাজ করতেন নাজিম উদ্দিন। তার বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার বালুর চর এলাকায়। তার বাবা শেখ ফরিদ। দীর্ঘদিন ধরে ওই জাহাজে আছেন তিনি।
ঘটনার কথা শুনে পরিবারের সবাই আতংকিত হয়ে গিয়েছিল। আমাকে দেখার জন্য আমার বাবা এসেছিল— নাজিম উদ্দিন যোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘রাঙ্গাচোক্কা ডুবির সময় অধিকাংশ লোক ঘুমের মধ্যে ছিল। যারা নিখোঁজ রয়েছেন তারাও ঘুমে ছিল এবং জাহাজের ভিতরে নিচের অংশে ছিল। তাই তারা বের হতে পারেননি। জাহাজটি উদ্ধার হলে হয়ত তাদের দেহ পাওয়া যাবে।’
উল্লেখ্য, শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে সাতটায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৭ নটিক্যাল মাইল দূরত্বে ও কক্সবাজার হতে ৩৫ মাইল পশ্চিমে গভীর সমুদ্রে ২৩জন ক্রুসহ এফভি রাঙ্গাচোক্কা নামের ফিশিং জাহাজটি ডুবে যায়।

এ ঘটনায় এখনো নিখোঁজ রয়েছেন জসিম, নয়ন, রাসেল, রাকিব, রিয়াদ, মুন্না, ফরিদ, রাহুল, আরিফ, প্রকৌশলী মুনিরুজ্জামান।

জীবিত উদ্ধার হলেন যারা— জামাল (৪৮), ইব্রাহিম (১৯), রাজিব (২৫), নজুরুল ইসলাম (৩০), রায়হান (১৮), শাহে আলম (৪৮), নবির হোসেন (২৩), রিয়াজ (২৭), বেলাল (২৬), মনজুর এলাহি আলম (৩০), জামাল উদ্দিন (২৫), নাজিম (২৪)। এতে ভোলার দৌলত খানের আলী হোসেনের ছেলে জাহাঙ্গীর (৫৪)নিহত হন। ঘটনার পর থেকে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর দল।

এএস/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!