উচ্ছেদ চালাতেই চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধে কয়েক হাজার মানুষ

২০ কিলোমিটার ছড়িয়েছে যানজট

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুরে পাহাড় দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ বাড়িতে বিদ্যুৎ-পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করার প্রতিবাদে ওই এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে। এমন আকস্মিক আন্দোলনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। আন্দোলন চলাকালে ফৌজদারহাট থেকে কুমিরা পর্যন্ত অন্তত ২০ কিলোমিটারব্যাপি দীর্ঘ যানজট লক্ষ্য করা গেছে।

উচ্ছেদ চালাতেই চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধে কয়েক হাজার মানুষ 1

মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফৌজদারহাট থেকে বায়েজিদ লিংক সড়কে অবস্থান নেয় ওই এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দা। পরবর্তীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফৌজদারহাট বায়েজিদ লিংক রোড ও ফৌজদারহাট-বন্দর সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়। কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য ঘটনাস্থলে বিপুল পরিমাণ পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি (তদন্ত) মো. হোসাইন বলেন, ‘আলীনগরের বাসিন্দারা সড়ক অবরোধ করেছে। তবে আমরা লিংক রোড সড়কটি ব্লক করে দিলে তারা অন্য জায়গায় চলে যায়। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’

এর আগে কারাগার স্থানান্তরসহ সরকারি মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরকে ঢেলে সাজানোর উদ্দ্যেগ নেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। জঙ্গল সলিমপুরে কারাগার ও নৈশ চিড়িয়াখানাসহ বিভিন্ন মেগা প্রজেক্টের কথাও জানানো হয় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সেজন্য এসব সরকারি পাহাড়ে থাকা স্থাপনা সরাতে কয়েক দফা অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। কিন্তু প্রতিবারই সলিমপুরের স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়তে হয় উচ্ছেদকারী প্রশাসনকে।

সর্বশেষ ১৫ জুলাই সরকারি কর্মকর্তাদের সামনে সলিমপুর ইউনিয়নের এক ইউপি মেম্বারকে মারধরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ইউপি মেম্বারের ছোট ভাই বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করলে ১৮ জুলাই ইয়াসিন নামের অভিযুক্ত এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

জানা গেছে, জঙ্গল সলিমপুরের সরকারি জমি উদ্ধার ও অবৈধ স্থাপনা সরানোর উদ্যোগ হাতে নেওয়ার পর ওই এলাকার সকল বৈদ্যুতিক ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এর পর থেকেই পানি-বিদ্যুতের জন্য একাধিকবার আন্দোলন করে সলিমপুরের বাসিন্দারা। তারা দ্রুত বিদ্যুৎ ও পানির পুনঃসংযোগ এবং এবং ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসনের দাবি জানান।

আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী জঙ্গল সলিমপুরের এক বাসিন্দা মোহাম্মদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, জঙ্গল সলিমপুর এলাকাবাসী বিদ্যুতের অভাবে রাতে ঘুমাতে পারছেন না। পানি তুলতে না পারায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। তাই আর সহ্য করতে না পেরে তারা প্রথমে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বায়েজিদ সড়কে অবরোধ করে। পরে তারা সরকারের নজরে আনার জন্য তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফৌজদারহাট লিং রোড এলাকায় অবস্থান করে অবরোধ সৃষ্টি করে।

এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে সংবাদকর্মীরা সেখানে যাবার পর কিছু কিছু আন্দোলনকারী মিডিয়াকর্মীদের উপর চড়াও হয়। তাদের অভিযোগ, গণমাধ্যম তাদেরকে জঙ্গল সলিমপুর থেকে উচ্ছেদের চেষ্টায় সরকারকে সহযোগিতা করছে।

সীতাকুণ্ড উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম বলেন, আন্দোলনকারীরা বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলন করছিল বায়েজিদ সড়কে। পরে হঠাৎ করে ফৌজদারহাট লিংক রোড চলে আসে। আমরা তাদের সাথে কথা বলে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করে চলেছি।

সীতাকুণ্ডের সার্কেল এডিশনাল এসপি আশরাফুল করিম বলেন, আমরা মহাসড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করছি।

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেনও বলেন, অবরোধকারীদের সড়ক থেকে চলে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। আমরা তাদের সরানোর চেষ্টা করছি।

বিএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!