উখিয়ায় চার খুনে নতুন রহস্য এককেজি আপেল!

কক্সবাজারের উখিয়ায় একই পরিবারের ৪ জনকে গলাকেটে হত্যার ঘটনায় ৭ দিনেও রহস্যের জট খুলেনি। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় আপেল নিয়ে নতুন করে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার ক্লু বের করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে আসলেও এখনো কারো পক্ষে প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়ননি।

মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে স্বজনহারা প্রবাসী রোকেন বড়ুয়ার দীর্ঘক্ষণ হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলাপ হয়। আলাপচারিতায় উঠে আসে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করে রোকেন বড়ুয়া বলেন, প্রশাসন তাকে সার্বিক নিরাপত্তা দিলেও ঘাতক এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় একটা অজানা আতঙ্ক কাজ করছে তার মাঝে।

রোকেন বড়ুয়া বলেন, গত রোববার ঘর পরিস্কার করার সময় আমার রুমে যেখানে আমার স্ত্রী মিলা বড়ুয়া খুন হয়েছে সেখানে চেয়ারের উপর পাওয়া যায় এককেজি আপেল। অথচ ঘটনার দিন কোটবাজার থেকে আমার স্ত্রী মিলা আধা কেজি আপেল ও ছেলের জন্য ওষুধ কিনেছে। সেগুলো এখনো রান্নাঘরে অক্ষত আছে। এখন সন্দেহ হচ্ছে এ এককেজি আপেল নিয়ে কে বা কারা আমার বাড়িতে এসেছিল। তা খোঁজে বের করতে পারলে ঘটনার আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে তার ধারণা।

তিনি বলেন, ঘাতক অবশ্যই পরিচিত এবং কাছের কেউ বেড়াতে আসার ভান করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

রোকেন বড়ুয়া কান্না করতে করতে বলেন, তার পরিবারের সঙ্গে গ্রামবাসীর কোনো ধরনের বিরোধ ছিল না। তবে ঘটনার দু’চার দিন আগ থেকে বসতভিটার গাছ কাটা নিয়ে সামান্য বিতর্ক হয়েছে।

রোকেনের হৃদয়বিদারক কথা শুনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, কক্সবাজার পৌরমেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, যারা দুধের শিশুকে হত্যা করতে পারে তারা কখনো মানুষ হতে পারে না। এসব জানোয়ারদের অচিরেই খুঁজে বের করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী জানান তিনি।

উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, নৃশংস এ হত্যাকাণ্ড মানুষের অন্তরে দাগ কেটেছে। তাদের যেকোনভাবে আইনের আওতায় আনার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করতে স্থানীয় জনসাধারণকে আহ্বান জানান। এ সময় আওয়ামীলীগ নেতা নুরুল হুদা, মো. আলমগীর এবং উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে পূর্বরত্ন আনন্দ ভবন বিহারে নিহতদের উদ্দেশ্যে সংঘদান অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সম্পাদক প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া অষ্টপরিস্কার উৎসবে যোগদান করেন। সেখানে তিনি স্বজনহারা রোকেন বড়ুয়ার বেশ কিছুক্ষণ হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলাপ করেন। পরে তিনি প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বলেন, পাষবিক এ হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের খোঁজে বের করতে হবে। এ মামলায় নিরীহ কেউ যাতে হয়রাণীর শিকার না হয় সে ব্যাপারে সজাগ থাকার জন্যও উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবুল মনসুরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নুরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, পুলিশসহ একাধিক টীম সর্বোচ্চ তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যে কোন সময় ঘাতক কে আমরা সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হব।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি খুবই জটিল। এখনো বলার মতো উল্লেখযোগ্য কিছু নেই। তবে হত্যাকাণ্ডের মোটিভ ও ক্লু উদঘাটনে সমস্ত তথ্যাদি শর্টিং করা হচ্ছে। অচিরেই চূড়ান্ত ফলাফল বেরিয়ে আনতে সক্ষম হবো বলে আশা করছি।’

উল্লেখ্য, গত বুধবার গভীর রাতে উখিয়ার রত্নাপালং ইউনিয়নের পূর্বরত্না গ্রামের কুয়েত প্রবাসী রোকেন বড়ুয়ার বাড়িতে ঢুকে তার মা-স্ত্রী, ছেলেসহ চারজনকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় নিহতরা হলেন রোকেন বড়ুয়ার মা সখি বড়ুয়া (৫০), স্ত্রী মিলা বড়ুয়া (২৫), ছেলে রবিন বড়ুয়া (৫) ও রোকেন বড়ুয়ার বড় ভাই শিপু বড়ুয়ার মেয়ে সনি বড়ুয়া (৬)।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!