ঈদের ছুটিতেও জেগে আছেন যারা

ঈদের ছুটিতে দীর্ঘ ভ্রমণ কষ্ট সয়ে সবাই আপনজনের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য বাড়ি ছুটে যান। কিন্তু কিছু পেশার মানুষ ঈদেও থাকেন দায়িত্বরত। নগরীর আইনশৃঙ্খলা, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, পরিচ্ছন্নতা, জরুরি সেবায় নিয়োজিতরা কর্মস্থলেই ব্যস্ত সময় কাটান। এ সময় তারা ফোনে, ভিডিও কলে পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সাথে কথা বলে সন্তুষ্ট থাকেন।

ঈদ উপলক্ষে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত সরকারি ছুটি থাকায় চুরি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ ঠেকাতে নগরীতে পাঁচ হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এছাড়া ঈদের জামাতের স্থানে নিয়োজিত ছিল চার স্তরের নিরাপত্তা।

সিএমপি সূত্রে জানা যায়, পুরো সময় জুড়ে পুলিশ মাঠে ছিল। রেল স্টেশন, বাস টার্মিনাল, লঞ্চ ঘাটে দায়িত্ব পালন করছে। ৪৩টি চেকপোস্টে সন্দেহভাজন লোকজন ও যানবাহনে তল্লাশি চলছে। ঈদের ছুটিতে বাসা-বাড়ি ও অফিসে চুরি, ডাকাতিসহ নানা অপরাধ সংঘটনের আশঙ্কায় অতন্দ্র রয়েছেন তারা।

নগরের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নিয়মিত পুলিশের পাশাপাশি টহল পুলিশের কার্যক্রমও জোরদার হয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের দুই ঈদেই ছুটি থাকে না।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের দুই ঈদেই ছুটি থাকে না।

নগরীতে প্রধান ঈদ জামাত ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ৪ হাজার পুলিশ দায়িত্ব পালন করে। নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সার্বক্ষণিক প্রস্তুতি নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাবও ঈদকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে ব্যস্ত। র‍্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতানুর রহমান জানান, নগরের প্রবেশমুখে র‍্যাবের তল্লাশি চৌকির পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে টহল দল থাকবে।

জানা যায়, নগরীর ১৪৬টি আবাসিক এলাকার দিকে নজরদারি থাকছে বেশি। কারণ আবাসিক এলাকায় বসবাসকারী
অধিকাংশ লোকই বাড়ি চলে গেছেন। সুযোগ বুঝে চোর-ডাকাতরা হানা দিতে পারে। সেজন্য প্রতিটি আবাসিক এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

এছাড়া নগরে ঈদ জামাতগুলোও ছিল কড়া নজরদারিতে। সেখানে ছিল চার স্তরের নিরাপত্তা। র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ, সিটি এসবিও দায়িত্ব পালন করছে।

চিকিৎসকরা দুই ঈদে নিয়ম করে ছুটি কাটান। ডেঙ্গু এখন জাতীয় সমস্যা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খোলা হয়েছে আলাদা কর্নার। ফলে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অতিরিক্ত রোগীর চাপ। এই চাপ সামলাতে কোন চিকিৎসক ছুটি নিতে পারেননি। ফলে কর্মস্থলেই ঈদ উদযাপন করতে হচ্ছে।

কোরবানির বর্জ্য অপসারণ মনিটরিং করছেন স্বয়ং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। নগরীতে বর্জ্য অপসারণে ২৭৩টি গাড়ি এবং চার হাজার লোক কাজ করছে। ২৪ ঘণ্টায় বর্জ্য অপসারণে যারা কাজ করছেন তারা ঈদের দিনগুলোতে পরিবারের সাথে থাকতে পারছেন না।

চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার মাহাবুবর রহমান বলেন, ‌’ঈদের সময় ডিউটি করা কাজের একটি অংশ। আমরা সহকর্মীদের বোঝাই। পাশে থাকি। একে অপরের সুখ-দুঃখ শেয়ার করি। সবাই দেশের জন্য মানুষের নিরাপত্তায় কাজ করেন। আমরা এজন্য পুরস্কারের ব্যবস্থাও করি।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মোহছেন উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ঈদে হাসপাতাল বন্ধ নেই। তাই ডাক্তারদের ছুটিও নেই। তবে দুই ঈদে ব্যালেন্স করে ছুটি কাটান তারা। মানবতার জন্য চিকিৎসকেরা কাজ করেন। রোস্টার করে ডিউটি করেন।’

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, ‘সবাই চায় তার ঈদ পরিবার ও আপনজনের সাথে কাটাবে। কিন্তু দায়িত্বের কারণে এটা সম্ভব হয় না। কষ্ট হলেও দেশের মানুষের জন্য আপনজনের সঙ্গ মিস করি।’

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আলী আহসান বলেন, ‌’আমার বাড়ি নড়াইল। ঈদের সময় বাড়ি যাওয়া হয়নি। পরিবারের সাথে ঈদ করতে না পারায় একদিকে খারাপ লাগলেও অন্যদিকে জেলা প্রশাসনের সবার সাথে ঈদ করা এটি একটি অনন্য অভিজ্ঞতা।’

জেলা প্রশাসনের আরেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব হোসেন বলেন, ‘আমার বাড়ি ঝিনাইদহ। ঈদে গ্রামের বাড়ি যাওয়া হয়নি। অফিস করছি। কষ্ট লাগলেও মেনে নিতে হয়। কাজের মাঝেই সান্ত্বনা খুঁজে পাই।’

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কাজী শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের চার হাজার কর্মী দিনরাত কাজ করছেন। এগুলো সেবামূলক কাজ। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের দুই ঈদেই ছুটি থাকে না। নগরীর পরিচ্ছন্নতায় কাজ করতে হয় তাদের।’

মাহবুব/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!