ইয়াবা ধরে বেচে দিতেন চট্টগ্রামের দুই পুলিশ, গ্রামে-চট্টগ্রামে গড়েছেন সম্পদ

দুই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে

মোহাম্মদ মোস্তফা। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার বন্দর জোনের একজন সহকারী উপ পরিদর্শক (এএসআই)। বিভিন্ন সময়ে ইয়াবা পাচারকারী ধরে কর্মস্থলে ‘সুনাম’ কুড়ানো এই পুলিশ সদস্য নিজেই করতেন ইয়াবা ব্যবসা। মোহাম্মদ মোস্তফার ইয়াবা বিক্রির সময় গত বছরের অক্টোবর মাসে মোশাররফ হোসেন নামে রাঙ্গুনিয়া থানায় কর্মরত এক পুলিশ কনস্টেবল র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হলে মোহাম্মদ মোস্তফার এই কদর্য রূপ প্রকাশ্যে আসে।

সেই ঘটনায় র‌্যাবের দায়ের করা মামলায় তদন্ত শেষে সত্যতাও পেয়েছে নগর পুলিশ। তদন্ত শেষে কনস্টেবল মোশাররফ হোসেন ও এএসআই মোহাম্মদ মোস্তফাকে অভিযুক্ত করে গত ১২ জানুয়ারি আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর জোনের পরিদর্শক মাঈনুর রহমান।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে এএসআই মোস্তফা সেসময় গা ঢাকা দিয়ে কিছুদিন পলাতক থাকলেও পরে উচ্চ আদালত থেকে অন্তবর্তীকালীন জামিন নিয়ে কর্মস্থলে হাজির হলে তাকে নগর গোয়েন্দা পুলিশের বন্দর জোন থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বর্তমানে তিনি দামপাড়া পুলিশ লাইনে সংযুক্ত আছেন।

মোশাররফ হোসেন ফেনী জেলার নবাবপুর ইউনিয়নের মৃত জাফর আহম্মেদ এবং এএসআই মোস্তফা নোয়াখালী জেলার চরজব্বার থানার চরহাসান সিকদার বাড়ির সাইদুর রহমানের ছেলে।

এএসআই মোস্তফার বিভিন্ন সময়ের সহকর্মীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, পাচারকারীদের থেকে উদ্ধার করা ইয়াবা ছাড়াও মোস্তফা নিজেও ইয়াবা পাচার করতেন। এছাড়া এর আগে মোটরবাইক চোরাচালানচক্রের হয়ে কাজ করার অভিযোগও ছিল তার বিরুদ্ধে। তবে কোনো দালিলিক প্রমাণ না থাকায় তাকে ধরা সহজ ছিল না। এই সুযোগ নিয়ে বরাবরই নির্বিঘ্নে নিজের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন মোস্তফা।

এসব করে নামে বেনামে সম্পদের পাহাড়ও গড়েছেন সিএমপির এই উপ পরিদর্শক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএমপির একজন পুলিশ সদস্য চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মোস্তফার গ্রামের বাড়িতে ৩০টির মতো অটো ও একটা নিজস্ব মার্কেট আছে বলে শুনেছি। লালদীঘির পাড়েও তার দুইটা মাইক্রো আছে।’

সিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) বন্দর জোনের উপ-কমিশনার মনজুর মোরশেদ জানান, ইয়াবা পাচারে অভিযুক্ত থাকার অপরাধে এএসআই মোস্তফার বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। তিনি ইতিমধ্যে উচ্চ আদালত থেকে অন্তবর্তীকালীন জামিন নিয়েছেন। তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।

২০২০ সালের ২১ অক্টোবর বিকেলে নগরীর ওয়াসা মোড়ের হক লাইব্রেরি সামনে থেকে দুই হাজার ৮০০ পিস ইয়াবাসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন রাঙ্গুনিয়া থানার কনস্টেবল মোশররফ হোসেন। ইয়াবাসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর মোশাররফ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন তিনি এএসআই মোহাম্মদ মোস্তফাসহ ইয়াবা বিক্রির সাথে জড়িত। তারা দুজনে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলায় একসঙ্গে চাকরি করেছেন। দুজনের মধ্যে বেশ সখ্যও রয়েছে। পরদিন নগরীর চকবাজার থানায় এ ব্যাপারে একটি মামলা দায়ের করে র‍্যাব।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!