ইয়াবা ঢুকছে রোহিঙ্গার পাহারায়, কক্সবাজারে একসপ্তাহে উদ্ধার ৬ লাখ

সপ্তাহ না কাটতেই ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ৩

চলতি বছরের প্রথম সপ্তাহেই শুধু উখিয়া-টেকনাফে উদ্ধার হয়েছে ৬ লাখ ইয়াবা। বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন নারীসহ ৩ মাদককারবারি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি ও সাঁড়াশি অভিযানেও থামানো যাচ্ছে না মাদকের আগ্রাসন। বন্দুকযুদ্ধে একের পর এক মাদক কারবারি নিহত হলেও মিয়ানমার থেকে অপ্রতিরোধ্যভাবে আসছে মরণনেশা ইয়াবা। এসব ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে রোহিঙ্গারাও। তাদের পাহারায় মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান আসছে দেশে।

বিশেষ করে কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবাগুলো প্রবেশ করে। পরে পাচারকারীদের হাত বদল হয়ে ইয়াবাগুলো যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে এর মধ্যে কিছু কিছু ইয়াবার চালান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে উদ্ধার ও ইয়াবা বহনকারীরা আটক হলেও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে জেল থেকে বেরিয়ে আবারও সেই পথেই পা বাড়ায় মাদক ব্যবসায়ীরা।

অথচ ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে কক্সবাজার জেলার তালিকাভুক্ত ১০২ ইয়াবা কারবারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আত্মসর্মপণ করেছিল। কিন্তু এরপরও বন্ধ হয়নি ইয়াবা পাচার।

জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারির মধ্যেও নিত্যনতুন কৌশলে সংঘবদ্ধ শক্তিশালী ইয়াবা পাচারকারীরা সড়ক ও নৌ-পথে দেশের বিভিন্নস্থানে পাচার করে যাচ্ছে ইয়াবা। আর এ কাজে দেশব্যাপী মাকড়সার জালের মতোই বিস্তৃত রয়েছে তাদের নেটওয়ার্ক। জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে।

এদিকে, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহেই শুধুমাত্র উখিয়া-টেকনাফে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮১৫টি ইয়াবা। পাশাপাশি বিদেশি মদ, বিয়ারসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্যও উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় ৭ মাদক কারবারিকে আটক করা হয়। আর পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন নারীসহ ৩ মাদক কারবারি। আটক ও বন্দুকযুদ্ধে নিহতদের বেশিরভাগই রোহিঙ্গা।

এর মধ্যে সর্বশেষ সোমবার (৬ জানুয়ারি) সকালে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের পূর্ব ফাঁড়িরবিল এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে দুই রোহিঙ্গা। তারা হলেন মিয়ানমারের উনচিপ্রাং এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে উখিয়া রোহিঙ্গা শিবিরের ২২ নম্বর ব্লকে আশ্রয় নেওয়া সুলতান আহমদের ছেলে মোহাম্মদ ইসমাইল ও মো. আবু সৈয়দের ছেলে মো. হেলাল উদ্দিন। এ সময় ২০ হাজার ইয়াবা, একটি বন্দুক ও দুই রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।

এছাড়া রোববার (৫ জানুয়ারি) টেকনাফের জাদিমুড়া ওমর খান পয়েন্ট থেকে দেড় লাখ ইয়াবাসহ দুই রোহিঙ্গা মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে র‌্যাব। তারা হলেন টেকনাফ দমদমিয়া ন্যাচার পার্ক ২৭ নম্বর ক্যাম্পের ডি ব্লকের ফজল হকের ছেলে আব্দুর লতিফ এবং একই এলাকার হোসেন আহমদের ছেলে জাবেদ ইকবাল।

একই দিন রাতে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাংখালী লবণের মাঠ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সমুদা বেগম (৪০) নামের এক নারী মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। তিনি হোয়াইক্যং সাতঘরিয়াপাড়ার নুরুল ইসলামের স্ত্রী। এ সময় উদ্ধার করা হয় ৬ হাজার ইয়াবা।

শনিবার (৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের মহেশখালীয়া পাড়ায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২০ হাজার ইয়াবাসহ আটক করা হয় ওই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার জাহিদ হোসেনকে। সে মহেশখালীয়া পাড়ার আব্দুস সাত্তারের ছেলে। একইদিন উখিয়ার কুতুপালং বাজার থেকে ৩ হাজার ৯০০ ইয়াবাসহ দুই রোহিঙ্গা পুলিশের হাতে আটক হয়। তারা হলেন বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রশিদ আহমদের ছেলে চাঁন মিয়া ও একই এলাকার দিল মোহাম্মদের নুরুল আলম।

২ জানুয়ারি রাতে টেকনাফ স্থলবন্দর এলাকা থেকে বিদেশি মদসহ ২ মাদক পাচারকারীকে আটক করে কোস্টগার্ড। ৩১ ডিসেম্বর দুপুরে টেকনাফের হ্নীলা জাদিমুরা এলাকা থেকে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৯১৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে বিজিবি। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্তারা বলছেন, ইয়াবা কিংবা মাদক পাচারকারীরা যতই শক্তিশালী কিংবা প্রভাবশালী হোক না কেন তাদের কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না।

র‌্যাব-১৫ টেকনাফ ক্যাম্পের ইনচার্জ লে. মির্জা শাহেদ মাহতাব বলেন, ‌‘ইয়াবা ও অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের অভিযানে অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি ইয়াবা পাচার ও অপরাধ কর্মকাণ্ড ঠেকাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে র‌্যাবের তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে।’

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) টেকনাফ-২ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফয়সল হাসান খান মঙ্গলবার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সরকার ইয়াবাসহ সকল মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। যাতে কোনো মাদক দেশে প্রবেশ করতে না পারে। মাদকের বিরুদ্ধে বিজিবির অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ইয়াবাসহ সকল প্রকার মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীরা যতই শক্তিশালী হোক তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আগের তুলনায় ৭০ শতাংশের বেশি ইয়াবাসহ সকল মাদক পাচার কমে এসেছে। যে কোনো মূল্যে ইয়াবা পাচার বন্ধ করা হবে।’

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!