শ্রমিকের ক্ষোভ ইলিয়াস কাঞ্চনে, পুলিশের ভরসা সন্তানে

গণপরিবহনে নৈরাজ্য

নতুন সড়ক পরিবহন আইনকে ঘিরে জটিলতা বাড়ছেই। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে সব মহলের দাবির মুখে করা এই আইন সংশোধনের দাবিতে তিন দিনের ধর্মঘট পালন করেছে পণ্য পরিবহন শ্রমিকরা। সেই আন্দোলনে শ্রমিকদের ক্ষোভের মূল কেন্দ্রে ছিলেন দীর্ঘদিন ধরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করা চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। সারাদেশেই কাঞ্চনের উপর বিভিন্ন ভাবে নিজেদের ক্ষোভ দেখিয়েছেন শ্রমিকরা।

এছাড়াও তিন দিনের আন্দোলনের পুরো সময়েই পণ্য ও গণপরিবহন খাতে ব্যাপক নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে শ্রমিকরা। তাদের সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে শুরুতেই থমকে গেছে নতুন এই আইনটির বাস্তবায়ন। ফলে আশা নিরাশার দোলাচলেই ঘুরপাক খাচ্ছে নিরাপদ সড়কের স্বপ্ন।

সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নতুন সড়ক পরিবহন আইন ফলপ্রসূ করার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম। এই আইন বাস্তবায়নে ছাত্রদের ওপর পুলিশের ভরসার কথাও উঠে এসেছে তার বক্তব্যে।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ডিএমপির ‘ট্রাফিক সচেতনতামূলক পক্ষ ২০১৯’ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে না পারলে আমাদের যাওয়ার কোনো পথ থাকবে না। এটিই শেষ সুযোগ। আমাদের সন্তানরা আরেকবার রাস্তায় নামলে পুলিশ, গাড়িচালক মালিক-শ্রমিক কারও পিঠের চামড়া থাকবে না। তাই সাবধান হোন। আইন মেনে চলুন।

শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে নতুন এই আইন বাস্তবায়নে সরকার কিছুটা নমনীয় হলেও গত ৩ দিনের কার্যক্রমে শ্রমিকদের উপর সাধারণ মানুষের ক্ষোভ অনেকাংশেই বেড়েছে। বিশেষ করে নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের ছবিকে বিকৃতভাবে হেয় করাকে মেনে নিতে পারছেন না কেউই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বেশ কিছু ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ইলিয়াস কাঞ্চনের ছবি সম্বলিত ব্যানার টাঙিয়ে কিংবা কুশপুত্তলিকা তৈরি করে সেখানে জুতার মালা দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রামের পোর্টসিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহিম এ বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ইলিয়াস কাঞ্চনের উপর শ্রমিকদের ক্ষোভের একটা চিত্র দেখলাম। খুব খারাপ লেগেছে। লোকটার অপরাধ কী? সড়কে খুনের বিরুদ্ধে কথা বলছেন এটাই? দেখুন তাদের আস্ফালন কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, তারা রাস্তায় গাড়ি চাপা দিয়ে মানুষ মারবে আবার এর বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তাকে প্রকাশ্যে আক্রমণ করবে। এটাতো অরাজকতা!’

ছবিগুলো নজরে এসেছে ইলিয়াস কাঞ্চনেরও। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘ছবিগুলো আমি দেখেছি। ভীষণ কষ্ট পেয়েছি।’

তবে এর জন্য এককভাবে শ্রমিকদের দায় দিচ্ছেন না কাঞ্চন। তিনি বলেন, ‘এটা শ্রমিকরা এককভাবে করেনি। মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের নির্দেশেই তারা এটা করেছে। শ্রমিকরা নেতাদের কথা দ্বারা প্রভাবিত। নেতারা যা বলে শ্রমিকরা তাই শোনে।’

এ বিষয়ে ট্রাক মালিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ইলিয়াস কাঞ্চন তাদের প্রতিপক্ষ নয়। এছাড়া গত কয়েক দিনে শ্রমিকদের যে আন্দোলন তাতে শ্রমিক মালিক সংগঠনগুলোর কোন নির্দেশনা ছিল না।’

এদিকে শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে নমনীয় না হয়ে যেকোন মূল্যে আইনটি বাস্তবায়নের দাবি যাত্রীদের। ইস্ট ডেলটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘কোনোভাবেই এই আইন বাস্তবায়ন থেকে সরে আসা উচিত হবে না সরকারের। আইনটি বাস্তবায়নে প্রয়োজনে সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থানে যাওয়া উচিত। পাশাপাশি আইন বাস্তবায়নে প্রাসঙ্গিক আরো কিছু দিকে নজর দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের পর্যাপ্ত পার্কিং নেই। সুতরাং পার্কিং বাড়াতে হবে। এর আগে পার্কিংয়ের জন্য জরিমানার বিষয়টি শিথিল করা যায়। বিআরটিএর কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। অনেকেই লাইসেন্স করাতে গিয়ে ভোগান্তিতে পরছে। এসব থামাতে হবে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত সংখ্যক ট্রেনিং সেন্টার চালু ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়াতে হবে।’

নিরাপদ সড়ক চাই চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি এসএম আবু তৈয়ব বলেন, ‘নিরাপদ সড়কের দাবিতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেছি। এটা যে খুব বেশি কড়া আইন তাও না। তবে এই আইন নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আইনটি একদিনে বাস্তবায়ন করা যাবে এমনটাও মনে করি না আমরা। আমরা চাই ধীরে ধীরে আইনটি কার্যকর করা হোক। সরকারও সেদিকে এগোচ্ছিল। মাঝখানে কিছু ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিছু মানুষ তাদের স্বার্থে আইনের অপব্যাখ্যা করে শ্রমিকদের ক্ষেপিয়ে দিয়েছে। তারা গত কয়েকদিন কি নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে তা তো দেখেছেনই। এর প্রেক্ষিতে সরকার হয়তো কিছুটা ধীরে চলো নীতিতে চলছে। তবে এই আইন থেকে যেন সরকার সরে না আসে।’

এদিকে শ্রমিকদের আন্দোলন নতুন আইন বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্থ করবে না বলে মনে করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান।

তিনি বলেন, ‘আইনটি সবাইকে নিয়েই বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা এই লক্ষ্যে কাজ করছি। গত কয়েকদিন ধরে দফায় দফায় সংশ্লিষ্ট সবার সাথে বসেছি। সড়কে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করছি। আন্দোলনের বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে দেখা হচ্ছে।’

এআরটি/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!