ইলিশ শিকারের নিষেধাজ্ঞা ফুরালেও বাজারে দাম পড়েনি

ইলিশের নিরাপদ প্রজননের জন্য ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) থেকে জেলেরা দল বেঁধে সমুদ্রে নেমেছে ইলিশ শিকারে। তবে গভীর সমুদ্র থেকে ফিশিং ট্রলার বা ইঞ্জিনচালিত দেশি ট্রলার না ফেরা পর্যন্ত মাছের বাজারে কোন প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

শুক্রবার (১ নভেম্বর) চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দেখা যায় এক কেজির কাছাকাছি ওজনের ইলিশের দাম ১০০০- ১২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ৫০০-৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০-১০০০ টাকায়, ছোট সাইজের ইলিশ ৪৫০-৫০০ টাকা।

চট্টগ্রাম নগরীর চৌমুহনী বাজারের ব্যবসায়ী আমিন উল্যাহ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও এখনো নতুন মাছ অতটা আসেনি। সীতাকুণ্ড হয়ে কিছু মাছ আসছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। আর আমাদের কেনাও বেশি দামে। তাই দাম পড়ছে না।’

সোনালী যান্ত্রিক মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি হাজী মোহাম্মদ আলী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মাছ শিকারে আমাদের যান্ত্রিক যেসব বোট সমুদ্রে গিয়েছে তারা মাছ নিয়ে ফিরতে কমপক্ষে ৫ দিন সময় লাগে। কারো কারো ক্ষেত্রে দুয়েকদিন এদিক সেদিক হয়। তবে গভীর সমুদ্রে যেসব জাহাজ যায় তাদের ফিরতে মাসখানেক সময় লেগে যায়।’

বাজারে যেসব ইলিশ বেচাকেনা হচ্ছে তা কোল্ড স্টোরের কী না— জানতে চাইলে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘না সব মাছ কোল্ড স্টোরের নয়। উপকূলীয় অঞ্চলে যেসব জেলে দৈনিক মাছ শিকারে যান তাদের শিকার করা মাছ বাজারে আছে।’

উল্লেখ্য, ইলিশের নিরাপদ প্রজননের জন্য সরকার দুই দফায় ৮৭ দিন সমুদ্রে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। প্রথম দফায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছিল ২৩ জুলাই। এরপর দ্বিতীয় দফায় ২২ দিন ৯-৩০ অক্টোবর।

নিষেধাজ্ঞার সময়ে দেশের ইলিশ প্রধান ৮৫ উপজেলায় ২ লাখ ৩৮ হাজার জেলে পরিবারকে মাসে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়া দিয়েছে সরকার। তবে চট্টগ্রাম নগরীর ফিশারীঘাট এলাকার কামাল উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন— ‘স্থানীয়ভাবে জনপ্রতিনিধিদের আনুকূল্য না পেয়ে অনেক জেলে পরিবার সরকার প্রদত্ত সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত।’
মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ পর্যবেক্ষণ সেলের তথ্য অনুযায়ী, ১৫ বছর আগে মাত্র ২৪ টি উপজেলার নদীতে ইলিশের বিচরণ ছিল। সর্বশেষ দেশের অন্তত ১২৫ উপজেলার নদীতে ইলিশ বিচরণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র এমনকী হাওড়েও ইলিশ পাওয়া গেছে।

৯ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করার প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, ‘এ সময়ে ইলিশের আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ। এ সময়ে ডিম পাড়ে ৮০ শতাংশ ইলিশ। আর এই ডিম পাড়ে মূলত মিঠা পানিতে। তাই আশ্বিনের পূর্ণিমার চারদিন আগে এবং পূর্ণিমার পর ১৮দিন মোট ২২ দিন দেশের উপক‚লীয় অঞ্চল, নদীর মোহনাসহ যেসব জেলা ও নদীতে ইলিশ পাওয়া যায়, সেখানে মাছ ধরা নিষিদ্ধ।

ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ থাকার সময়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে আইন অমান্যকারীদের বিভিন্ন সাজা দিয়েছিল। উদ্ধার করেছিল প্রায় ৯ কোটি টাকার কারেন্ট জাল।

এফএম/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!