ইমেইল দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে জঙ্গিরা, দু সপ্তাহে ফিরে এলেন ৯ তরুণ-তরুণী

না বুঝে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া যেসব জঙ্গি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায়, তাদের জন্য এবার অনলাইন পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছে র‌্যাব। এখন একটি ইমেইল করেই ভালো হওয়ার সুযোগ পাবে জঙ্গিরা। এভাবে ইতিমধ্যে অন্তত জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী ৯ তরুণ-তরুণী আত্মসমর্পণ করেছে বলে জানা গেছে।

র‌্যাবের পরিচালিত ‘ডি-র‌্যাডিকালাইজেশন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম’ এর অধীনে শুরু হয়েছে এই ব্যতিক্রমী কার্যক্রম। কার্যক্রমটি চালু হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যেই মিলেছে ব্যাপক সাড়া। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নব্য জঙ্গি ও জঙ্গিবাদে বিশ্বাসীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার জন্য ইমেইলে যোগাযোগ করছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব সূত্র। ইতিমধ্যে এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী ৯ তরুণ-তরুণী আত্মসমর্পণ করা হয়েছে র‌্যাবের পক্ষ থেকে।

জানা গেছে, না বুঝে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া এবং অন্ধকার জগত থেকে যেসব জঙ্গি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায়, তারা [email protected] এই ইমেইল ঠিকানায় মেইল পাঠালে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার ব্যবস্থা করে দেবে র‌্যাব।

এ বিষয়ে র‍্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইং-এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘তরুণ জঙ্গি বা জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী মানুষদের সুপথে ফেরাতেই র‌্যাবের এই কার্যক্রম। হটলাইনটি চালু হওয়ার পর থেকেই আমরা আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সাথে যারাই যোগাযোগ করছেন, আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছি যে কোনভাবেই তাদের নাম ঠিকানা বাইরে প্রকাশ হবে না। সম্পূর্ণ গোপনীয়তায় তাদের সুপথে ফেরানোর দায়িত্ব র‌্যাবের। আমাদের কথায় ভরসা রেখে ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে জঙ্গিরা ভালো হওয়ার লক্ষ্যে যোগাযোগ করছে।’

কোনো জঙ্গি চট্টগ্রাম থেকে যোগাযোগ করেছে কি-না জানতে চাইলে আশিক বিল্লাহ্ বলেন, ‘আমরা ওদের নাম-ঠিকানা গোপন রাখার শপথ নিয়েছি। যে কোনো কিছুর বিনিময়ে আমরা তাদের সুপথে ফেরাবো— পরবর্তী জীবনে যেন তাদের আগের কাজ কোনো ধরনের প্রভাব না ফেলে সেজন্য তাদের ঠিকানা আমরা দিতে পারবো না। তবে চট্টগ্রাম থেকে কেউ যোগাযোগ করেনি সেটাও বলবো না, আবার যোগাযোগ করেছে সেটাও বলতে চাচ্ছি না।’

জানা গেছে, এক্ষেত্রে জঙ্গিরা যোগাযোগের প্রথম অবস্থায় তাদের নাম ও ঠিকানা পরিবর্তন করে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছেন। উদাহরণ হিসেবে র‍্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইং-এর এই পরিচালক বলেন, ‘যেমন ধরুন কোনো জঙ্গি মহেশখালী থেকে বলছে। কিন্তু প্রথমে সে আমাদের তার ঠিকানা দিলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া। তবে আমাদের কাছে ঠিকানাটা বিশেষ প্রাধান্য পাচ্ছে না, আমাদের কাছে তাদের সুপথে আনাটাই বিশেষ প্রাধান্য পাচ্ছে।’

র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, [email protected] এই ঠিকানায় ইমেলের মাধ্যমে নিজের ভুলত্রুটি স্বীকার করে নিজেকে সঠিক পথে পরিচালনার ইচ্ছার কথা জানাতে হবে র‌্যাবকে। তারপর র‌্যাব তাদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের সঠিক পথে আসার জন্য উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করবে। জঙ্গিদের সঠিক পথে না আনতে পারা পর্যন্ত তাদের দেখভালও করবে র‌্যাব। ডি-র‌্যাডিকেলাইজেশন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রামটি সমন্বয় করছে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা।

গোয়েন্দা শাখা সূত্র বলছে, বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের তিন থেকে চারজন জঙ্গি আত্মসমর্পণের জন্য ইতোমধ্যে র‌্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। র‌্যাব তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে। তবে ভিন্ন ভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের এই সদস্যদের নামে বেশ কিছু মামলা আছে।

আত্মসমর্পণের শর্তে তারা মামলা থেকে অব্যাহতিও চেয়েছে। র‌্যাব এরই মধ্যে তাদের কাছে থেকে মামলার কাগজপত্র চেয়ে নিয়েছে। সেগুলোর যাচাই-বাছাই চলছে। এর অগেও ২০১৬ সালে ঢাকার হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় জড়িত ৭ জঙ্গিকে আত্মসমর্পণ করায় র‌্যাব।

বিএস/কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!