ইপিজেডে এমএলএম ব্যবসার ফাঁদ পেতে ৬ মাসেই অর্ধকোটি টাকা হাতিয়েছে প্রাইম বাজার

পোশাক শ্রমিকরাই মূল টার্গেট

প্রাইম বাজার লিমিটেড। গ্রাহককে ‘আইওয়াশ’ করে দেশি-বিদেশি পণ্য বেচাকেনার মাধ্যমে শুরু হয় কথিত এই কোম্পানির বাণিজ্যের প্রথম ধাপ। কোনো গ্রাহককে প্রথম ধাপে বশে আনতে পারলেই শুরু হয় দ্বিতীয় ধাপ। গ্রাহকরা দ্বিতীয় ধাপে আসা মাত্রই তাদের ‘আকাশকুসুম স্বপ্ন’ দেখিয়ে কৌশলে হাতানো হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ওই কোম্পানি মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) অনলাইনের মাধ্যমে এই পন্থা অবলম্বন করে মাত্র ৬ মাসেই শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে এককালীন আমানতের নামে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা। গ্রাহকদের টাকার পরিমাণ বেশি হওয়ায় আসল ও লভ্যাংশের অর্থ ফেরত দেওয়া নিয়ে গড়িমসি করছে প্রতিষ্ঠানটি।

অভিযোগ রয়েছে, অনলাইন এই এমএলএম ব্যবসার অধিকাংশ পণ্যই বিদেশ থেকে আনা ও নিম্নমানের। এসব পণ্যের গায়ে নেই দেশের মূল্য সংযোজন কর লেবেল। একইসঙ্গে ওই কোম্পানি দেশীয় পণ্য বিক্রি করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গায়ের মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে।

চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত কর্ণফুলী ও সিইপিজেড পোশাক কারখানার অধ্যুষিত এলাকা। ইপিজেড থানার ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বেশিরভাগ অংশে পোশাক শ্রমিকরা অস্থায়ীভাবে বসবাস করে। ওই এলাকার নিরীহ পোশাক শ্রমিকের সরলতা পুঁজি করে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন সমিতি ও এমএলএম ব্যবসা। দুই বছর আগে ঝনকপ্লাজার চতুর্থ তলায় কেডিআরএল নামের প্রতিষ্ঠানটি ইপিজেড ও কর্ণফুলী পোশাক কারখানার প্রায় ৫ শতাধিক গ্রাহকের কয়েকশত কোটি টাকা হাতিয়ে অফিস বন্ধ করে পালিয়ে যায়। একইসঙ্গে সম্প্রতি তিন লাখ গ্রাহকের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে রুপসা কিং গ্রুপ নামের আরও একটি প্রতিষ্ঠান এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জালে।

দেশীয় পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গায়ের মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে।
দেশীয় পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গায়ের মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের ইপিজেড থানার টিসিবি ভবনের বিপরীতে আলাউদ্দিন ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় প্রাইম বাজার লিমিটেডের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সেখানে প্রথম তলায় অনলাইন ‘প্রোডাক্টভিত্তিক’ ও ‘সফটওয়ার কেন্দ্রিক’ ব্যবসার কার্যক্রম চলে। অফিসের একপাশে হাতেগোনা কয়েকটি দেশীয় পণ্য দেখা গেলেও তাদের অধিকাংশ পণ্যই বিদেশি। দ্বিতীয় তলায় একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থাকলেও সেখানে কোনো শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ নিতে দেখা যায়নি।

চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড এলাকা পোশাকশ্রমিক অধ্যুষিত। এখানে ফটকা ও প্রতারণামূলক ব্যবসার শেষ নেই। তাড়াতাড়ি ‘বড় লোক’ হওয়ার লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষ ও পোশাক শ্রমিকদের ফাঁদে ফেলে হাতানো হচ্ছে টাকা। সম্প্রতি এই এলাকার দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা করে হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।

এই বিষয়ে প্রাইম বাজার লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ হানিফ বলেন, ‘প্রোডাক্টভিত্তিক সরাসরি ও অনলাইনভিত্তিক এ ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছে। কিছু গ্রাহকের টাকা বকেয়া রয়েছে। একটু সময় নেওয়া হয়েছে তাদের থেকে। গ্রাহকের মূল টাকা ও লভ্যাংশের টাকা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা চলছে। একসঙ্গে তো সবাইকে টাকা দেওয়া যাবে না। পর্যায়ক্রমে সবার টাকা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। একটু সময় লাগবে।’

ইপিজেডে এমএলএম ব্যবসার ফাঁদ পেতে ৬ মাসেই অর্ধকোটি টাকা হাতিয়েছে প্রাইম বাজার 1

তিনি আরও বলেন, ‘গ্রাহককে দ্বিগুণ লাভ দেওয়া হচ্ছে। আমার এই প্রতিষ্ঠানের নামে দেশের উত্তরাঞ্চলে পোল্ট্রি খামার ও মৎস্য চাষের প্রকল্প রয়েছে। সেখান থেকে মূলত এ লভ্যাংশ দেওয়া হচ্ছে। আমার প্রতিষ্ঠানের বয়স প্রায় ৬ মাস। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। আগে গার্মেন্টসের চাকরি করতাম। এখন এ ব্যবসা পরিচালনা করছি আমি নিজেই।’

মূল্যতালিকার চেয়ে দ্বিগুণ দামে দেশি পণ্য বিক্রি প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিদফতর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি এখন শুনেছি। খোঁজ নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

এই বিষয়ে ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া বলেন, ‘প্রাইম বাজার লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মুআ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!