ইন্দোর টেস্টের প্রথম দিনে বিবর্ণ বাংলাদেশ

টস জয় আর ভারতের একটি উইকেট শিকার (রোহিত শর্মা) ছাড়া ইন্দোর টেস্টের প্রথম দিন পুরোটায় হতাশায় কাটলো বাংলাদেশের। বিবর্ণ দিনের ব্যাটিংটা ভুলেই যেতে চাইবে বাংলাদেশ। বোলিংয়ে শুরুতেই রোহিতের উইকেট তুলে নিতে পারলেও রাখা যায়নি ধারাবাহিকতা। ৬৪ রানে পিছিয়ে থাকা ভারত দাপটেই ঘোরাচ্ছে ছড়ি। হলকার স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টেস্টে চা বিরতির পরপরই গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশ। সফরকারীরা প্রথম ইনিংসে অলআউট হয় মাত্র ১৫০ রানে। ফিফটি ছুঁতে পারেননি কেউই। ইনিংসে ফিফটি পেরোনো জুটি সবে একটা। সেই জুটির দুজন, মুশফিকের ৪৩ আর মুমিনুলের ৩৭-এর পর বলার মতো রান কেবল লিটনের ২১!

টাইগারদের অল্পতে থামিয়ে কোহলিকে স্বস্তি এনে দেয়ার পথে ৩ উইকেট নিয়ে দিনের সেরা মোহাম্মদ সামি। ২টি করে উইকেট নিয়ে তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন ইশান্ত, উমেশ ও অশ্বিন। সকালে সবাইকে অবাক করে দিয়ে টসে জিতে মুমিনুল হক আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন। তখনই টিভি ভাষ্যকাররা বাংলাদেশ অধিনায়ককে পরামর্শ দিয়েছিলেন, ‘শুরুতে দারুণ সতর্ক থাকতে, কারণ বিরাট কোহলিদের পেস আক্রমণ দুর্দান্ত! টিভি ভাষ্যকারদের কথা মুমিনুলের কানে যাওয়ার কথা নয়, যায়ওনি। উল্টো ভারতের পেস আক্রমণ সামাল দিতে আদৌ হোমওয়ার্ক ছিল কীনা সেই প্রশ্নটাও তো উঠল। বিশেষ করে টাইগার ব্যাটসম্যানদের আউট হওয়ার ধরন সেই আগেরই মতো। ইন্দোরের হোলকার স্টেডিয়ামের উইকেটে পেসারদের জন্য কতোটা কী ছিল সেটা পরের ব্যাপার। সত্য এটাই-বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি!

ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম ম্যাচটা খেলতে নেমেই চাপে টাইগাররা। টস জয়ের সঙ্গে দিনে একটাই সাফল্য-রোহিত শর্মার উইকেট। তাকে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে দেননি আবু জায়েদ চৌধুরী। তার অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন লিটন দাস। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে জোড়া সেঞ্চুরি ও একটি ডাবল শতক হাঁকানো রোহিত ফেরেন ১৪ বলে ৬ রানে। তারপর দিনের বাকিটা সময় কাটিয়ে দেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল (৩৭) ও চেতেশ্বর পূজারা (৪৩)। এরমধ্যে অবশ্য আবু জায়েদের বলে আগারওয়ালকে স্লিপে প্রাণ দেন ইমরুল। সহজ ক্যাচ ফেলে দেন তিনি।

সকালে টস ভাগ্যটা মুমিনুলের সঙ্গে থাকলেও এরপর কোনো কিছুই আর পক্ষে ছিল তার। এদিনই নেতৃত্বে অভিষেক হলো এই ব্যাটসম্যানের। সাকিব আল হাসান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ হওয়ায় তাকে অধিনায়কত্ব দেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। টেস্টে বাংলাদেশের ১১তম অধিনায়কের প্রথম দিনটা মোটেও মনে রাখার মতো হলো না।

ইন্দোরের উইকেটে মুমিনুলের সিদ্ধান্তটা যৌক্তিক করে তুলতে পারেননি কোনো ব্যাটসম্যানই। হোলকারের প্রেসবক্সে বসে ব্যর্থতার বিস্ময়কর প্রদর্শনী দেখতে হয়েছে! প্রথম সেশনে দল হারাল ৩ উইকেট। লাঞ্চের পর দ্বিতীয় সেশনে ৪ উইকেট। তারপর চা বিরতি থেকে এসেই বাকি তিন উইকেট তুলে নেয় ভারতীয় বোলাররা! ইমরুলের বিদায়ে শুরু, এবাদত হোসেনের পতনে শেষ! মাঝে যা হলো কোনোটাই সুখকর কিছু নয়। শুধুই ব্যর্থতার সাতকাহন!

ইন্দোর টেস্টের প্রথম দিনে টসের পর এই একবারই আনন্দ করার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। রোহিতকে আউট করার পর রাহির উল্লাস
ইন্দোর টেস্টের প্রথম দিনে টসের পর এই একবারই আনন্দ করার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। রোহিতকে আউট করার পর রাহির উল্লাস

সকালে খেলা শুরু হতেই যেন ছটফট করছিলেন ইমরুল কায়েস। মনে হচ্ছিল উমেশ যাদবকে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে কখন ফিরবেন সাজঘরে, সেই তাড়া! উমেশের লাফিয়ে উঠা বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ইমরুল। তার ব্যাটে ১৮ বলে ৬। দলের ১ উইকেটে ১২। তারপর এই উইকেট পতনের এই মিছিল থেকে বের হতে পারেনি দল। চটজলদি ফিরে যান আরেক ওপেনার সাদমান ইসলাম। তিনি আরেক পেসার ইশান্ত শর্মার শিকার। জায়গায় দাঁড়িয়ে নবিসের মতো ড্রাইভ খেললে আর যাই হোক রেহাই মিলে না। বল সাদমানের ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় উইকেটকিপার ঋদ্ধিমান সাহার গ্লাভসে। তিনিও করেন ৬।

ক্যাচ ভাসিয়েও প্রাণে বেঁচে যান মুমিনুল। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে কাট করতে গিয়ে টাইমিং মিস। বল তার ব্যাট ছুঁইয়ে চলে যায় স্লিপে। কিন্তু আজিঙ্কা রাহানে হাতে জমাতে পারেননি বল। ৩ রানে জীবন পেয়ে মনে হচ্ছিল বড় একটা ইনিংস খেলে ফেলবেন মুমিনুল। মোহাম্মদ শামির বলে মোহাম্মদ মিঠুন (১৩) ফিরে গেলেও অধিনায়ক লড়ে যাচ্ছিলেন। প্রাণ পেয়ে ছিলেন জাতীয় দলের আরেক অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমও। উমেশ যাদবের বলে স্লিপে ক্যাচ ভাসিয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু বিরাট কোহলি হাতে বল জমাতে পারেননি। তখন মুশির রান মাত্র ৩।

কিন্তু কী আশ্চর্য, জীবন পেয়েও মুমিনুল কিংবা মুশফিক কেউই কাজে লাগাতে পারলেন না! ব্যর্থ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর মেহেদী হাসান মিরাজও! মুশফিক আরও একবার প্রাণ পেয়ে ছিলেন। লাঞ্চের পর রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে ক্যাচ তুলে দেন স্লিপে। এবার আজিঙ্কা রাহানে মিস করায় রক্ষা। হাফসেঞ্চুরির পথে থাকা মুমিনুলকে ফেরান রবিচন্দ্রন অশ্বিন। মুমিনুল হকের উইকেট ভেঙে দেন তিনি। বল টার্ন করবে ভেবে ছেড়ে দিতে গিয়ে সর্বনাশ। বল টার্ন করে ভেঙে দেয় অফ স্টাম্প। অধিনায়ক ফেরেন ৮০ বলে ৩৭ রানে। তার আগে মুশফিকের সঙ্গে গড়েন চতুর্থ উইকেটে ৬৮ রানের জুটি।

ম্যাচে ক্যাচ মিসের মহড়া দিয়েছে ভারতীয় ফিল্ডাররা। যার পথ ধরে মুশফিকের পর মাহমুদউল্লাহও জীবন পেয়ে ছিলেন। কিন্তু কোনো সুযোগই কাজে লাগেনি। বাজে শট খেলে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ। দলকে ভয়াবহ চাপে ঠেলে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। অশ্বিনের ডেলিভারিতে মাহমুদউল্লাহ স্টাম্পের বাইরে গিয়ে সুইপ করতে গিয়ে ভুল করে বসেন। বোল্ড! ১০ রানে সাজঘরে ফেরেন তিনি।

তারপর মুশফিকুর রহিমও পথ ধরেন প্যাভিলিয়নের। মোহাম্মদ শামির শিকার তিনি। ১০৫ বলে ৪৩ রান করে বোল্ড এই তারকা ক্রিকেটার। তারপর ক্রিজে নেই বোল্ড মেহেদী হাসান মিরাজ। গোল্ডেন ডাক! শামির বলে ডিফেন্স করতে গিয়ে মিস করলেন। রিভিউ না নিয়েই সাজঘরের পথ ধরেন তিনি। যদিও টেলিভিশন রিপ্লে বলছিল বল লেগ স্টাম্প মিস করতো!

চা বিরতির পর প্রথম বলেই উইকেট নেন ইশান্ত শর্মা। লিটন দাসকে ফুল লেংথ বলে বোকা বানিয়ে টাইগারদের আরও কোণঠাসা করে ফেলেন এই পেসার। ৩৪ বলে ২১ রান করে ফেরেন লিটন। তারপরের দুই ব্যাটসম্যান তাইজুল ইসলাম ও এবাদতও সিনিয়রদের অনুসরণ করে গেলেন! শামি তুলে নেন ৩ উইকেট। দুটি করে শিকার উমেশ যাদব, অশ্বিন ও ইশান্ত শর্মার।

ইন্দোরের এই ম্যাচ দিয়েই বাংলাদেশের পথ চলা শুরু হলো আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ মানে টেস্ট খেলুড়ে ১০ দেশের মধ্যে (আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড এই লড়াইয়ে নেই) সেরা হওয়ার লড়াই। দু’বছর ধরে চলবে এ প্রতিযোগিতা। এই লড়াইয়ে পয়েন্টের শীর্ষে থাকা দলের হাতেই উঠবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ৫৮.৩ ওভারে ১৫০/১০ (সাদমান ৬, ইমরুল ৬, মুমিনুল ৩৭, মিঠুন ১৩, মুশফিক ৪৩, মাহমুদউল্লাহ ১০, লিটন ২১, মিরাজ ০, তাইজুল ১, আবু জায়েদ , ইবাদত; ইশান্ত ২/২০, উমেশ ২/৪৭, শামি ৩/২৭ ও অশ্বিন ২/৪৩)।
ভারত: ২৬ ওভারে ৮৬/১ (মায়াঙ্ক ৩৭, পূজারা ৪৩, রোহিত ৬; আবু জায়েদ ১/২১।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!