ইন্ডিয়ান অয়েল ও বেক্সিমকো বাংলাদেশে যৌথভাবে করবে এলপিজি বাণিজ্য

ভারতের বৃহত্তম রিফাইনার এবং পেট্রোলিয়াম পণ্য বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন ও বাংলাদেশের বেক্সিমকো এলপিজির মধ্যে যৌথ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠান যৌথ মালিকানায় বাংলাদেশে এলপিজি ব্যবসার জন্য এ যৌথ চুক্তি স্বাক্ষর করে। সোমবার (৩০ জুন) অনলাইন কনফারেন্সের মাধ্যমে এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

ভারত সরকারের পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস ও ইস্পাত বিষয়ক মন্ত্রী শ্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের সভাপতিত্বে
এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সঞ্জীব সিং ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার শ্রীমতী রীভা গাঙ্গুলি দাশ।

এ সময় তিনি বলেন, ‘ইন্দো-বাংলাদেশ সহযোগিতার ইতিহাসে আজকের আর একটি বড় উপলক্ষ হল দুবাইভিত্তিক ইন্ডিয়ান অয়েলের একটি সংস্থা সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি হোল্ডিং সংস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় এলপিজি সংস্থার সাথে বাংলাদেশে এলপিজি ব্যবসার জন্য যোগ দিচ্ছে। এলপিজির ব্যাপক ব্যবহারে ভারতের সাফল্যের মতোই এই নতুন যৌথ উদ্যোগ বাংলাদেশে সাশ্রয়ী মূল্যের এলপিজির ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনে সহায়ক হবে।’

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ সম্ভাবনা সৃষ্টির প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে এই যৌথ সংস্থা। যখন গোটা বিশ্ব করোনা মহামারী মারাত্মক অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে, এমন সময়ে এই বিনিয়োগ বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যকার স্থিতিশীল এবং স্থায়ী বন্ধুত্বের প্রতিফলন ঘটায়।’

এ সময় বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার ভিশন ২০৪১ অনুসারে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের উন্নত দেশের স্বীকৃতি পেতে জ্বালানি চাহিদা পূরণে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছে। বেক্সিমকো এলপিজি এবং ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের এই যৌথ উদ্যোগ আমাদের লক্ষ্য এবং অগ্রাধিকারগুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে কয়েক বছর ধরে এলপিজি খাত উল্লেখযোগ্যভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে এবং আগামীতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে। এজন্যে দুইটি অভিজ্ঞ ও গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার মধ্যে এ ধরনের অংশীদারিত্ব এবং বিনিয়োগ এই শিল্পে সত্যিকারের পরিবর্তন নিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।’

ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সঞ্জীব সিং বলেন, ‘যে ইন্ডিয়ান অয়েল ১৯৯৯ সালে লুব্রিক্যান্ট বিপণন দিয়ে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করেছিল এবং আজ বাংলাদেশের একটি শক্তিশালী অংশীদারের সাথে হাত মেলাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশের এলপিজি বাজার গত পাঁচ বছরে পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রত্যাশা করা হচ্ছে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১২ থেকে ১৩ শতাংশ বাড়বে। নতুন যৌথ সংস্থা (জেভিসি) ইন্ডিয়ান অয়েলের মূল দক্ষতা এবং বেক্সিমকোর স্থানীয় দক্ষতা থেকে শক্তি অর্জন করবে। ব্যবসায়িক পরিকল্পনা অনুসারে, সংস্থাটি বেক্সিমকোর বিদ্যমান এলপিজি সম্পদ গ্রহণের মাধ্যমে কাজ শুরু করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ইচ্ছা বাংলাদেশের গভীর নৌবন্দরে একটি বড় এলপিজি টার্মিনাল স্থাপন করা, যা খুব বড় গ্যাস ক্যারিয়ারের মাধ্যমে এলপিজি আনতে সহায়ক হবে। এতে করে আমদানি ব্যয় হ্রাস হবে। আমদানি ব্যয় হ্রাস বাংলাদেশের জনগণকে সাশ্রয়ী মূল্যে এলপিজি সরবরাহ করতে সহায়তা করবে।’

তিনি বলেন, ‘এই যৌথ সংস্থার লক্ষ্য সবচেয়ে নিরাপদ, সহজতর এবং আধুনিক এলপিজিসুবিধা সম্বলিত গ্রাহক পরিষেবার মাধ্যমে বাংলাদেশের সর্বাধিক বিশ্বস্ত, প্রশংসিত এবং প্রধানতম এলপিজি সংস্থা হয়ে ওঠা। যৌথ সংস্থা অন্যান্য আমদানিকৃত তেল ও গ্যাস ব্যবসাগুলি- লুব ব্লেন্ডিং প্ল্যান্ট, এলএনজি, পেট্রোকেমিক্যালস, পাইপলাইনের মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব ভারতে এলপিজি রপ্তানি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ইত্যাদিতেও বৈচিত্র্য আনতে চায়।’

উল্লেখ্য, ভারতের বৃহত্তম রিফাইনার এবং পেট্রোলিয়াম পণ্য বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন। এই প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন দুবাইভিত্তিক সহায়ক সংস্থা হিসেবে রয়েছে আইওসি মিডল ইস্ট এফজেডই।

এছাড়া বাংলাদেশের বেক্সিমকো এলপিজির নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কাজ করছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রস আল খাইমাহভিত্তিক আরএআর হোল্ডিংস লিমিটেড।

মূলত আইওসি মিডল ইস্ট এফজেডই এবং আরএআর হোল্ডিংস লিমিটেড যৌথ মালিকানায় বাংলাদেশে এলপিজি ব্যবসার পরিচালনার জন্য এ চুক্তি স্বাক্ষর করে।

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!