ভিডিও/ ইনকিউবেটরে নবজাতক, সুযোগ পেলেই পালাচ্ছেন ‘পাগলি’ মা

বাবার পরিচয় ছাড়াই পৃথিবীর আলো দেখেছিল শিশুটি। জন্মের পরে মায়ের কোলেও ঠাঁই হল না নবজাতকের। জন্মের দুই দিনের মাথায় সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুটিকে ছেড়ে হাসপাতাল থেকে পালালেন মানসিক ভারসাম্যহীন মা আয়েশা। দেড় ঘন্টা খোঁজাখুঁজির পর হাসপাতালের বাইরের পাওয়া গেল তাকে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের ভেতরেই এখন এই ছোট্ট নবজাতকের পুরো দুনিয়া। হাসপাতালে থাকা সদ্য সন্তানহারা এক মায়ের বুকের দুধ খেয়ে আপাতত দিন কাটছে এই নবজাতকের।

এদিকে এখনও পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ায় ৩২ নং ওয়ার্ডের ইনকিউবেটরে চিকিৎসাধীন রয়েছে দুইদিন বয়সী এই নবজাতক। নবজাতকের মা মানসিক ভারসাম্যহীন আয়েশাও মানসিক রোগ বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বিকেলে হঠাৎ সুযোগ বুঝে শয্যা ছেড়ে পালিয়ে যান তিনি। এরপর দেড় ঘন্টা খোঁজাখুঁজির পর হাসপাতালের বাইরে তাকে খুঁজে পান ডবলমুরিং থানার এসআই মোস্তাফিজুর রহমান।

সাহায্যকারী শাহিনুর ঘটনার দিন থেকেই মানসিক ভারসাম্যহীন আয়েশার দেখাশোনা করছেন। তিনি জানান, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে ফিরে এসে দেখেন আয়েশা নেই। খুঁজে না পেয়ে থানায় জানালে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এসআই মোস্তাফিজুর রহমান। প্রায় দেড়ঘন্টা খোঁজাখুঁজির পর আবার খুঁজে পান তাকে।

এসআই মোস্তাফিজুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‌‘খবর পেয়ে দ্রুত হাসপাতালে ছুটে এসে খোঁজ শুরু করি। যেহেতু তিনি (আয়েশা) মানসিক ভারসাম্যহীন৤ তাই সার্বক্ষণিক চোখে চোখে রাখার পরেও নিখোঁজ হওয়াতে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম।’

নবজাতকের অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাচ্চাটি এখনও পুরোপুরি সুস্থ না, তবে আশঙ্কামুক্ত। সুস্থ হলে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

গত ২০ আগস্ট ভোরে মানসিক ভারসাম্যহীন আয়েশা ও তার কন্যা শিশুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন ডবলমুরিং থানার এসআই মোস্তাফিজুর রহমান।

ওইদিন ভোরে প্রসবব্যথার যন্ত্রণা সইতে না পেরে গর্ভ থেকে নিজেই বের করেন সন্তান। সন্তানের মায়া বোঝার বোধশক্তি নেই বলেই ছুঁড়ে ফেলে দেন রাস্তার ওপারে। রক্তমাখা ছেঁড়া কাপড় জড়ানো অবস্থায় পড়ে ছিলেন রাস্তার একপাশে। খানিক পর পর ময়লা কাগজ দিয়ে রক্ত মুছে ছুঁড়ে মারছেন পথের দিকে। ভোর হওয়াতে তেমন মানুষের আনাগোনা ছিল না সেখানে। নাইট ডিউটি ছিল বলে আক্তারুজ্জামান সেন্টার মার্কেটের সামনে টহল দিচ্ছিলেন ডবলমুরিং থানার এসআই মোস্তাফিজুর রহমান।

দেড় ঘন্টা খোঁজাখুঁজির পর হাসপাতালের বাইরে মানসিক ভারসাম্যহীন মাকে খুঁজে পান ডবলমুরিং থানার এসআই মোস্তাফিজুর রহমান।
দেড় ঘন্টা খোঁজাখুঁজির পর হাসপাতালের বাইরে মানসিক ভারসাম্যহীন মাকে খুঁজে পান ডবলমুরিং থানার এসআই মোস্তাফিজুর রহমান।

বাদামতলী ক্রসিং থেকে ২০ গজ উত্তর দিকে সোনালী ব্যাংকের সামনে ফুটপাতের ওপর কয়েকটি কুকুরকে কিছু একটা নিয়ে টানাটানিসহ মারামারি করতে দেখে কৌতূহলবশত এগিয়ে গিয়ে সেখানে সদ্য প্রসূত এক জীবন্ত শিশুকে দেখতে পেয়ে বুকের ভেতরটা নাড়া দিয়ে উঠে।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে এসআই মোস্তাফিজুর বলেন, ‌‘শাহিনুর নামের এক মহিলার সাহায্য নিয়ে পরক্ষণে শিশুটিকে উদ্ধার করে দ্রুত আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাই। শিশুটির মায়ের সন্ধান করি। পরে জনতা ব্যাংকের সামনে মানসিক ভারসাম্যহীন মায়ের সন্ধান পাই। মা ও নবজাতক শিশুটিকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করি৤’

এসআই মোস্তাফিজুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরাও তো মানুষ। চোখের সামনে জীবন্ত একটা শিশু হাত-পা নাড়ছে আর আমি তাকে এই কুকুরদের খাবার হিসেবে ফেলে রাখবো? নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী মনে হতো যদি বাঁচাতে না পারতাম। এখন মা-মেয়ে দুজনেই সুস্থ আছে। তবে তাদের সার্বক্ষণিক দেখার জন্য একজন লোক রাখবো। পুরো সুস্থ হলে তখন ব্যবস্থা নেবো তাদের কোথায় রাখা যায়। আপাতত সুস্থ হয়ে উঠার অপেক্ষা করছি।’

এসআর/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!