ইতিহাসের পাতায় অম্লান অক্ষয় চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সতীর্থ ছিলেন তিনি। লালদিঘীর ময়দানে বাঙ্গালী মুক্তির সনদ ৬ দফা উত্তাপনের আয়োজনটি যে ক’জন মিলে করেছিলেন তিনি তাদের অন্যতম। প্রাদেশিক পরিষদের তৎকালীন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি বাঙালির পক্ষে। বঙ্গবন্ধু তাকে করেছিলেন স্বাধীন বাংলার মন্ত্রীপরিষদের সদস্য। মুজিবনগর সরকার কর্তৃক গঠিত আঞ্চলিক কাউন্সিল পূর্ব-দক্ষিণ অঞ্চল-২ চেয়ারম্যানও করা হয়েছিল তাকে।

শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির সদস্য হিসেবে চট্টগ্রামে ভাষা আন্দোলন জোরদারেও অগ্রণী ভূমিকা ছিল। আবার আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখার পাশাপাশি তিনি ১৯৬২ সালে শিক্ষানীতি বিরোধী আন্দোলনে তিনি ছিলেন নেপথ্যে কারিগর।

বলছিলাম চট্টগ্রামের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, চট্টলশার্দুল খ্যাত জহুর আহমেদ চৌধুরীর কথা। আজ (১ জুলাই) তাঁর ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৪ সালের ১ জুলাই ঢাকায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

রাজনীতিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জহুর আহমদ চৌধুরীর জন্ম ১৯১৬ সালে, চট্টগ্রাম জেলার উত্তর কাট্টলী গ্রামে। তাঁর পিতার নাম আবদুল আজিজ চৌধুরী এবং মাতা জরিনা বেগম। তিনি কাট্টলী নূরুল হক চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় ও পাহাড়তলী রেলওয়ে হাইস্কুলে পড়াশুনা করেন। পরে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন।

১৯৪০ সালে তিনি মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন প্রক্রিয়ায় আরমানিটোলায় অনুষ্ঠিত প্রথম বৈঠকে তিনি চট্টগ্রামের প্রতিনিধিত্ব করেন।

জহুর আহমদ শ্রমিক রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। আমিন জুট মিলস শ্রমিক ইউনিয়ন, বার্মা অয়েল মিল শ্রমিক ইউনিয়ন, সিটি ট্রান্সপোর্ট ড্রাইভার অ্যাসোসিয়েশনের শ্রমিকদের নেতৃত্ব দেন তিনি।

তিনি পাকিস্তান ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সহকারি সম্পাদক ছিলেন। মহান ভাষা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির পক্ষ থেকে ৫ মার্চ শহীদ দিবস পালনের অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানে সরকারের নীতি ও নির্যাতন প্রতিরোধের ঘোষণা দেন।

জহুর আহমদ ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারীর পর আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তিনি ১৯৬২-এর শিক্ষানীতি বিরোধী আন্দোলনে রাজনৈতিক সহায়তা প্রদান করেন। ছয়দফার আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এবং গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন।

তিনি উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানকালে চট্টগ্রামের রাজনীতিকে সংগঠিত করেন। ১৯৬৯ সালের ২০ মার্চ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ নেন তিনি। জহুর আহমদ চৌধুরী ১৯৭০ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৭১ সালের মার্চের অসহযোগ আন্দোলনে জহুর আহমদ চৌধুরী চট্টগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি চট্টগ্রামে সংগ্রাম কমিটির সদস্য ছিলেন। পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে চট্টগ্রাম শহরের পতন ঘটলে তিনি চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ভারতের আগরতলা ফিরে যান। সেখানে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী শচীন সিংহের বাসভবনে বাংলাদেশের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের বৈঠকে তিনি উপস্থিত ছিলেন।

জহুর আহমদ চৌধুরী স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রিসভায় শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। শ্রমমন্ত্রী হিসেবে তিনি জেনেভায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সম্মেলনে (আই এল ও কনভেনশন) বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।

তিনি ১৯৭৩ সালের সংসদ নির্বাচনে কোতোয়ালী-পাঁচলাইশ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নিযুক্ত হন। জহুর আহমদ চৌধুরী আমৃত্যু আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!