ইউপি নির্বাচনে আগ্রহ নেই মিরসরাই বিএনপির

 

মিরসরাই প্রতিনিধি :

ব্যাপক ভরাডুবির পর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আগ্রহ হারাচ্ছে বিএনপি। সম্প্রতি দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত মিরসরাই ও বারইয়ারহাট পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে এবং ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও মেম্বার পদে একটি আসনও পায়নি বিএনপি। তবে তাদের অভিযোগ ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। এ ইস্যুতে ভাটার টান আরো তীব্র হয়ে উঠেছে।

 

 

আগামী ৪জুন করেরহাট, মিঠানালা, মঘাদিয়া, খৈয়াছরা, মায়ানী, হাইতকান্দি  ও ওয়াহেদপুর  ইউনিয়নে 17000নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তৃণমুলের কাউন্সিলের মাধ্যমে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও মেম্বার পদেও দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বিগত নির্বাচনগুলোতে বিএনপির প্রার্থী না থাকায় আওয়ামীলীগ সমর্থিত অনেক মেম্বার প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বদ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

 

 

ফাঁকা মাঠে এবার পাল্লা আরো ভারী হতে পারে। মিঠানালা ইউনিয়নে ধাণের শীষ প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন চৌধুরী মানিক এবং করেরহাট ইউনিয়নে কামাল উদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার পর আপিল করেননি। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নৌকার প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন।

 
এবারের নির্বাচনে ধাণের শীষ প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী মনোনয়নে বিএনপির ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। বিগত সময়ে হেভিওয়েটদের বাদ দিয়ে নামমাত্র প্রার্থী দিয়েছেন। অনেক প্রার্থীকে এলাকার জনগনও চিনেন না। শুধুমাত্র ধাণের শীষ প্রতীক টিকিয়ে রাখতে নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী দিচ্ছে বিএনপি। বিগত নির্বাচনে দেখা গেছে ধাণের শীষ প্রতীক পাওয়ার পর বেশকিছু প্রার্থী গোপনে তাদের নির্বাচনী কার্যক্রম পুরোপুরি গুটিয়ে নিয়েছিল। তবে কৌশলগত কারণে দুই দফায় নির্বাচনে ভরাডুবির পরও দলীয় হাইকমান্ড নির্বাচনে থাকার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে।

 
৭টি ইউনিয়নে ধাণের শীষ প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। তারা হলেন – করেরহাট ইউনিয়নে কামাল উদ্দিন, মিঠানালা ইউনিয়নে এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন চৌধুরী মানিক, মঘাদিয়া ইউনিয়নে কামরুল আলম, খৈয়াছরা ইউনিয়নে গিয়াস উদ্দিন, মায়ানী ইউনিয়নে নুর হোসেন, হাইতকান্দি ইউনিয়নে আবু তাহের মাসুদ এবং ওয়াহেদপুর ইউনিয়নে সালাউদ্দিন সেলিম।

 
অন্যদিকে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা হলেন – ম ১নং করেরহাট ইউনিয়নে এনায়েত হোসেন নয়ন, ১০নং মিঠানালা ইউনিয়নে আলহাজ্জ্ব মোঃ খায়রুল আলম  , ১১নং মঘাদিয়া ইউনিয়নে জাহাঙ্গীর হোসাইন মাষ্টার, ১২নং খৈয়াছরা ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান জাহেদ ইকবাল চৌধুরী, ১৩নং মায়ানী ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান কবির নিজামী, ১৪নং হাইতকান্দি ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, ১৫নং ওয়াহেদপুর ইউনিয়নে ফজলুল কবির ফিরোজ।

 
যদিও বিএনপির মাঠপর্যায়ের সক্রিয় নেতাদের অনেকেই তৃণমূলে নির্বাচনে আগ্রহ হারানোর কথা নিঃসংকোচে স্বীকার করেছেন। তাদের ভাষ্য, শুধুমাত্র রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার টার্গেট নিয়ে কেউ কেউ মনোনয়ন যুদ্ধে নেমেছেন। কেননা দল থেকে মনোনয়ন পেলে স্থানীয় নেতাকর্মী-সমর্থকদের কাছে যেমন মর্যদা বাড়বে তেমনি কেন্দ্রেও পরিচিতির ক্ষেত্র তৈরি হবে। তাই সবকিছু জেনে বুঝে তারা মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে মরিয়া থাকলেও পরবর্তীতে নির্বাচনী মাঠ থেকে নীরব প্রস্থানের পথ খুঁজছেন।

 
মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহবায়ক নুরুল আমিন জানান, বিএনপি নেতাকর্মীদের ইউপি নির্বাচনের মাঠেই নামতে দেয়া হয়নি। হামলা-মামলা, মারপিট-হুমকিতে নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষও আতঙ্কগ্রস্ত। তৃণমূলের এই নির্বাচন সবসময় উৎসবমুখর পরিবেশে হলেও এবার তার লেশমাত্র নেই। ফলে শুধু বিএনপি নেতাকর্মীই নয়, সাধারণ মানুষও এ নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ হারাচ্ছেন।

 
এদিকে ইউপি নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থীদের পিছুটানে রাজনীতিতে নতুন সঙ্কট তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের ভাষ্য, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বদ্বী হিসেবে মূলত বিএনপিই ভোটের মাঠে রয়েছে। কোনো কারণে তারা সরে গেলে ভোটাররাও ভোটকেন্দ্র বিমুখ হয়ে উঠবে। আর এ পরিবেশের নির্বাচনে বিজিত প্রার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। যা আওয়ামী লীগের জন্য বুমেরাং হয়ে দাঁড়াবে।

রিপোর্ট :: ইলিয়াছ রিপন, মিরসরাই, চট্টগ্রাম

 

এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!