ইংল্যান্ডকে সেমিফাইনালের পথে রাখলো ভারত

ইংল্যান্ডকে সেমিফাইনালের স্বপ্ন আবারও জাগিয়ে দিলো ভারত। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম হারে ইংল্যান্ডের জয়ের প্রচেষ্টার সাথে ভারতের জিততে না চাওয়ার চেষ্টাও কম ছিল না। আসলে শেষের অংক মেলাতে পারলো না ভারত। আরেকটু নির্দিষ্ট করে বললে-পারলেন না ধোনি! ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এজবাস্টনে এই ম্যাচ জেতার জন্য শেষের দিকে টি-টুয়েন্টি স্টাইলের ব্যাটিংয়ের প্রয়োজন ছিলো ভারতের। জিততে চাই শেষ ২৪ বলে ৬২ রান।

কঠিন সেই টার্গেট পার করতে পারলো না ভারত। পারলেন না ধোনি। আটকে গেলো ভারতের ইনিংস ৫ উইকেটে ৩০৬ রানে। ইংল্যান্ড ৩১ রানে ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখলো বেশ সতেজ ভাবেই। আর ইংল্যান্ডের এই জয়ে এশিয়ার বাকি তিনদেশ বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সেমিফাইনাল স্বপ্ন আরেকটু ধুসর হয়ে গেলো! ইংল্যান্ডের জয়ে নীরব এজবাস্টন স্টেডিয়ামের হাহাকারের নিঃশ্বাস সেই সত্যই জানান দিলো!

টার্গেট যতোই কঠিন হোক না কেন-অন্তত জেতার চেষ্টা তো চালাতে হবে। কিন্তু এই ম্যাচে হারদিক পান্ডিয়ার আউটের পর শেষের কয়েক ওভারে মহেন্দ্র সিং ধোনি ও কেদার যাদবের ব্যাটিংয়ে সেই জয়ের তাড়নাই যে অনুপস্থিত! মনে হচ্ছিলো ভারত এই ম্যাচে জেতার চেয়ে রান রেট ঠিক রাখতেই বেশি মনোযোগী!

শেষের পাঁচ ওভারে এই ম্যাচে ভারতের ব্যাটিং অনেক প্রশ্নের জন্ম রেখে দিলো ঠিকই! হাতে উইকেট জমা আছে কিন্তু এই সময়ে বাউন্ডারি এলো মাত্র তিনটি ! ছক্কা একটি, তাও শেষ শুধু শেষ ওভারে!

কেন? জেতার তাড়াই যে দেখালো না ভারত শেষে এসে!

ইংল্যান্ডকে সেমিফাইনালের পথে রাখলো ভারত 1
ভারত জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রানের পেছনে না ছুটে রানরেটের পেছনে ছুটায় ইংল্যান্ডের সেমিফাইনালের আশা আবারও জেগে ওঠেছে।

প্রথম ১০ ওভারে ভারতের স্কোরবোর্ডে রান জমা মাত্র ২৮ রান! অথচ জয়ের জন্য টার্গেট ৩৩৮। এতো বিশাল স্কোর তাড়া করতে নেমে শুরুর পাওয়ার প্লে’তে এমন ধীরগতির ব্যাটিং! কিন্তু রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির পরের পাওয়ার প্লে’র ব্যাটিং ভারতকে এমন জায়গায় এনে দাড় করিয়ে দেয়- যেখান থেকে তখন ৩৩৮ রানের লক্ষ্যকে খুব অসম্ভব কোনোকিছু মনে হচ্ছিলো না!

ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই দলীয় ৮ রানে ওপেনার লোকেস রাহুলকে হারায় ভারত। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি গড়লেন ‘বিরাট’ রানের জুটি; ১৩৮ রানের! বিরাট ৬৬ রান করে ফিরলেন। কিন্তু রোহিত শর্মা আরেকবার ঠিকই জানান দিলেন কেন তাকে বিশ্বসেরা ওপেনার বলা হয়। সেঞ্চুরি তুলে নিলেন মাত্র ১০৬ বলে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি তার ২৫ নম্বর সেঞ্চুরি। আর চলতি বিশ্বকাপে তৃতীয়। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১২২ রান দিয়ে এবারের বিশ্বকাপ শুরু করেছিলেন। মাঝে পাকিস্তানের বিপক্ষে করলেন ১৪০ রান। এজবাস্টনে এই ম্যাচে খেললেন ১০২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস।

ইংল্যান্ডকে সেমিফাইনালের পথে রাখলো ভারত 2
চলতি বিশ্বকাপে তৃতীয় সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন রোহিত শর্মা।

চার নম্বরে ব্যাট করতে নামা রিসাভ পান্থের বিশ্বকাপ অভিষেকও মন্দ হলো না। ২৯ বলে ঝপপট ৩২ রান তুলে ফিরলেন তিনি। ম্যাচ জেতানোর জন্য শেষের দায়িত্বটা গিয়ে পড়লো হারদিক পান্ডিয়া ও মহেন্দ্র সিং ধোনির ওপর। শেষ ১০ ওভারে ভারতের প্রয়োজন দাড়ায় ১০৪ রানের। পান্ডিয়া উইকেটে সেট। ধোনি মাত্র উইকেটে নামেন। পুরোদুস্তর টি-টুয়েন্টির আমেজ তখন এজবাস্টনে। বলাই যায় মঞ্চ তৈরি ধোনির জন্য। কিন্তু প্রতিদিন তো আর অভিনেতা মঞ্চ কাঁপাতে পারেন না!

পান্ডিয়া- ধোনি- কেদার যাদব এই ম্যাচে শেষের দিকের সেই ‘ব্যর্থ অভিনেতা’!

এর আগে জনি বেয়ারেস্টর দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে ভর করে ৭ উইকেটে ৩৩৭ রানের পাহাড় দাঁড় করায় ইংল্যান্ড। ইংলিশ দুই ওপেনার মিলেই যেভাবে ব্যাট করে যাচ্ছিল, তাতে মনে হচ্ছিল রান নিশ্চিত ৩৫০ পেরিয়ে যাবে। মাত্র ১৫.৩ ওভারেই (৯৩ বল) দলীয় ১০০ রান পূরণ করেন বেয়ারেস্ট এবং জেসন রয়। এই দুই ওপেনারের ব্যাটে যেন টর্নেডো বয়ে যাচ্ছিল ভারতীয় বোলারদের ওপর। মাত্র ২২ ওভারেই ১৬০ রানের জুটি গড়ে ফেলেন দুই ইংলিশ ওপেনার জেসন রয় এবং জনি বেয়ারেস্ট। একের পর এক বোলার ব্যবহার করেও এই জুটি ভাঙতে পারছিলেন না ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি।

২৩তম ওভারের প্রথম বলে গিয়ে শেষ পর্যন্ত জুটি ভাঙতে পারলেন কুলদিপ যাদব। তবে এ ক্ষেত্রে বোলার কুলদিপের চেয়ে ফিল্ডার রবীন্দ্র জাদেজার কৃতিত্বই সবচেয়ে বেশি। দুর্দান্ত এক ডাইভ দিয়ে ক্যাচটি তালুবন্দী করে নেন জাদেজা। ৫৭ বলে ৬৬ রান করে ফিরে যান জেসন রয়। ৭টি বাউন্ডারির সঙ্গে ২টি ছক্কার মার মারেন তিনি।

রয় আউট হয়ে গেলেও অন্য প্রান্তে ঠিকই নিজের তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছেন অপর ওপেনার জনি বেয়ারেস্ট। ভারতীয় বোলারদের চারদিকে পিটিয়ে ৯০ বলেই পূরণ করে ফেলেন নিজের ক্যারিয়ারের ৮ম সেঞ্চুরি। ৮ বাউন্ডারি এবং ৪ ছক্কায় তিনি সেঞ্চুরির মাইলফলকে পৌঁছান। তবে সেঞ্চুরি করার পর খুব বেশিদুর এগুতে পারলেন না। নিজের ১১১ রানের মাথায় মোহাম্মদ শামির বলে রিশাভ পান্তের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান বেয়ারেস্ট। ১০৯ বলে খেলা ইনিংসটি সাজানো ছিল তার ১০ বাউন্ডারি এবং ৬ ছক্কায়।

ইংল্যান্ডকে সেমিফাইনালের পথে রাখলো ভারত 3
বিশ্বকাপে নিজের প্রথম শতকের দেখা পেলেন ইংলিশ ওপেনার জনি বেয়ারেস্ট

অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যান তো দাঁড়াতেই পারেননি। ৯ বল খেলে মাত্র ১ রান করে আউট হয়ে যান তিনি। মোহাম্মদ শামির বলে কেদার যাদবের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। এরপরই জো রুট আর বেন স্টোকস মিলে জুটি গড়েন ৭০ রানের। ৫৪ বলে জো রুট আউট হওয়ার আগে করেন ৪৪ রান। মোহাম্মদ শামির বলে হার্দিক পান্ডিয়ার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান জো রুট। এরপর জস বাটলার জুটি বাধেন স্টোকসের সঙ্গে এবং এই জুটিতে রান ওঠে ৩৩ টি। ৮ বলে ২০ রান করে আউট হয়ে যান বাটলার।

শেষ দিকে ক্রিস ওকস ৭ রান করে এবং শেষ পর্যন্ত ৫৪ বলে ৭৯ রান করে আউট হন স্টোকস। তার ইনিংস সাজানো ছিল ৬ বাউন্ডারি এবং ৩ ছক্কায়। ৬৯ রান খরচায় ৫টি উইকেট নেন বিশ্বকাপের একাদশে জায়গা পাওয়ার পর থেকেই আলো ছড়াতে থাকা মোহাম্মদ শামি। ১টি করে উইকেট নেন জসপ্রিত বুমরাহ এবং কুলদিপ যাদব।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩৩৭/৭ (রয় ৬৬, বেয়ারস্টো ১১১, রুট ৪৪, মর্গ্যান ১, স্টোকস ৭৯, বাটলার ২০, ওকস ৭, প্লানকেট ১*, আর্চার ০*; সামি ৫/৬৯, বুমরাহ ১/৪৪, কুলদীপ ১/৭২)
ভারত: ৫০ ওভারে ৩০৬/৫ (রাহুল ০, রোহিত ১০২, কোহলি ৬৬, পান্ত ৩২, পান্ডিয়া ৪৫, ধোনি ৪২*, কেদার ১২*; ওকস ২/৫৮, প্লানকেট ৩/৫৫)
ফল: ইংল্যান্ড ৩১ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা: জনি বেয়ারস্টো

সেমির হিসাব জমিয়ে দিলো ইংল্যান্ড

ইংল্যান্ড অসম্ভব প্রয়োজনীয় এক লড়াই জিতে ভারতকে প্রথম হার উপহার দিয়ে বাংলাদেশ-পাকিস্তান, বিশেষ করে বাংলাদেশের সেমির পথটা কঠিন করে তুলল ইংল্যান্ড। ৮ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট দাঁড়িয়ে গেছে ১০, পাকিস্তানকে নিচে ঠেলে আবারও উঠে গেছে টেবিলের চারে। নিজেদের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারলেই সেমিতে যেতে আর কারও দিকে চেয়ে থাকতে হবে না ইয়ন মরগানদের।
ইংল্যান্ডকে সেমিফাইনালের পথে রাখলো ভারত 4
তবে কিউইদের বিপক্ষে হারলেই সর্বনাশ! ভারত-পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতলে কিংবা ৫ জুলাই বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তান জিতলেই আর শেষ চারে যাওয়া হবে না স্বাগতিকদের। ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে থাকতে হবে দর্শক হয়ে। অন্যদিকে চলতি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম হারে অস্বস্তিতে পড়ে গেছে ভারতও। স্বস্তিতে শেষ চারে যেতে হলে অন্তত একটি হলেও জয় প্রয়োজন কোহলিদের। কাঙ্ক্ষিত সেই জয়ের জন্য শেষ দুই প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাকে মোটেও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই তাদের!

সেখানে কঠিনই হয়ে গেল বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের সেমির হিসাব। ইংল্যান্ড ম্যাচ হাতে রেখে নিউজিল্যান্ডের পয়েন্ট ১১। তারা যদি শেষ ম্যাচে স্বাগতিকদের কাছে হেরেও যায়, শঙ্কার পিঠে কিছুটা সুবিধাজনক স্থানেও থাকবে। কেননা বাংলাদেশ নিজেদের দুম্যাচ জিতলে পয়েন্ট হবে ১১, আবার পাকিস্তান নিজেদের শেষ ম্যাচ জিতলেও পয়েন্ট হবে ১১। তখন ১১ পয়েন্টে থাকা নিউজিল্যান্ড ইংলিশদের বিপক্ষে হারলেও রানরেটের হিসাবে বাংলাদেশ বা পাকিস্তানকে পেছনে ফেলতে পারে সমান পয়েন্ট নিয়েও। কারণ উইলিয়ামসনের দলের রানরেট বেশ ভালো অবস্থায় আছে!

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!