আ জ ম নাছিরের নেতৃত্বে ৫ নতুন মুখ, নির্বাচনবঞ্চনায় কাউন্সিলররা হতাশ

সিজেকেএসে সমঝোতার কমিটি

ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা (সিজেকেএস) নির্বাচনকে ঘিরে যে আবহ তৈরি হয়েছিল তার অনেকটাই মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সিটি কর্পোরেশন অফিসে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর নিভে যেতে শুরু করে।

তবুও বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন অতি আশান্বিত কাউন্সিলর ও ক্রীড়া সংগঠকরা অপেক্ষায় ছিলেন সিটি মেয়র ও সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক প্যানেল জমা দিলেও বাকিরা হয়তো নিজেদের মনোনয়ন জমা দিয়ে নির্বাচনে লড়বেন। কিন্তু আ জ ম নাছিরের বিপক্ষে নির্বাচনে লড়ে হয়তো নির্বাসনে যাওয়ার ভয়ে আর কেউ ফরমই জমা দেননি।

সিটি মেয়র যে ২৬ জনকে বিভিন্ন পদে বাছাই করে দিয়েছেন, তারাই মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। তবে নির্বাহী সদস্য এবং কোষাধ্যক্ষ পদে মেয়রের পছন্দের বাইরে দুজন মনোনয়ন জমা দেওয়ায় এখনো শতভাগ সমঝোতামূলক কমিটি বলা যাচ্ছে না। তবে সেই দুজনও তাদের প্রার্থিতা ধরে রাখবে কিনা সে ব্যাপারে প্রশ্ন রয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) মনোনয়নপত্র বাছাই করে ৮ ডিসেম্বর প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর দিন মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময় রয়েছে। এদিনই বোঝা যাবে, ওই দুই পদে নির্বাচন হচ্ছে কি না। তবে স্টেডিয়ামপাড়ার সবাই জানেন, সিটি মেয়রের নেতৃত্বে সবাই যেখানে এক হয়েছে, সেখানে স্রোতের বিপক্ষে গিয়ে লাভ তো হবেই না বরং হিতে বিপরীত হতে পারে।

তবে কেন বারবার বলার পরও নিজের কথায় অটল থাকতে পারেননি সেটি সাধারণ সম্পাদক পদে নিজের মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার সময় সাংবাদিকদের জানালেন আ জ ম নাছির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‌’আমি এবার নির্বাচন সবার জন্য ওপেন করে দিয়েছিলাম। আগের দিন (মঙ্গলবার) রাত ১২টা পর্যন্ত আলোচনা করেও সবাইকে নির্বাচনে আনার জন্য রাজি করাতে পারিনি। প্রায় সবাই আমাকে অনেকটা বাধ্যই করেছেন সমঝোতার পথে এগোতে। আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, ইলেকশনের চাইতে সিলেকশন অনেক কঠিন। সে কঠিন কাজটা করার জন্য আমাকে কত ভাবতে হয়েছে তা নিশ্চয় বলার অপেক্ষা রাখে না। যারা ইসিতে জায়গা পাননি, সাব কমিটিগুলোতে তাদের কথা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভাবা হবে। আমি সবার সহযোগিতা চাই।’

ফলে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) টানা তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেলেন আ জ ম নাছির উদ্দিন। এর আগে তিনি সিজেকেএসের সহসভাপতি ছিলেন। ২০১১ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রথমবার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সবচেয়ে কার্যকরী পদ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন তিনি। এরপর ২০১৫ সালে প্রথমে নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেও শেষমেষ সমঝোতার কমিটি করে দ্বিতীয় দফায় দায়িত্বভার গ্রহণ করেন আ জ ম নাছির। এবারও কাউন্সিলরদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে সমঝোতার কমিটি করে টানা তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক পদ নিজের করায়ত্তে রাখলেন তিনি।

বুধবার (৪ ডিসেম্বর) মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ার শেষ দিনে মেয়রের নেতৃত্বে ২৬ জন নমিনেশন ফরম দাখিল করেন। তবে সবগুলো পদে মনোনীত ব্যক্তিরাই নমিনেশন দাখিল করলেও সমস্যা দেখা দিয়েছে কোষাধ্যক্ষ ও নির্বাহী সদস্যের পদ নিয়ে। ফলে উল্লেখিত পদগুলোর দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিষয়টি সুরাহা না হলে শেষ পর্যন্ত কোষাধ্যক্ষ ও সদস্য পদে নির্বাচন ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। যে ২৬ জনের নমিনেশন ফরম নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হয়েছে তাতে প্রথমবারের মত সিজেকএস কার্যনির্বাহী কমিটিতে স্থান পেয়েছেন পাঁচজন। তারা হলেন মোহাম্মদ শাহজাহান, হাসান মুরাদ বিপ্লব, মো. জমির উদ্দিন বুলু, মো. আব্দুল বাসেত ও নাসির মিঞা। এর মধ্যে সহসভাপতি পদে বর্তমান কমিটির অ্যাডভোকেট শাহীন আফতাবুর রেজা চৌধুরী ও মো. হাফিজুর রহমান নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পারলেও পদ হারান মোজাম্মেল হক ও দুইবারের নির্বাচিত সাবেক সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহেদ আজগর চৌধুরী। তাদের জায়গায় নির্বাহী সদস্য থেকে পদোন্নতি পেয়ে দিদারুল আলম চৌধুরী ও রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম এহেছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন।

অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থাকার জন্য এককভাবে ফরম দাখিল করেছেন সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম। যুগ্ম সম্পাদক পদের দুটিতে আমিনুল ইসলাম অক্ষত থাকলেও বাদ পড়েছেন শাহজাদা আলম। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন আগের কমিটির নির্বাহী সদস্য ও তায়কোয়ান্ডো কমিটির চেয়ারম্যান মো. মশিউর রহমান চৌধুরী। কোষাধ্যক্ষ পদের জন্য টানা তিন বারের কোষাধ্যক্ষ শাহাবুদ্দীন মো. জাহাঙ্গীর আবারও ফরম দাখিল করেছেন। তবে তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন নবীন মেলার প্রতিনিধি যুবলীগ নেতা রাশেদুল আলম।

নির্বাহী সদস্য পদের সংখ্যা ১৩। এই পদের জন্য মনোনীত করা হয় আবুল হাশেম, সৈয়দ আবুল বশর, জহির আহমেদ চৌধুরী, একেএম আবদুল হান্নান আকবর, মোহাম্মদ ইউসুফ, আ ন ম ওয়াহিদ দুলাল, গোলাম মহিউদ্দিন হাসান, অহীদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন, মোহাম্মদ শাহজাহান, হাসান মুরাদ বিপ্লব, মো. জমির উদ্দিন বুলু, মো. আব্দুল বাসেত, নাসির মিঞা। কিন্তু এখানে বাধ সেঁধেছেন উল্লাস ক্লাবের প্রতিনিধি, সিজেকেএস রাগবি কমিটির সম্পাদক প্রবীন কুমার ঘোষ। তিনি মনোনয়ন দাখিল করেন প্রথম দিনই। উৎসবমুখর পরিবেশের নির্বাচনকে উপেক্ষা করে সমঝোতার মাধ্যমে মনোনয়ন দেয়ার প্রতিবাদস্বরূপ তিনি মনোনয়ন জমা দেন বলে জানা গেছে।

এছাড়া উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে নির্বাহী সদস্য পদে (সংরক্ষিত) প্রদীপ কুমার ভট্টাচার্য্য ও হারুন আল রশীদ এবং মহিলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে নির্বাহী সদস্য পদে (সংরক্ষিত) রেখা আলম চৌধুরী, রেজিয়া বেগম ছবি মনোনয়ন দাখিল করেছেন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!